Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মাতৃযান না এলে আমাকে ফোন করুন, বললেন কর্তা

খুঁটি পড়লেও বিদ্যুৎ আসেনি। এলাকা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জলাধার থাকলেও তাঁরা সেচের জন্য জল পান না। নানা রকম ভাতা বা বৃত্তি চালু থাকলেও সেই সুবিধা তাঁদের কাছে পৌঁছয়নি। সালানপুরের আল্লাডি পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে সম্প্রতি এমনই নানা অভিযোগ শুনলেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন।

জেলাশাসককে প্রশ্ন করছে এক পড়ুয়া। —নিজস্ব চিত্র।

জেলাশাসককে প্রশ্ন করছে এক পড়ুয়া। —নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫১
Share: Save:

খুঁটি পড়লেও বিদ্যুৎ আসেনি। এলাকা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জলাধার থাকলেও তাঁরা সেচের জন্য জল পান না। নানা রকম ভাতা বা বৃত্তি চালু থাকলেও সেই সুবিধা তাঁদের কাছে পৌঁছয়নি। সালানপুরের আল্লাডি পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে সম্প্রতি এমনই নানা অভিযোগ শুনলেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন।

সম্প্রতি ওই পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে রাত পর্যন্ত বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের বেশ কয়েক জন কর্তা। অভাব-অভিযোগ শুনে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি।

মুচিডি গ্রামের আদিবাসী ছাত্রী ফুলমতি কিস্কু জেলাশাসককে বলেন, “আমি বিএ তৃতীয় বর্ষে পড়ি। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। পড়াশোনা মাঝপথে বন্ধ হওয়ার জোগাড়। আপনি কিছু ব্যবস্থা করুন।” এ কথা শুনে খানিকটা অবাক হয়ে যেতে দেখা যায় জেলাশাসককে। তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন, কেন আদিবাসী পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই ছাত্রী। ওই ছাত্রীর জন্য মহকুমাশাসকের মাধ্যমে বৃ্ত্তির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের।

আল্লাডি পঞ্চায়েতের কালিপাথর গ্রামের বৃদ্ধা দলিল কিস্কু বলেন, “আমার কেউ নেই। চোখে দেখি না। ঘরে খাবার নেই। দয়া করে আমার জন্য একটা কিছু ব্যবস্থা করে দিন।” এ বারও অবাক হওয়ার পালা জেলাশাসকের। তিনি বলেন, “সে কী! আপনি কিছুই পান না। কেউ আপনার জন্য কিছু করেনি।” পাশে বসে থাকা মহকুমাশাসকের উদ্দেশে বলেন, “এগুলোর দিকে নজর দিন।” সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দেন, চলতি মাস থেকেই ওই বৃদ্ধার জন্য বিধবা ভাতা বাবদ চারশো টাকা করে বরাদ্দ করতে হবে। পরে বিকলাঙ্গ ভাতা ও আদিবাসী ভাতারও ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।

ওই আলোচনাসভায় কয়েকশো বাসিন্দা এসেছিলেন। শুরুতেই গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, ভাল করে প্রচার হয়নি। তাই অনেকে আসতে পারেননি। জেলাশাসক তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, “চিন্তা নেই পরে আবার আসব। সবার কথা শুনব।” এর পরে একে-একে বাসিন্দারা নানা অভাবের কথা জানান। মাইথন জলাধারের খুব কাছেই তাঁদের গ্রাম। অথচ, তাঁরা প্রবল জলসঙ্কটে রয়েছেন। সেচের বন্দোবস্ত হলে চাষাবাদের সুবিধা হয় বলে দাবি করেন কয়েক জন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সেচ) প্রণবকুমার বিশ্বাসকে জেলাশাসক জানিয়ে দেন, অবিলম্বে ১০টি সেচ কুয়ো খুঁড়ে দিতে অর্থ দেবে তাঁর দফতর।

অভিযোগ ওঠে, বাথানবাড়ি নিচুপাড়া এলাকায় বহু বছর আগে বিদ্যুতের খুঁটি লাগানো হয়েছে। কিন্তু সংযোগ দেওয়া হয়নি আজও। প্রায় ৩২টি পরিবারের বাস সেখানে। শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুৎহীন গ্রাম আছে, প্রথমে যেন সে কথা বিশ্বাসই হয়নি জেলাশাসকের। সব শোনার পরে তিনি বলেন, “সামাজিক বৈদ্যুতিকরণ প্রকল্পের অধীনে এখানে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হবে।” পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, প্রসূতিদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা-নেওয়ার জন্য ফোন করলেও মাতৃযানের গাড়ি আসে না। এ কথা শুনে ক্ষুব্ধ হন জেলাশাসক। তিনি নিজের ফোন নম্বর দিয়ে বলেন, “গাড়ি যদি না আসে, আমাকে ফোন করবেন। আমি ব্যবস্থা নেব।” নানা সমস্যা শুনে জেলাশাসক যখনই ক্ষুব্ধ হয়েছেন, বিব্রত দেখিয়েছে প্রশাসনের অন্য কর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের। আলোচনাপর্বের শেষ পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে জেলাশাসক জানতে চান, তারা মিড-ডে মিল কেমন পাচ্ছে। সকলে সমস্বরে জানায়, ভালই।

ব্লকের এই সমস্যাগুলি এত দিন মেটানোর ব্যবস্থা হয়নি কেন, এ নিয়ে কিছু না বলতে চাইলেও মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “জেলাশাসক যা নির্দেশ দিয়েছেন, তা পালন করা হবে।” সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল মজুমদার বলেন, “সমস্যা অনেক আছে। সবে কাজের দায়িত্ব নিয়েছি। সমাধানের চেষ্টা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE