Advertisement
E-Paper

বকেয়া না মেটানোয় বন্ধ হল কারখানা

ব্যাঙ্ক ঋণ এবং পাওনাদারদের বকেয়া মেটাতে না পারায় এক বেসরকারি ইস্পাত কারখানার দখল নিল হাইকোর্ট নিযুক্ত লিক্যুইডেটর। দুর্গাপুরের লেনিন সরণি শিল্পতালুকের ওই কারখানায় দখলের নোটিস সাঁটাতে গিয়ে শুক্রবার কারখানার কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন লিক্যুইডেটররা। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বেতন মিলছে না। কারখানা লিক্যুইডেটরের হাতে চলে যাওয়ার পরে তাঁদের অবস্থা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২৭
হতাশ শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র।

হতাশ শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্ক ঋণ এবং পাওনাদারদের বকেয়া মেটাতে না পারায় এক বেসরকারি ইস্পাত কারখানার দখল নিল হাইকোর্ট নিযুক্ত লিক্যুইডেটর। দুর্গাপুরের লেনিন সরণি শিল্পতালুকের ওই কারখানায় দখলের নোটিস সাঁটাতে গিয়ে শুক্রবার কারখানার কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন লিক্যুইডেটররা। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বেতন মিলছে না। কারখানা লিক্যুইডেটরের হাতে চলে যাওয়ার পরে তাঁদের অবস্থা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। কারখানার মালিক সন্তোষ কেডিয়া অবশ্য জানান, কারখানা ফের খোলার জন্য হাইকোর্টে দ্রুত আবেদন জানাবেন।

কাঞ্জিলাল অ্যাভিনিউয়ের ধারে ২০০৫ সালে গড়ে ওঠে ওই কারখানা। জানা গিয়েছে, কলকাতার এক কাঁচামাল সরবরাহকীরা সংস্থা হাইকোর্টে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন বকেয়া না পাওয়ার অভিযোগে ২০১৩ সালের ৩০ জুন মামলা করে। বকেয়া না পেয়ে পাঁচ বছর আগেই তিনি কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া দু’টি ব্যাঙ্কের কাছে কারখানাটির প্রায় ৪৬ কোটি টাকা ঋণ বাকি রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১৯ জুন বিচারপতি নাদিয়া পাথেরিয়া কারখানাটি গুটিয়ে ফেলে লিক্যুইডেটশনে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ এসে পৌঁছন হাইকোর্ট নিযুক্ত লিক্যুইডেটর অসীম নন্দী, সমীর বসু, মহম্মদ সাকিল ও দীনেশকুমার রায়। তাঁরা লিক্যুইডেশনের নোটিস সাঁটিয়ে দেন। অসীমবাবু বলেন, “আদালতের নির্দেশে এই কারখানার সব সম্পত্তি এ দিন দুপুর দেড়টা থেকে লিক্যুইডেটরের অধীনে চলে গেল।”

কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কারখানায় এক সময় শ’পাঁচেক শ্রমিক কাজ করতেন। বছর তিনেক ধরেই উৎপাদন অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। বাজারের হাল ভাল নয়, এই দাবিতে গত বছর দুর্গাপুজোর আগে শ্রমিকদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে উৎপাদন বন্ধের কথা ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। কাজ হারান প্রায় সাড়ে তিনশো ঠিকাশ্রমিক। তার পরেও কারখানায় রয়ে যান শ’খানেক ঠিকাশ্রমিক। বেতন না পাওয়ার অভিযোগে ফেব্রুয়ারিতে দুই আধিকারিক কারখানা পরিদর্শনে এলে তাঁদের তালাবন্ধ করে বিক্ষোভও দেখান ওই শ্রমিকেরা। পরে এক মাসের বকেয়া বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁরা পুলিশের মধ্যস্থতায় ছাড়া পান। তার পর থেকে কর্তৃপক্ষের তরফে কেউ কারখানায় পা মাড়াননি। এ দিকে, প্রায় চার মাস শ্রমিকেরা বেতন পাননি। জমা পড়েনি ইএসআই, পিএফের টাকাও। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার লিক্যুইডেটরদের সামনে পেয়ে ক্ষোভ জানান তাঁরা।

কারখানার শ্রমিক অমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “এমনিতেই আমাদের পরিস্থিতি ছিল শোচনীয়। তবু পুজোর আগে যদি কিছু বকেয়া মেলে, সেই আশায় ছিলাম। এ দিন তা-ও শেষ হয়ে গেল।” কারখানা কর্তৃপক্ষ আদৌ কারখানাটি চালাতে ইচ্ছুক কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শ্রমিকেরা। লাল্টু দাস, প্রসেনজিৎ মহাদানিরা বলেন, “কারখানার পরিস্থিতি ভাল নয় বলে কর্তৃপক্ষের আবেদনে সাড়া দিয়ে অর্ধেক মাইনে নিয়ে মাসের পর মাস কাজ করেছি। মাইনে বকেয়া রয়েছে চার মাসের। এমন পরিণতি হবে ভাবিনি!” সিটু নেতা তথা দুর্গাপুরের প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, ধাপে-ধাপে কারখানার শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়েছে। অথচ, প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁর কথায়, “কারখানা কর্তৃপক্ষ দিনের পর দিন উৎপাদন না করে শুধু খাতায়-কলমে কারখানাটি চালাচ্ছিলেন। পুজোর মুখে এমন খবর খুবই দুর্ভাগ্যের।” আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “পুরো বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নেব। শ্রমিকদের স্বার্থ যাতে সুরক্ষিত থাকে, তা দেখা হবে।”

কারখানার মালিক সন্তোষবাবু জানান, বকেয়া নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কারখানা খোলার অনুমতি দেওয়ার আবেদনও জানানো হবে হাইকোর্টে।

due bank loan factory closed durgapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy