Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভাল চিকিত্‌সা পেতে পাশের শহরই ভরসা

হাসপাতালে গেলে চিকিত্‌সক মেলে না। রাস্তায় বেরোলে যানজট। তার সঙ্গে রয়েছে ইচ্ছেমতো দখলের সমস্যা। সাফাইয়ের অভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে আবর্জনা। এই সব সমস্যা নিয়েই বাস রানিগঞ্জের মানুষের। শহর বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রয়োজন হচ্ছিল। আলুগড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল আগেই।

এমনই হাল বেলুনিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

এমনই হাল বেলুনিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

নীলোত্‌পল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২৯
Share: Save:

হাসপাতালে গেলে চিকিত্‌সক মেলে না। রাস্তায় বেরোলে যানজট। তার সঙ্গে রয়েছে ইচ্ছেমতো দখলের সমস্যা। সাফাইয়ের অভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে আবর্জনা। এই সব সমস্যা নিয়েই বাস রানিগঞ্জের মানুষের।

শহর বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রয়োজন হচ্ছিল। আলুগড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল আগেই। কিন্তু তাতে সমস্যা মিটছিল না। বিধানচন্দ রায় বেসরকারি মাড়োয়াড়ি হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। বাম জমানায় এর পরে তৈরি হয় বেলুনিয়া গ্রামীণ হাসপাতাল। তার পরে সরকারি সহয়তায় গড়ে ওঠে বিনয় চৌধুরী স্মৃতি রিসার্চ হাসপাতাল। কিন্তু তা বছর তিনেক ধরে বন্ধ।

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সমরেন্দ্রনাথ বসুর কথায়, “উন্নত মানের চিকিত্‌সা পরিষেবা মেলে না এই শহরে। তাই, দুর্গাপুর বা আসানসোল ছুটতে হয়। গরিবদের বিনা পয়সায় চিকিত্‌সা দেওয়ার একটি ভাল উদ্যোগ হয়েছিল হয়েছিল। ডাক্তারের যে আশার আলো দেখেছিলাম। কিন্তু কিছু কিছু সিদ্ধান্তের জেরে তা সে ভাবে কার্যকর হল না। ওই রিসার্চ হাসপাতালে ভাল ভাল যন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। ভাল চিকিত্‌সার জন্য শহরের মানুষকে এখন নির্ভর করতে হয় আসানসোল বা দুর্গাপুরের উপরে।”

বেলুনিয়া গ্রামীণ হাসপাতাল হয়েছিল শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। সেখানকার সুপার অসিতকুমার নন্দী বলেন, “পর্যাপ্ত চিকিত্‌সকের অভাবে অনেক যন্ত্রপাতিই ব্যবহার হয় না।” সম্প্রতি সেখানে এক চিকিত্‌সকের বদলির খবর আসায় স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভও দেখান। পুরপ্রধান অনুপ মিত্র বলেন, “পুরসভার ছ’টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। দু’জন চিকিত্‌সক সব ক’টি সামলান। ফলে, কেন্দ্রগুলি সপ্তাহে এক দিন করে খোলে। গির্জা মোড়ে পুরসভার উদ্যোগে এক ডাক্তার বসেন।” আলুগড়িয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সক নেই। স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য এখন শহরে কিছু নার্সিংহোম হয়েছে। তবে সুপার স্পেশালিটি চিকিত্‌সা মেলে না।

আগাছা জমেছে বেলুনিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে।
বেহাল পড়ে ভবনও। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

শহরের যানজট নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই সমস্যা মেটাতে নানা সময়ে পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। এসবিএসটিসি-র বাস ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে রানিগঞ্জ মোড় হয়ে আমরাসোঁতা, রামবাগান যাওয়ার কথা ছিল। শহর থেকে দূরপাল্লার বাসের জন্য নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। এক সময়ে সিআর রোড ছিল শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে বাস ছাড়ত। বাস ঢুকত রানিগঞ্জ মোড় হয়ে। যানজট এড়াতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এখন সিআর রোড থেকে আর বাস ছাড়ে না। সেখানে রিকশা দাঁড়ায়।

এক সময়ে সিআর রোডের ধরে নেতাজি সুভাষ রাস্তা থেকে রনাই হয়ে মঙ্গলপুর পর্যন্ত বাস চলত। বহু দিন আগে তা বন্ধ হয়ে গেছে। শহরে ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা চলছে। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড থেকে রেলসকলের জায়গা দখল হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ব্যবস্থা নেয় না পুরসভা। নেতাজি সুভাষ রাস্তার রানিগঞ্জ মোড় থেকে তারবাংলা পর্যন্ত চওড়া হলেও তার পর থেকে পুরভবন পর্যন্ত তা সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছে। ফলে, যানজট নিত্য ঘটনা। রানিগঞ্জের বণিক সংগঠনের কর্তা রাজু খেতান বলেন, “আমরা মঙ্গলপুর দিয়ে বাইপাস তৈরির দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু, সেই দাবি মেটেনি।”

রানিগঞ্জ স্টেশন থেকে চিনকুঠি হয়ে হাসিনা মোড় বরাবর মঙ্গলপুর মোড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে ওঠা যায়। তৃণমূল নেতা গোপাল আচার্য অভিযোগ করেন, রাস্তার ডান দিকে বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের জায়গা ঘিরে বাজার বানিয়ে দিয়েছে পুরসভা। এমনকী তারা কর পর্যন্ত আদায় করে। আর আর রোড, জে এল নেহরু রোডে সারা দিন মালপত্র ওঠানো-নামানো হয়। হকারদের দাপটে শিবমন্দির রোড সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছে। এ সবের জেরে প্রাণ ওষ্ঠাগত বাসিন্দাদের। পার্কিং জোন তৈরির দাবি উঠলেও তা হয়নি।

এ সবের সঙ্গে রয়েছে নিকাশি ও সাফাইয়ের সমস্যা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিয়মিত রাস্তাঘাট পরিষ্কার হয় না। ফলে, আবর্জনা জমে থাকে। শহর পরিষ্কার করার দাবিতে পুরসভার সামনে প্রায়ই বিক্ষোভ হয়। রনাইয়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর দশেক আগে এই এলাকা পুরসভার অধীনে এসেছে। কিন্তু, কখনও সেখানে সাফাইয়ের কাজ হয় না। গির্জাপাড়া বসতি এলাকা, আমরাসোঁতার বাসিন্দাদেরও একই রকম অভিযোগ। বড়বাজারে প্রায়ই রাস্তা দিয়ে নোংরা জলে বয়ে যায়। পুরপ্রধান অনুপবাবুর দাবি, যানজট ও নিকাশি সমস্যা মেটাতে সাধ্যমতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

শুধু নাগরিক পরিষেবা নিয়ে নানা অভিযোগ নয়, শহরবাসীর খেদ রয়েছে শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে শহরের এক সময়ের জৌলুস হারিয়ে যাওয়া নিয়েও।

(চলবে)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে district@abp.in-এ মেল পাঠান।
Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-রানিগঞ্জ’। অথবা চিঠি পাঠান: ‘আমার শহর’, বর্ধমান বিভাগ, জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০০০১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE