Advertisement
২০ মে ২০২৪
পথে প্রচারে

সুখতলা ক্ষয়ে যাবে, চটি কিনলেন বাবুল

ভিড় দেখে বাস থামিয়েছিলেন চালক। বাসের ভিতরে এফএমে বাজছে ‘কহো না প্যার হ্যায়’। ধাদকা পলিটেকনিক কলেজ পেরিয়েই হঠাৎ ঘ্যাঁচ করে ব্রেক।

প্রার্থীকে একটু ছোঁয়া। আসানসোলে ভোট প্রচারে বাবুল সুপ্রিয়। বৃহস্পতিবার শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

প্রার্থীকে একটু ছোঁয়া। আসানসোলে ভোট প্রচারে বাবুল সুপ্রিয়। বৃহস্পতিবার শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৪ ০২:৩৭
Share: Save:

ভিড় দেখে বাস থামিয়েছিলেন চালক।

বাসের ভিতরে এফএমে বাজছে ‘কহো না প্যার হ্যায়’। ধাদকা পলিটেকনিক কলেজ পেরিয়েই হঠাৎ ঘ্যাঁচ করে ব্রেক।

কী হল দাদা? বলা নেই কওয়া নেই দাঁড়িয়ে পড়লেন যে? বলি, হচ্ছেটা কী? যাত্রীরা বিরক্ত। দু’এক জন জানলা দিয়ে উঁকিঝুঁকি।

আর উঁকি মারতেই এ কী! তুমুল ভিড়ের মধ্যে ফুলে-মালায় সাজানো ম্যাটাডরে কে এগিয়ে আসছে? আরে, এ তো স্টার গায়ক স্বয়ং! কহো না প্যার হ্যায়! যে-ই না ম্যাটাডর কাছাকাছি আসা, গিয়ার-স্টিয়ারিং ছেড়ে সোজা ডান পাশের জানলা দিয়ে আধখানা শরীর হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন চালক। সামনে সটান বাড়ানো হাত।

সেই হাত ধরে নিলেন বাবুল সুপ্রিয়। লাফিয়ে নামলেন কন্ডাক্টর। হাত মেলাতে হুড়মুড় করে নেমে পড়লেন যাত্রীরাও।

বিজেপি-র প্রার্থী হওয়ার পরে আসানসোলে দ্বিতীয় দফায় প্রচারে এলেন সুপ্রিয় বড়াল (নির্বাচন কমিশনের খাতায় আর চুনকাম করা দেওয়ালে) ওরফে বাবুল। বৃহস্পতিবার সকালে ঘণ্টা তিনেক আসানসোল শহরে রোড-শো করলেন। এক ফাঁকে গেলেন মন্দিরে। রাস্তার পাশে দোকান থেকে টুকটাক কেনাকাটা সারলেন। বিকেলে আবার হেঁটে বেরিয়ে পড়লেন কুলটিতে। মানুষজনের মধ্যে মিশে শুনলেন দাবি-দাওয়া। শেষে বললেন, “আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিতে আসিনি। শুধু আপনাদের কথা শুনতে এসেছি, যাতে সুযোগ পেলে দিল্লিতে সেগুলো তুলে ধরতে পারি।”

বুধবার রাতেই শহরে পৌঁছে গিয়েছিলেন বাবুল। তাঁর থাকার জন্য বাড়ি এখনও ঠিক হয়নি। তাই এ বারও উঠেছেন হোটেলে। তবে গত বারের হোটেল এ বার বদলে ফেলেছেন। আসানসোল স্টেশন রোড এবং জি টি রোডের সংযোগস্থলে এই নতুন হোটেল থেকেই সকাল পৌনে ১০টা

নাগাদ বেরোন বাবুল। পরনে সাদা শার্ট, ফেডেড জিন্স। দলের

কর্মীদের নিয়ে প্রথমে তপসিবাবার মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন। তার পরে কাছাকাছি একটি দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন সেরে সোজা প্রচারে। সাজানো গাড়িতে দাঁড়িয়ে কখনও পথচারীদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন, তো কোথাও দাঁড়িয়ে পড়ে আর্জি ‘আমায় আশীর্বাদ করুন’। কখনও আবার গলা থেকে মালা খুলে ছুড়ে দিচ্ছেন জনতার দিকে।

আসানসোলে বরাবর বিজেপি-র ছোটখাটো ভোটব্যাঙ্ক থাকলেও তা আদৌ ব্রিগেড ভরানোর মতো নয়। কিন্তু বাবুল যেখানেই গিয়েছেন, ভিড় জমে গিয়েছে গাড়ি ঘিরে। চলার পথে মন্দির দেখলেই নেমে ঢিপঢিপ করে প্রণামও সেরে নিয়েছেন তিনি। ধাদকা রোডের কাছে পৌঁছে আবার কোলে তুলে নেন এক খুদে পড়ুয়াকে। সে বেচারা ভিড়, ক্যামেরা, পতাকা সব দেখেশুনে একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা। খানিক এগোতেই কর্মীরা কিছু খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আব্দার মেনে লেবু-জল আর কয়েক টুকরো শসা মুখে পুরে ফের চলা শুরু। পুরসভা মোড়, হাটন রোড, রেল আবাসন, আসানসোল বাজার, বজরঙ্গি মন্দির ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে কোনও ক্লান্তি নেই। অন্তত চোখে পড়ার মতো তো নয়ই।

দুপুরে ছোট্ট ব্রেক।

বিকেলে কুলটির কেন্দুয়া বাজারে পদ্ম লাগানো গাড়িতে লাল চেক শার্ট ও নীল রঙের প্যান্টকে এগিয়ে আসতে দেখেই ভিড় জমে গিয়েছিল। বাজারে নেমে পড়ে এলাকার লোকজনের কথা বলতে, হাঁটতে শুরু করেন বাবুল। লোক জমে যায় সব বাড়ির ছাদে।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহির আব্বাস তাঁকে বলেন, “শুনছি, রেলের ফ্রেট করিডর তৈরির জন্য এখানকার বাজার ভেঙে দেওয়া হবে। তা হলে আমরা ধনেপ্রাণে মারা পড়ব। আপনি কিছু করুন।” বাবুলের আশ্বাস, “সুযোগ পেলে ঠিক জায়গায় তুলে ধরব। আশা করি, আমাকে সে সুযোগ দেবেন।” বললেন, “এত দিন আমার গান ভালবেসেছেন। এ বার গানের মতো ভালবাসুন আমাকেও।”

দুপুরে রোদ চড়তেই বাজার থেকে টুপি কিনে চড়িয়েছিলেন মাথায়। এক ধাক্কায় কিনেছেন দু’জোড়া চটিও।

ব্যাপার কী? মুচকি হাসেন মুম্বইয়া “আসানসোলে সবার কাছে পৌঁছতে হবে। সুখতলা ক্ষয়ে যাবে তো! তাই...।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

babul supriyo sushanta banik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE