Advertisement
E-Paper

বাউলকে রাজা বললেন, রাতভর গান শোনানোই সাজা

হাতি নেই, ঘোড়া নেই, হাতির দাঁতের পালকিও নেই। মোটরভ্যানে বিয়েবাড়ির কনে বসার চেয়ারে বসে রাজা। পরনে যাত্রাদলের থেকে ভাড়া করা ঝলমলে রাজপোশাক, মুকুট আর পেল্লায় গোঁফ। হাতে মাউথপিস। দোলের দিন রাজতন্ত্রে ফিরে গেল কেতুগ্রামের বহড়ান গ্রাম। পাক্কা ন’বছর পরে। বর্ধমানের ওই গ্রামে জয়দুর্গা মেলায় যে সেটাই প্রথা!

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৪
পরিক্রমায় বেরিয়েছেন রাজা। কেতুগ্রামের বহড়ান গ্রামে। অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

পরিক্রমায় বেরিয়েছেন রাজা। কেতুগ্রামের বহড়ান গ্রামে। অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

হাতি নেই, ঘোড়া নেই, হাতির দাঁতের পালকিও নেই।

মোটরভ্যানে বিয়েবাড়ির কনে বসার চেয়ারে বসে রাজা। পরনে যাত্রাদলের থেকে ভাড়া করা ঝলমলে রাজপোশাক, মুকুট আর পেল্লায় গোঁফ। হাতে মাউথপিস।

দোলের দিন রাজতন্ত্রে ফিরে গেল কেতুগ্রামের বহড়ান গ্রাম। পাক্কা ন’বছর পরে। বর্ধমানের ওই গ্রামে জয়দুর্গা মেলায় যে সেটাই প্রথা!

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ জয়দুর্গা মন্দিরে দেবীপ্রণাম সেরে নগর পরিক্রমায় বেরিয়েছিলেন রাজা। সঙ্গে পারিষদবর্গ। শুরুতেই কোপে পড়ে যান এক মুদি। রাজা আসছেন দেখেও তিনি দোকান ছেড়ে বেরিয়ে দাঁড়াননি। এত সাহস! রাজা তাঁকে তিরিশ টাকা জরিমানা করেন। এক ব্যবসায়ীর নামে চালে কাঁকর মেশানোর নালিশ ছিল। তাঁরও তিরিশ টাকা জরিমানা হয়।

রাজার নাম অম্বিকা চট্টরাজ। সারা বছর তিনি ঘণ্টা নেড়ে পেট চালান। গরিব ব্রাহ্মণ। খড়ের চালের মাটির বাড়িতে দু’কামরার ঘর। স্ত্রী ঝর্না দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। এক মাত্র ছেলে পাপুও সম্বৎসর পুজোআচ্চা করে বেড়ান। ঘর সামলান পুত্রবধূ দীপা। কিন্তু এই দারিদ্র্যই যে রাজা হওয়ার চাবিকাঠি! কেননা মুর্শিদাবাদ লাগোয়া বহড়ানের প্রথাই হল, গ্রামের সবচেয়ে গরিব ব্রাহ্মণকে এক দিনের রাজা করা হবে। সে দিন ফাঁসিতে ঝোলানো আর শূলে চড়ানো বাদে যে নিদান তিনি দেবেন, সবাই বিনা বাক্য ব্যয়ে মানবেন।

মন্দির থেকে কিছু দূর গিয়েই রাজার চোখে পড়ে, কাজে ফাঁকি দিয়ে বিড়ি ফুঁকছেন এক রাজমিস্ত্রি। “কী! কাজকম্ম নেই, আবার ধূম্রপান হচ্ছে! দাও ওকে কুড়ি টাকা জরিমানা করে”, রাজামশাই হাঁকেন। রাস্তার ধার থেকে মাটি কেটে পালানোর নালিশ ছিল কয়েক জনের নামে। জরিমানা ষাট টাকা। পুকুরের মাছ বড় হওয়ার আগেই ধরে বাজারে বিক্রি করছিলেন এক দল জেলে। জরিমানা গুনতে হল নগদ দেড়শো টাকা করে।

গ্রামে বেআইনি ভাবে মদ বিক্রির কথা শুনেই রাজার কুঁচকে গেল ভুরু। “বেনিয়মে চাদ্দিক ভরে গিয়েছে! দু’শো টাকা জরিমানা!” রাজার কাছে (পড়ুন, মেলা কমিটির কাছে) নাম না লিখিয়ে জিলিপি পাঁপড়ের দোকান খুলে বসেছিলেন এক জন। জরিমানা ধার্য হয় পঞ্চাশ টাকা। ইতিমধ্যে পারিষদেরা ধরে আনে এক বাউলকে। রাজার তোয়াক্কা না করে তিনি দিব্যি ঘরে বসে ছিলেন। রাজা ঘোষণা করেন, “পঞ্চাশ টাকা জরিমানা তো দিতেই হবে। তার উপরে সাজা হল, আজ সারা রাত মেলায় তুমি প্রজাদের গান গেয়ে শোনাবে।”

শুধু জরিমানা করেই রাজা ক্ষান্ত নন। মাইকে অহরহ শোনা গেল তাঁর বাণী পথঘাট পরিচ্ছন্ন রাখুন। মাঠে-ঘাটে নয়, নিয়মিত শৌচালয়ে যাবেন। স্বাস্থ্য সচেতনতা দরকার। শিশুদের স্কুলে পাঠানোও জরুরি। নাবালিকার বিয়ে দিলে ঘোর অমঙ্গল।

ইচ্ছেটাই তো আসল রাজা!

soumen dutta ketugram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy