ভোটে খারাপ ফলের জন্য তৃণমূলের জেলা নেতাদের উপরে শাস্তির খাঁড়া নেমে আসায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হল আসানসোলে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে মলয় ঘটককে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হওয়ায় মঙ্গলবার দফায় দফায় রাস্তা অবরোধ করলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। দলের শিল্পাঞ্চলের নেতারা অবশ্য শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এমন প্রকাশ্যে ক্ষোভপ্রকাশের ঘটনার নিন্দা করেছেন।
বিজেপি-র বাবুল সুপ্রিয়ের কাছে তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের হারের পরেই দলের আসানসোলের নেতারা শাস্তির মুখে পড়তে পারেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছিল। ফল বেরোতে না বেরোতেই তৃণমূল নেতৃত্ব মলয়বাবুকে কলকাতায় ডেকে পাঠান। তাঁকে ইস্তফা দিতে বলা হয় বলেও দলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছিল। সোমবার রাতে জানা যায়, মলয়বাবুর ইস্তফা গৃহীত হয়েছে। এই খবর আসার পরেই স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের অনেকের গলায় অসন্তোষের সুর শোনা গিয়েছিল। এ দিন সকালে আপকার গার্ডেন এলাকায় মলয়বাবুর বাড়ির সামনে জড়ো হন কিছু কর্মী-সমর্থক। তবে মলয়বাবু কলকাতায় রয়েছেন শুনে খানিকক্ষণ অপেক্ষার পরে তাঁরা ফিরে যান।
সকাল ১০টা নাগাদ শহরের এসবি গড়াই রোডে উপেন্দ্রনাথ স্কুলের সামনে পথ অবরোধ করেন স্থানীয় কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। তবে দলের কোনও বড় নেতা সেখানে ছিলেন না। ওই কর্মীরা দাবি করেন, মলয়বাবুর সঙ্গে যা হয়েছে তা অন্যায়। তাঁকে নিজের পদে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। পুলিশ গিয়েও অবরোধ তুলতে পারেনি। এলাকায় যানজট তৈরি হয়। মুশকিলে পড়েন সাধারণ পথচারীরা। ওই এলাকাটি শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। সেখানকার কাউন্সিলর মলয়বাবুর ভাই অভিজিত্ ঘটক। লোকসভায় দলীয় প্রার্থীর হারের পরে তাঁকেও দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) যুব সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব। আধ ঘণ্টা পরে অভিজিত্বাবু গিয়ে অবরোধ তোলার ব্যবস্থা করেন।
সকাল ১১টা নাগাদ আবার আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডের কাছে হাটন রোড মোড় অবরোধ করেন তৃণমূল সমর্থক পরিবহণ কর্মীদের সংগঠন ‘মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সদস্যেরা। নেতৃত্ব দেন ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া। রাস্তার মাঝে বাস রেখে অবরোধ চলে। সপ্তাহের কাজের দিনে আচমকা অবরোধে যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। চড়া রোদ-গরমে তাঁদের কষ্ট আরও বাড়ে। আগাম কিছু না জানিয়ে কেন আচমকা অবরোধ? রাজুবাবুর দাবি, “মলয় ঘটকের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। লোকসভা ভোটে হারের প্রকৃত কারণ বিশ্লেষণ না করে এক তরফা মলয়বাবুকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তারই প্রতিবাদে এই অবরোধ।” ঘণ্টাখানেক পরে অবরোধ তুলে নিলেও দলীয় নেতৃত্ব মলয়বাবুকে পদ ফিরিয়ে না দিলে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন রাজুবাবু।
শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল এবং আইএনটিটিইউসি নেতারা অবশ্য দলীয় কর্মীদের একাংশের এ ভাবে বিক্ষোভ-অবরোধে নামার নিন্দা করেছেন। তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “দলনেত্রীকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করা ঠিক হচ্ছে না। তাতে আখেরে মলয়বাবুরই ক্ষতি হচ্ছে।” আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমাদের সংগঠন বা দল এই ধরনের বিশৃঙ্খলা অনুমোদন করে না। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। দলনেত্রীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy