Advertisement
১৯ মে ২০২৪

পুজো-বাজারে পাশেই কেপমার

ঘড়ির মোড় ডান দিকে রেখে, ব্যানার্জি কেবিন ছাড়িয়ে, ভিড় ঠেলে এগিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টকর। তবু আমড়াতলা গলির ইমিটেশন গয়নার হাতছানি এড়াতে পারেন না মেয়েরা। সেই ঠাসা ভিড়ের সুযোগ নিয়ে এক সুন্দরী তরুণী দিব্যি ‘ব্যাগ সাফাই’ করেছে একটি দোকানে। সিসি টিভির ফুটেজে ‘অপারেশনের’ ছবি ধরাও পড়েছে। দোকানের মালিক দেবাশিস দাস ঘটনার কথা পুলিশকে জানিয়েছিলেন।

অঙ্কন: সুমন চৌধুরী।

অঙ্কন: সুমন চৌধুরী।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৫৪
Share: Save:

ঘড়ির মোড় ডান দিকে রেখে, ব্যানার্জি কেবিন ছাড়িয়ে, ভিড় ঠেলে এগিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টকর। তবু আমড়াতলা গলির ইমিটেশন গয়নার হাতছানি এড়াতে পারেন না মেয়েরা।

সেই ঠাসা ভিড়ের সুযোগ নিয়ে এক সুন্দরী তরুণী দিব্যি ‘ব্যাগ সাফাই’ করেছে একটি দোকানে। সিসি টিভির ফুটেজে ‘অপারেশনের’ ছবি ধরাও পড়েছে। দোকানের মালিক দেবাশিস দাস ঘটনার কথা পুলিশকে জানিয়েছিলেন। পুলিশ হন্যে সেই সুন্দরীর খোঁজে। কিন্তু নিখুঁত ‘অপারেশন’ চালিয়ে ভিড়ে হারিয়ে-যাওয়া তরুণী এখনও ফেরার।

কেমন করে হচ্ছে কেপমারি?

জুতো, ব্যাগ, নকল গয়না, শাড়ি বা কুর্তি, যে জিনিসটা আপনি খুব মনোযোগের সঙ্গে দেখবেন, সেটাই কিন্তু ভাল লাগবে আপনার গা-ঘেঁষে দাঁড়ানো কোনও মহিলার। তারপর এক সময়ে তাঁর গায়ের ওড়না, বা শাড়ির আঁচল তিনি আপনার ব্যাগের উপর ফেলে দেবেন। তারপর নিখুঁত পেশাদারিত্বে ব্যাগের পেট কেটে ভিতরের দামী জিনিসপত্র হাতিয়ে নেবেন তিনি। ব্যাগের মধ্যে থেকে মূল্যবান জিনিস হাতিয়েই সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ের মধ্যে থাকা তার সহযোগীর হাতে তা পৌঁছে দেবেন মহিলা। আপনার জিনিসপত্র কয়েক হাত ঘুরে দোকানের বাইরের ভিড়ের মধ্যে মিশে যাবে। তারপর সেই তরুণীরা ভিড়ে মধ্যে হারিয়ে যাবে। আপনি হয়তো তখনও ভাবছেন, ঘন সবুজ না কি ফিকে গোলাপি, কোনটা বেশি মানাবে আপনাকে।

চুঁচুড়ার ওই নকল গয়নার দোকানের সিসি টিভি ফুটেজে ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ওই তরুণী খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পাশের মহিলার হাতের উপর দিতে তার গাঢ় লাল রঙের ওড়নাটি ফেলে দিল। তারপর তার হাতের ফাঁক দিয়ে হাত গলিয়ে দিয়ে দুই আঙুলের ‘টিপনির’ মধ্যে থাকা ব্লেড চালিয়ে দিল। তারপর তার বড় হাত ব্যাগের ভিতরে থাকা পয়সার ব্যাগ-সহ অন্যান্য জিনিস খুব দক্ষতার সঙ্গে বের করে পাশের সহযোগী এক মহিলার হাতে চালান করে দিল।

দীর্ঘদিন ধরে যথেষ্ট পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করা এমন পুলিশ কর্তাদের মত, এইসব অবাঞ্ছিত ঘটনা কিন্তু একটু সর্তক হলেই এড়ানো যায়। তা না হলে পুজোর মুখে কলকাতা-সহ জেলা সদর এবং শহরাঞ্চলের ভিড়ে এইসব মেয়েরা মিশে থাকছে। তাদের ‘ব্যাক-আপ’ (সাহায্য) করার জন্য পেশাদার ছেলেরা থাকছে। কেন না যে ভিড়ে মুখ্যত মেয়েরা থাকেন, সেখানে ছেলেরা থাকে না। আর যদি যেতে হয়, তা হলে স্ত্রী, বোন বা বান্ধবীদের নিয়ে দোকানে যান ওই পেশাদার পুরুষ কেপমাররা। অর্থাৎ সুন্দরী তরুণী থেকে সুখী পরিবার, সবই এখন ‘সন্দেহজনক’-এর তালিকায়।

পুজোর সময়ে ভিড়ের সুযোগে হাতসাফাই করতে বাইরে থেকে প্রচুর দুষ্কৃতী শহরে আসে। সোনার গয়না বা অন্য মূল্যবান জিনিস টার্গেট করে তারা। এরা জানে, প্রচুর ভিড়ের চাপে নিরাপত্তা রক্ষীদের পক্ষে সব দিকে নজর রাখা সম্ভব নয়।

কেপমারির এই ব্যাপক জাল থেকে মুক্তির উপায় কী? তার কিছু টিপস দিচ্ছেন হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী।

কোনও কিছু পছন্দ করে কেনার সময়ে আশপাশের দিকে নজর করেন না অনেকে। সমস্ত মনোযোগ থাকে সামনের সামগ্রীর প্রতি। এটা ঠিক নয়। সর্তকতা জরুরি। নিজের ব্যাগ, মোবাইল সব সময়ে সামলে রাখুন।

একজন যখন কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকবেন, তখন তাঁর সঙ্গীদের বাড়তি সর্তকতার সঙ্গে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। কাউন্টার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে পাশের লোকজনের উপর নজর রাখা দরকার। সন্দেহের কিছু দেখলেই সঙ্গীকে সজাগ করে দূরে সরিয়ে দিতে হবে।

সন্দেহজনক কিছু মনে হলে দোকানের নিরাপত্তা কর্মীদের ডেকে বিষয়টি নজরে আনবেন।

পুজোর সময় প্রথমত চোখ কান খোলা রেখে কেনা বা পথেঘাটে চলাচল করতে হবে।

অনেকের অভ্যাস পয়সার ব্যাগ বা মোবাইল প্যান্টের পিছনের পকেটে, বা ব্যাগের বাইরের পকেটে রাখা। নিরাপত্তার স্বার্থে প্যান্টের সামনের পকেটে, শার্টের ভিতরের পকেট, বা ব্যাগের ভিতরের পকেটে মূল্যবান জিনিস রাখাটা জরুরি।

এক সঙ্গে বেশি মার্কেটিং না করাই ভাল। একদিনে অল্প বাজার করুন। তাতে ঝুঁকির মাত্রা কিছুটা কমে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE