Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রথের মেলা থেকে ৩৫ ফুটের প্রতিমা, নানা চমক মণ্ডপে

কেউ চেষ্টা করেছেন দক্ষিণেশ্বরের ধাঁচে মন্দির গড়তে। কেউ বা আবার তৈরি করেছেন ভাঙা মন্দির। কোথাও উপকরণ হোগলা পাতা, কোথাও আবার বাঁশের কঞ্চি। কালীপুজোর মণ্ডপে শিল্পাঞ্চল জুড়ে এমনই নানা চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছেন উদ্যোক্তারা।

সুশান্ত বণিক ও বিপ্লব ভট্টাচার্য
আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২৯
Share: Save:

কেউ চেষ্টা করেছেন দক্ষিণেশ্বরের ধাঁচে মন্দির গড়তে। কেউ বা আবার তৈরি করেছেন ভাঙা মন্দির। কোথাও উপকরণ হোগলা পাতা, কোথাও আবার বাঁশের কঞ্চি। কালীপুজোর মণ্ডপে শিল্পাঞ্চল জুড়ে এমনই নানা চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছেন উদ্যোক্তারা।

দুর্গাপুরের বিসি রায় অ্যাভিনিউয়ের অআকখ কালচারাল ক্লাবের পুজোর এ বার ৩৯তম বর্ষ। হোগলা পাতা দিতে গড়া মণ্ডপ কাল্পনিক মন্দিরের আদলে। ৩৭ বছরে পা রাখা করঙ্গপাড়া উদয়ন সঙ্ঘের পুজোর মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে কলাপাতা। উদ্যোক্তারা জানান, শনিবার সকালে মণ্ডপ প্রাঙ্গণে থাকছে গণ ভাইফোঁটার আসর। বেনাচিতি ইউনাইটেড ক্লাবের পুজোর এ বার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ। মণ্ডপ তৈরি হয়েছে ভগ্নপ্রায় মন্দিরের আদলে। প্রতিমাতেও রয়েছে প্রাচীন দেবীমূর্তির আদল। থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ইস্পাতনগরীর আর্যভট্ট এবং শোভাপুর বয়েজ ক্লাবের কালীপুজো এ বার ১৪ বছরে পড়ল। আয়োজকেরা জানান, চট, প্লাস্টার, বটগাছের শিকড় দিয়ে তৈরি মণ্ডপে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের নানা রূপ তুলে ধরা হয়েছে। ভিড়িঙ্গির বিপ্লবী সঙ্ঘের ৪৪ বছরের পুজোতেও মণ্ডপ মন্দিরের আদলে। পুজোয় থাকছে রকমারি আলো। টেগোর অ্যাভিনিউ বয়েজ ক্লাবের পুজো পড়ল ৪০ বছরে। সেকেন্ডারি রোডের অআকখ শ্যামাপুজো কমিটির পুজোর বয়স ৩৮ বছর। মণ্ডপে থাকছে বাহারি আলো। সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তো আছেই। ধোবিঘাট শ্যামা মা সর্বজনীন মন্দিরের পুজোয় সাবেকিয়ানাই হল বৈশিষ্ঠ্য। উদ্যোক্তারা জানান, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের পুজো পরিক্রমায় নিয়ে যাওয়া হবে। এমএএমসি-র নির্ভীক ক্লাবের পুজোর বয়স ৩৮ বছর। এই পুজোর মূল আকর্ষণ ২৪ হাতের দেবী। এ বার সুবর্ণজয়ন্তী বছর পালন করছে বিদ্যাপতি, কৃত্তিবাস (দ) ও কালিদাস (প) পুজো কমিটি। বীরভানপুর অগ্রণী ইউনাইটেড ক্লাবের পুজো এ বার ২৪ বছরে পড়ল। ক্লাবের সভাপতি উমাপদ দাসের দাবি, দুর্গাপুরে একমাত্র তাঁদের পুজোয় কালী ছিন্নমস্তা দেবী হিসাবে পূজিতা হন। বিষ্ণুপুরের ৯ জন পুরোহিত পুজো করেন।

কাঁকসার রাজবাঁধেও এ বার থিমের রমরমা। ত্রিবর্ণ সঙ্ঘ এ বার মণ্ডপ গড়েছে ভগ্নপ্রায় মন্দিরের আদলে। কাঁকসার অন্য পুজোগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিলামপুরের চট্টোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায় ও বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পুজো। এ বার এই পুজো ৩০৭ বছরে পা দিল। কাঁকসার পানাগড় গ্রাম শ্মশানকালী মন্দিরের পুজোও এলাকার বড় আকর্ষণ। উদ্যোক্তাদের পক্ষে কল্যাণীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় জানান, এই পুজোয় আশপাশের বহু মানুষ যোগ দেন।

আসানসোল মহকুমায় শারদোৎসবের জৌলুস আসানসোল শহরে বেশি হলেও প্রতি বছর কালীপুজোর আড়ম্বর বেশি দেখা যায় ইস্পাত শহর বার্নপুরে। সেখানকার ইয়ং মেনস অ্যাসোসিয়েশনের পুজো প্রাঙ্গণে এ বার থাকছে অকালের রথ উৎসব। বড় রথের দড়ি টানতে মানুষের ভিড়। প্রশস্ত রাস্তার দু’পাশে হরেক দোকান। পুজোর ৫৩তম বর্ষে একেবারে আসল রথযাত্রার মতো করে সব ফুটিয়ে তুলেছেন উদ্যোক্তারা। বার্নপুরের প্রান্তিক ক্লাবের পুজো এ বার ৬২ বছরে পড়েছে। কাল্পনিক মন্দিরের আদলে গড়া বড় মণ্ডপে ওড়িশার শিল্পকলার ছোঁয়া থাকছে। প্রতিমার সাজ আনা হয়েছে কটক থেকে।

প্রায় ৩৫ ফুট উঁচু প্রতিমা গড়ে শিল্পাঞ্চলবাসীকে তাক লাগানোর প্রস্তুতি নিয়েছে আসানসোল গ্রামের বিদ্রোহী সঙ্ঘ। পুজো উপলক্ষে সেখানে একটি মেলা বসে। বার্নপুরের পাবলিক ফ্রেন্ডস ক্লাবের পুজোয় এ বার দক্ষিনেশ্বর মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। একটি বড় শিবলিঙ্গে বিভিন্ন এলাকার কালীমূর্তি দেখা যাবে এখানে। কালীর আরাধনায় এ বার কুলটির বন্ধুমহল মণ্ডপ বানিয়েছে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে। নিয়ামতপুরের সর্বজনীনের মণ্ডপ অন্য বারের মতোই মনোরম। সালানপুরের অগ্রতি ক্লাবের পুজো ৩৩ বছরে পড়েছে। তার অন্যতম উদ্যোক্তা তথা সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল মজুমদার জানান, মণ্ডপে উত্তর ভারতের শৈলী থাকছে। কুলটির নেতাজি সরণির পুজো, অনির্বান ক্লাবের পুজো, চিত্তরঞ্জনের উত্তর সুন্দর পাহাড়ির অযান্ত্রিক ক্লাব, বরাকরের বেগুনিয়া ব্যবসায়ী সমিতির পুজোও হচ্ছে বেশ ধুমধামের সঙ্গে।

শিল্পাঞ্চলে প্রাচীন পুজোগুলিতেও ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ছে। প্রায় চারশো বছরের পুরনো কল্যাণেশ্বরী মন্দিরের পুজো তাদের মধ্যে অন্যতম। পুজোর রাত কাটাতে বহু পর্যটক এখানে আসেন। আসানসোলে নুনিয়া নদীর ধারে প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন ঘাঘরবুড়ি মন্দিরের পুজো ঘিরেও উদ্দীপনা রয়েছে। সালানপুরে সামডিহির কাছে পাহাড়ের চূড়ায় মুক্তাইচণ্ডী মন্দিরের পুজোও বড় আকর্ষণ। দূরদূরান্তের পর্যটকেরাও আসেন এখানে। চিত্তরঞ্জনে সিমজুড়িতে দু’টি কালী মন্দির রয়েছে। দীপাবলীর রাতে এখানেও প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। কালীপুজো উপলক্ষে জমজমাট হয়ে ওঠে ডিসেরগড়ের ছিন্নমস্তা মন্দির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE