খোয়ার কলাপাতুরি। নলেন গুড়ের রসগোল্লা, রাজভোগ। পেঁপের মোরব্বায় মোড়া চন্দ্রমুখী। মিষ্টি আর নতুন গুড়ের গন্ধে ম-ম করছে দুর্গাপুরের গাঁধী মোড় ময়দান। শুক্রবার থেকে যে সেখানে শুরু হয়ে গেল ‘মিষ্টি উৎসব’।
পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, সিউড়ি, কাটোয়া, নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, বর্ধমান-সহ বহু জায়গা থেকে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা পসরা নিয়ে হাজির। জাঁকিয়ে বসেছে দুর্গাপুরের সাবেক মিষ্টির দোকানগুলিও। কেউ এসেছেন নিজেদের বিশেষ মিষ্টির সম্ভার নিয়ে। কেউ বা নিজের এলাকার সেরা মিষ্টি নিয়ে। কেউ আবার নিজের হাতে তৈরি করে প্রচলিত নানা মিষ্টিই খাওয়াচ্ছেন ক্রেতাদের।
গত বছর ভাবনাটা প্রথম এসেছিল দুর্গাপুরের কাউন্সিলর তথা মেয়র-পত্নী অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মাথায়। তখন থেকেই শুরু মিষ্টি উৎসব। এ বার তার দ্বিতীয় বর্ষ। ময়দানে খড়ের ছাউনি দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্টল। এমনই এক স্টলে নলেন গুড়ের চালের পায়েস, মুগের ডালের পুলি, পাটিসাপটা, ভেজিটেবল সিঙ্গাড়া তৈরি করে হাতে-হাতে তুলে দিচ্ছেন মালা দেববর্মন। পড়াশোনা করেছেন শান্তিনিকেতন থেকে। রবীন্দ্রসঙ্গীত করেন। শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলায় সহপাঠীদের সঙ্গে গান-আড্ডা একসঙ্গে চালাতেন। মালা বলেন, “কর্মব্যস্ত জীবনে অন্য কিছু করার সময় কোথায় মানুষের? তবু আমরা কয়েক জন মিলে একটা চেষ্টা করলাম। মিষ্টিপ্রেমীরা খুশি হলেই আমদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে।” মেলায় ঘুরে দেখা গিয়েছে, দেদার বিকোচ্ছে পেঁপের মোরব্বা দিয়ে খোয়ার মিষ্টি, ড্রাইফ্রুট বরফি, ড্রাইফ্রুট পান, ছানার স্যান্ডউইচ, ক্ষীরপুলি, মিল্ক কেক, অবাক সন্দেশ, কৃষ্ণনগরের সরভাজা, ক্ষীরের গজা, কাজু-বরফি, গাজরের হালুয়া থেকে কাটোয়ার মাখা সন্দেশ।
পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে মেলায় স্টল দিয়েছেন দীনবন্ধু ঘোষ। তিনি বলেন, “আমাদের ক্ষীরের গজার সুনাম আছে। দুর্গাপুরের মানুষকে সেই স্বাদ দিতে এসেছি।” খেজুর গুড়, আলুর চপ, মোচার চপ, বেগুনি নিয়ে এক জন এসেছেন হাঁসখালি থেকে। সিউড়ির স্টলে মিলছে থেকে চপ, পটলের মোরব্বা, জিলিপি। একই সঙ্গে আমলকি, শতমূল, বেলের মোরব্বা এনেছেন হরিকিঙ্কর ঘোষ। দুর্গাপুরের শরৎ রোডের রাজকুমারি দত্ত এসেছেন বিশেষ কিমা ফুচকা, ফ্রুট দই, চিকেন ফুচকা নিয়ে। কাটোয়ার বারোয়ারি তলা থেকে এসেছেন মিষ্টি ব্যবসায়ী সমরেশ কুণ্ডু। তিনি বলেন, “গত বারও এসেছিলাম। আমাদের মাখা সন্দেশ, পান্তুয়া ক্রেতারা খুব পছন্দ করছেন।” এ-জোনের পৃথা শিকদার, পিয়ালি বিশ্বাস, সমর মণ্ডলেরা বলেন, “পছন্দের মিষ্টি একেবারে হাতের মুঠোয় এনে দেওয়ার এমন উদ্যোগের তুলনা নেই। চেটেপুটে স্বাদ নিচ্ছি।” উৎসব চলবে তিন দিন। সন্ধ্যায় থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারি স্টল বাছবেবেন ক্রেতা, দর্শনার্থীরা। উদ্যোক্তাদের তরফে অনিন্দিতাদেবী জানান, ক্রেতা-দর্শনার্থীরাই সব চেয়ে ভাল বলতে পারবেন, কোন স্টল তাঁদের বেশি রসনা পরিতৃপ্তি করতে পেরেছে। তা ছাড়া বিচারে স্বচ্ছতাও বজায় থাকবে। মেলায় ঢোকার মুখে অনুসন্ধান অফিস থেকে কুপন বিলি করা হচ্ছে। সেখানেই থাকছে পছন্দের তালিকা লেখার ব্যবস্থা। কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া সেরে তা পূরণ করে ভরতে হচ্ছে নিদির্ষ্ট কলসিতে। রবিবার, মেলার শেষ দিনে কুপন বের করে ঘোষণা করা হবে, সবচেয়ে বেশি মন কাড়ল কার মিষ্টি।