Advertisement
১৯ মে ২০২৪
বলছে কৃষি দফতর

বৃষ্টি কমায় টান ভূগর্ভের জলে, সঙ্কট

কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী বৃষ্টিপাত ক্রমশ কমছে জেলায়। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাষের জন্য মাটির নীচ থেকে জল তোলা। ফলে জেলার কিছু এলাকায় জলস্তর ইতিমধ্যেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের মত। তাঁদের দাবি, এখনই জল তোলা না আটকানো গেলে আর্সেনিক তো বটেই আরও নানা বিপজ্জনক ধাতু মিলতে পারে। সেক্ষেত্রে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৫
Share: Save:

কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী বৃষ্টিপাত ক্রমশ কমছে জেলায়। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাষের জন্য মাটির নীচ থেকে জল তোলা। ফলে জেলার কিছু এলাকায় জলস্তর ইতিমধ্যেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের মত। তাঁদের দাবি, এখনই জল তোলা না আটকানো গেলে আর্সেনিক তো বটেই আরও নানা বিপজ্জনক ধাতু মিলতে পারে। সেক্ষেত্রে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে।

জেলা কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাতের বৃষ্টিপাতের ঘাটতি রয়েছে গড়ে ২৩০ মিলিমিটার। এই পরিস্থিতিতে চাষের প্রয়োজনে মাটির নীচের জল সতর্ক ভাবে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা জানান, বছরের বিভিন্ন মাস মিলিয়ে ১৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে স্বাভাবিক ধরা হয়। যার মধ্যে জানুয়ারিতে ১৫ মিলিমিটার, ফেব্রুয়ারিতে ৩১, মার্চে ৩১, এপ্রিলে ৪১,,মে ১১১,,জুন ২৫০,,জুলাইয়ে ৩৪৬, অগস্টে ৩৩২, সেপ্টেম্বরে ২১৫, অক্টোবরে ১০২, নভেম্বেরে ২১ এবং ডিসেম্বর ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিকে স্বাভাবিক ধরা হয়। তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ এবং ২০০৮ ছাড়া এই দশ বছরে জেলায় প্রতি বারই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের নীচে ছিল। ২০০৭ সালে বৃষ্টিপাত হয় ১৭৪৯ মিলিমিটার। তার পরেরবার বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল প্রায় ১৫৪৮ মিলিমিটার। তবে এই দশ বছরে নিরিখে সব থেকে কম বৃষ্টিপাত হয় ২০১০ সালে। সেবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৯৪৬ মিলিমিটার। তাহলে বছরে গড়ে ১২৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২৩০ মিলিমিটার।

কৃষি দফতরের দাবি, চাষাবাদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ধান চাষের জন্য জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত ভারি বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। অথচ এই তিন মাসেই বৃষ্টির ঘাটতি গিয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২০০ মিলিমিটার। ফলে ফসল বাঁচাতে মাটির নীচ থেকে দেদার জল তুলছেন চাষিরা। জেলার এক কৃষি বিশষজ্ঞের কথায়, গরমকালে কালনা, কাটোয়া মহকুমার কিছু কিছু এলাকায় জলস্তর নেমে যাচ্ছে ৭০-৭৫ ফুট নীচে। ধান, সব্জি বাঁচাতে চাষিরা গর্ত খুঁড়ে শ্যালো পাম্প নীচে নামিয়ে জল তুলছেন। ফলে নামছে জলস্তর। ওই বিশেষজ্ঞের দাবি, জলস্তর যত নামবে তত আর্সেনিক দূষণের সম্ভাবনা বাড়বে।

বছর খানেক আগে জলস্তর নিয়ে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানীদের একটি দল কালনা মহকুমা জুড়ে সমীক্ষা চালায়। সেখানে বিভিন্ন এলাকার জলস্তর কিভাবে নামছে তা সাধারন মানুষকে জানানো হয়। বিজ্ঞানীদের ওই দলটি জানান, বর্ধমান জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমান এক দিকে যেমন কমছে, তেমনি বোরো ধান চাষের জন্য চাষিরা মাটির তলা থেকে প্রচুর পরিমান জল তুলে নেওয়াই জলস্তর ক্রমশ নামছে। ব্যাপক হারে জলস্তর নেমে যাওয়াই পূর্বস্থলীর কিছু জায়গায় জলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকই নয়, মিলেছে বিপ্পজনক বেশ কিছু ধাতুও। এ পরিস্থিতিতে মাটির নীচের জলের ব্যবহার না কমালে অদূর ভবিষত্যে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেবে বলেও বিশেষজ্ঞদের মত।

কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, জল ছাড়া চাষাবাদ সম্ভব নয়। অথচ বৃষ্টির জল ক্রমশ কমে আসছে। তাঁর পরামর্শ, মাটির তলার জলস্তরের কথা মাথায় রেখে জল কম লাগে, এমন ধান অর্থাত্‌ শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষ করা উচিত। পাশাপাশি স্বল্প সময়ের ধান চাষ, ডাল, বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ করলেও চাষিরা উপকৃত হবেন। তাঁর দাবি, বহু সময় চাষিরা দূরের জমিতে কাঁচা নালার মাধ্যমে শ্যালো পাম্প থেকে জল নিয়ে যায়। দীর্ঘ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রচুর জলও অপচয় হয়। এ ব্যপারেও চাষিদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

underground water rain crisis kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE