Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বার্নপুরে সমাবেশ সিটুর

বন্ধ কারখানা নিয়ে তোপ নেতার

শিল্পাঞ্চলে বন্ধ পড়ে থাকা নানা রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা নিয়ে রাজ্য সরকার একেবারে উদ্যোগী হয়নি, বার্নপুরে সিটুর সভায় যোগ দিতে এসে এমনই অভিযোগ করলেন সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি এ কে পদ্মনাভন। তাঁর দাবি, রাজ্যে যখন বামেরা ক্ষমতায় ছিল, এই সংস্থাগুলিকে ঘুরে দাঁড় করানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে লাগাতার তদ্বির করেছে। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরে তৃণমূলের সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি।

বারি ময়দানে এ কে পদ্মনাভন। বুধবার শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

বারি ময়দানে এ কে পদ্মনাভন। বুধবার শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

সুশান্ত বণিক
বার্নপুর শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৯
Share: Save:

শিল্পাঞ্চলে বন্ধ পড়ে থাকা নানা রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা নিয়ে রাজ্য সরকার একেবারে উদ্যোগী হয়নি, বার্নপুরে সিটুর সভায় যোগ দিতে এসে এমনই অভিযোগ করলেন সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি এ কে পদ্মনাভন। তাঁর দাবি, রাজ্যে যখন বামেরা ক্ষমতায় ছিল, এই সংস্থাগুলিকে ঘুরে দাঁড় করানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে লাগাতার তদ্বির করেছে। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরে তৃণমূলের সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি।

রুগ্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পুনরুজ্জীবন, বন্ধ কারখানা খোলা, শ্রমিকদের ন্যূনতম ১৫ হাজার টাকা মজুরি, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বেসরকারিকরণের প্রতিবাদ-সহ ১৪ দফা দাবিতে সোমবার দুর্গাপুর থেকে সিটুর নেতৃত্বে মিছিল শুরু করে বামেদের শ্রমিক সংগঠনগুলি। বুধবার তা শেষ হয় বার্নপুরে। সেই উপলক্ষে এ দিন সেখানে বারি ময়দানে একটি জনসভার আয়োজন হয়। হাজার পনেরো সিটু কর্মী-সমর্থক হাজির ছিলেন এই সভায়। ভরা সভায় এ কে পদ্মনাভন অভিযোগ করেন, গত সাড়ে তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গে কোনও বেকারের চাকরি হয়নি। কারণ, নতুন কোনও উদ্যোগ আসেনি। উল্টে, একাধিক শিল্প সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, এ রাজ্যের একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ধুঁকছে। সরকারের তরফে সেগুলি পুনরুজ্জীবনে কোনও উদ্যোগ হচ্ছে না। তাঁর দাবি, রাজ্যে প্রায় ১০৪টি ছোট ইস্পাত কারখানা আছে। গত সাড়ে তিন বছরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় ৫৮টি। সাম্প্রতিক অতীতে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে এমএএমসি, বিওজিএল, সাইকেল কর্পোরেশনের মতো একাধিক সংস্থা। ধুঁকছে হিন্দুস্তান কেব্লসের মতো আরও কয়েকটি। এই সিটু নেতা দাবি করেন, “আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে চাই না। আন্দেলনে নামব। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারও এই সংস্থাগুলিকে বাঁচাতে চাইছে না।” পদ্মনাভন আরও দাবি করেন, “এই সরকারের আমলে পরিবর্তনের নামে শুধু যে আমাদের কর্মীদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে তা নয়, মহিলা, ছাত্র, এমনকী শিক্ষকেরাও রেহাই পাচ্ছেন না।”

শুধু রাজ্য নয়, সিটুর সর্বভারতীয় সভাপতি এ দিন কেন্দ্রের শিল্পনীতিরও সমালোচনা করেন। তাঁর বক্তব্য, “কয়লা শিল্পে ২০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি হয়েছে। আমাদের কাছে খবর আছে, ইস্পাত শিল্প-সহ অন্য নানা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকেও বেসরকারিকরণের পথে নিয়ে যাওয়া হবে।” এই সবের বিরুদ্ধে তাঁদের ‘সংঘর্ষ’ চলবে বলে জানান তিনি। শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষায় তাঁরা ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশ জুড়ে সত্যাগ্রহ এবং মার্চ বা এপ্রিলে এক দিন শ্রমিক ধর্মঘট পালন করবেন বলে ঘোষণা করেন পদ্মনাভন।

এ দিন সিটুর কয়েক হাজার মানুষের মিছিল আসানসোলে ঢোকে দুপুর ১২টা নাগাদ। সেখানে মধ্যাহ্নভোজের পরে মিছিলটি বার্নপুর রওনা হয়। সেখানে পৌঁছয় বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ। ইদানীং কালে সিটুর এত বড় মিছিল ও জমায়েত আসানসোল শিল্পাঞ্চলে হয়নি। এর জেরে রীতিমতো যানজট হয় শহরে। স্তব্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। সভায় পদ্মনাভন ছাড়াও বক্তব্য রাখেন আসানসোলের সিটু নেতা তথা প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশোগোপাল চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ নেতা বামাপদ মুখোপাধ্যায়। এ দিন তাঁর একটি বইও প্রকাশ হয়।

সিটুর এ দিনের বড় মিছিল ও সমাবেশ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি আইএনটিটিইউসি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। তবে রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে পদ্মনাভনের অভিযোগ উড়িয়ে তিনি পাল্টা দাবি করেন, “উনি অন্য রাজ্য থেকে এসেছেন। তাই এখানকার কর্মযজ্ঞ না জেনে কথা বলেছেন। আসলে ওদের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। শ্রমিক শ্রেণিও সঙ্গে নেই। তাই ভুল বকতে শুরু করেছেন। গত সাড়ে তিন বছরে এই রাজ্যে একাধিক শিল্প হয়েছে। এই জেলাতেই কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rally citu sushanto banik burnpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE