Advertisement
২০ মে ২০২৪

স্কুলে ঢুকতে মানা, ফের বাধা বাবুলকে

ভোটের প্রচারপর্বে তাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল বারবার। জিতে মন্ত্রী হওয়ার পরেও রেহাই নেই। রানিগঞ্জের স্কুলে স্বচ্ছ ভারত মিশনের ডাস্টবিন দিতে গিয়ে শুক্রবার ফের তৃণমূলের বাধার মুখে পড়লেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। স্কুল থেকে ফেরার পথে তাঁর গাড়ি আটকে হুমকি দেওয়া হয়, কয়েক জন বিজেপি সমর্থককে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। তাতে নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের সেই জিতেন্দ্র তিওয়ারির, যাঁর বিরুদ্ধে আগেও বাবুলকে নানা ভাবে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে।

রানিগঞ্জের জে কে নগর স্কুলে ঢোকা নিয়ে স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক অভয় উপাধ্যায়ের সঙ্গে তর্ক বাবুল সুপ্রিয়র। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

রানিগঞ্জের জে কে নগর স্কুলে ঢোকা নিয়ে স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক অভয় উপাধ্যায়ের সঙ্গে তর্ক বাবুল সুপ্রিয়র। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫১
Share: Save:

ভোটের প্রচারপর্বে তাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল বারবার। জিতে মন্ত্রী হওয়ার পরেও রেহাই নেই।

রানিগঞ্জের স্কুলে স্বচ্ছ ভারত মিশনের ডাস্টবিন দিতে গিয়ে শুক্রবার ফের তৃণমূলের বাধার মুখে পড়লেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। স্কুল থেকে ফেরার পথে তাঁর গাড়ি আটকে হুমকি দেওয়া হয়, কয়েক জন বিজেপি সমর্থককে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। তাতে নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের সেই জিতেন্দ্র তিওয়ারির, যাঁর বিরুদ্ধে আগেও বাবুলকে নানা ভাবে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে।

বাবুল যে আসানসোলে তাদের পালের হাওয়া কেড়ে নিতে পারেন, তা গোড়ায় বুঝতে পারেননি তৃণমূলের নেতারা। কিন্তু তাঁর প্রতি জনসমর্থন যত স্পষ্ট হয়েছে, ততই মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল। কখনও মদ খেয়ে মন্দিরে ঢোকার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তো কখনও অস্ত্র রাখার। যদিও কোনওটিই এখনও প্রমাণ করা যায়নি এবং লোকসভা নির্বাচনে বাবুল হইহই করে জিতে এসেছেন।

বাবুল নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরে তৃণমূলের রাগ আরও বেড়েছে বই কমেনি। তিনি চাইলেও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি। তাঁর দফতরের কোনও অফিসারও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন না বলে তৃণমূলের এই অন্যতম শীর্ষ নেতা জানিয়ে দিয়েছেন। শুধু রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক স্তরেই নয়। ব্যক্তিগত পরিসরেও রাজনীতি ছেড়ে বেরোতে পারেননি খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কারণে লোকসভার অধিবেশন চলার সময়ে দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে বাবুল তাঁর গানের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করলেও ব্যস্ততার কথা জানিয়ে নেত্রী তা এড়িয়ে যান।

এই যখন উঁচুতলার নেতাদের মনোভাব, তখন নীচতলাও যে মারমুখী হয়ে উঠবে তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। এ দিন বর্ধমানের রানিগঞ্জে যে স্কুলে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন বাবুল, সেই জেকে নগর হাইস্কুলে গত ২ জানুয়ারিই তিনি চিঠি পাঠিয়ে তাঁর যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা জিতেন্দ্র তিওয়ারির-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা অভয় উপাধ্যায় ফ্যাক্সবার্তা মারফত জানান, এখন স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। তাই তিনি যেন এখন না আসেন। বরং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর (তিনি যে বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহের দাদু, চিঠিতেই তা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে) নামে পাঠাগার গড়তে ২০ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়ার আর্জি জানানো হয়।

বাবুল বলেন, “চিঠির ভাষা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, গোটা বিষয়টি নিয়ে ওঁরা রাজনীতি করছেন। তাই ওঁদের নিষেধ মানার প্রয়োজন বোধ করিনি।” তাঁর সঙ্গী, বিজেপি-র আসানসোল জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকারের দাবি, “মাস তিনেক আগেও বাবুল এক বার ওই স্কুলে যেতে চেয়েছিলেন। তখনও স্কুলের তরফে জানানো হয়, পরীক্ষা চলছে। আসলে বারবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাবুলকে স্কুলে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তাই এ দিন আমরা আর কোনও বাধা মানিনি।” আর তার ফলেই তাঁদের অভয়বাবুদের রক্তচক্ষুর সামনে পড়তে হয়েছে।

বিজেপির অভিযোগ, দুপুর দেড়টা নাগাদ বাবুল স্কুলের সামনে পৌঁছে দেখেন, গেট বন্ধ। তা আগলে সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে দাঁড়িয়ে অভয় উপাধ্যায়। বাবুল স্কুলে ঢুকতে চাইলে তাঁরা বাধা দেন। বারণ করা সত্ত্বেও মন্ত্রী কেন এলেন, তার কৈফিয়তও চান অভয়বাবু। তাঁকে বিশেষ আমল না দিয়ে বাবুল পাশের একটি ছোট গেট দিয়ে স্কুলে ঢুকে পড়েন। তাঁকে দেখেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে ঘিরে ধরে পড়ুয়ারা। মিনিট চল্লিশ তাদের সঙ্গে কাটিয়ে দু’টি ডাস্টবিন স্কুল প্রাঙ্গণে রেখে বাবুল বেরিয়ে যান। পরে স্থানীয় নিমচা ফাঁড়িতে অভয়বাবু অভিযোগ করেন, পরিচালন সমিতির নিষেধ সত্ত্বেও মন্ত্রী স্কুলে ঢুকে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন। সেই সুযোগে অনেক পড়ুয়া বাড়ি চলে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হয়েছে।

স্কুল থেকে ফেরার পথে কিছুটা গিয়েই আবার বাধার মুখে পড়েন বাবুল। নির্মলবাবুর অভিযোগ, শহরের পোস্ট অফিস মোড়ের কাছে জিতেন্দ্র তিওয়ারি দলবল নিয়ে ঝান্ডা হাতে মন্ত্রীর কনভয়ের সামনে এসে দাঁড়ান। দু’দলের কর্মীদের বচসা, হাতাহাতি বেধে যায়। তিন বিজেপি কর্মী চোট পান। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। রানিগঞ্জ থানায় জিতেন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন নির্মলবাবু।

বাবুল যে আক্রান্ত, ইতিমধ্যে সেই খবর পৌঁছে যায় দিল্লিতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল তাঁকে ফোন করে খবর নেন। জিতেন্দ্রবাবু অবশ্য দাবি করেন, “শনিবার জেকে নগরে আমাদের জনসভা রয়েছে। তারই মঞ্চ দেখভাল করতে গিয়েছিলাম। গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময়ে মন্ত্রীই আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে কিছু বলেন। আমরা কোনও গোলমাল পাকাইনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

babul supriyo raniganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE