Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জৈব বীজে জৈব চাষ, সাফল্য পেল বিসিকেভি

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, জৈব পদ্ধতিতে চাষ নিশ্চই ভাল। কিন্তু, জৈব বীজে  বোনা ফসল আরও বেশি নিরাপদ। এতদিন তা বিচারের অবকাশ ছিল না। কারণ, জৈব বীজের আকাল।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
নদিয়া শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৮
Share: Save:

স্বাস্থ্য রক্ষায় রোজ বদলাচ্ছে মানুষের খাদ্যাভ্যাস। রোজকার খাবারের তালিকায় বাড়ছে ‘ঝুঁকিহীন’ খাবারের সংখ্যা। বাজারে, মলে খোঁজ বাড়ছে জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত শাক-সব্জির।

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, জৈব পদ্ধতিতে চাষ নিশ্চই ভাল। কিন্তু, জৈব বীজে বোনা ফসল আরও বেশি নিরাপদ। এতদিন তা বিচারের অবকাশ ছিল না। কারণ, জৈব বীজের আকাল। বিশেষ করে ধানের। সেই সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি বড়সড় সাফল্য পেল বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বিসিকেভি)।

তিনটি সুগন্ধী ধানের জৈব বীজ তৈরির পাশাপাশি তা বাজারজাত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের লাইসেন্সও পেয়ে গিয়েছে তারা। লাইসেন্স পাওয়ার অর্থ, এই বীজ এবং তা থেকে উৎপাদিত ফসল বিশ্বের বাজারে ১০০ শতাংশ জৈব ফসল হিসেবে বিবেচিত হবে। ভাল দাম পাবেন চাষিরা। বিসিকেভি-র দাবি, সারা দেশে এটিই প্রথম জৈব বীজ।

২০০০ সাল থেকে দেশে সার্টিফায়েড অর্থাৎ শংসাপত্র প্রাপ্ত বীজ উৎপাদন শুরু হয়। সার্টিফায়েড বীজ চাষের পক্ষে নিরাপদই শুধু নয়, প্রতিটি বীজের অঙ্কুরোদ্গম হওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯ সাল থেকে সার্টিফায়েড বীজ তৈরি হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে জৈব বীজ উৎপাদনের ভাবনাচিন্তা শুরু করে বিসিকেভি।

রাজ্যের তিনটি সুগন্ধী ধানকে এর জন্য বেছে নেওয়া হয়। গোবিন্দভোগ, রাধাতিলক এবং রাঁধুনীপাগল ধান বেছে নেওয়ার পিছনেও কারণ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিন রাজ্য তো বটেই বিদেশেও এই তিনটি চালের চাহিদা রয়েছে।

বিসিকেভি-র মুখ্য প্রকল্প বিজ্ঞানী, অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ জানান, জৈব বীজ তৈরির বেশ কয়েকটি মাপকাঠি রয়েছে। ২০১২ সালে বিসিকেভি-র নিজস্ব খামার এবং তাদের সহযোগী আরও তিনটি খামারে জৈব বীজ তৈরির কাজ শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমবার তৈরি বীজ পরপর তিন বার সফলভাবে চাষ হলে সেই বীজ কেন্দ্রীয় সরকারের মান্যতা পায়। কৃষিমন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা অ্যাপেডা (এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রডাক্ট এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটি) বীজের শংসাপত্র দেয়। কিন্তু, জৈব বীজের ক্ষেত্রে কৃষিমন্ত্রক অনুমোদিত কোনও বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে তা পরীক্ষা করাতে হয়। তাঁদের শংসাপত্র পেলেই শংসাপত্র এবং বীজ বাজারজাত করার লাইসেন্স দেয় অ্যাপেডা।

বিসিকেভি আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত ‘আইএমও কন্ট্রোল’ নামে একটি সংস্থাকে দিয়ে শংসাপত্র করায়। সংস্থার বিশেষজ্ঞরা পর পর তিন বছর এসে সবকিছু পরীক্ষা করে। শেষ পর্যন্ত গত বছর তারা অ্যাপেডার শংসাপত্র পায়।

সম্প্রতি তিন সুগন্ধী ধানের বীজ প্রকাশ করেছে বিসিকেভি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ধরণীধর পাত্র বলেন, ‘‘এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয়। সারা দেশে প্রথম আমরাই ধানের জৈব বীজ উৎপাদন এবং বাণিজ্যের অনুমোদন পেয়েছি। আগামী দিনে ধানের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের জৈব বীজও তৈরি করব।’’

মৃত্যুঞ্জয় বলেন, জৈব বীজ স্বাস্থ্যের পক্ষে নিরাপদই শুধু নয়, এই বীজ থেকে উৎপাদিত চালের সুগন্ধ দীর্ঘদিন অবিকৃত থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE