Advertisement
E-Paper

ডাকলে লোক আসছে না, সমস্যায় বিজেপি নেতারা

রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, “বিজেপি তার নিজস্ব গতিতে সাবলীল ভাবেই রয়েছে। যখন প্রয়োজন পড়বে, মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ বিজেপিকে দেখতে পাবে।”

বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:২১
এই সমস্যার কথা এর আগে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের গলাতেও শোনা গিয়েছিল।

এই সমস্যার কথা এর আগে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের গলাতেও শোনা গিয়েছিল। প্রতীকী ছবি।

দৃশ্য এক: জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনে ওবিসি মোর্চার বৈঠক সেরে গাড়িতে উঠছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কর্মীরা পিছনে ছুটছেন। স্লোগান দিচ্ছেন। শুভেন্দু দাঁড়ালেন। তার পরে বিরক্ত হয়ে কর্মী-সমর্থকদের বললেন, “কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে ভিড় হচ্ছে। কিন্তু এলাকায় পতাকা তোলার লোক নেই। বুথে লোক বসাতে না পারলে কিন্তু ভোটে জেতা যাবে না!’’ থামল স্লোগান। গাড়িতে উঠে গেলেন শুভেন্দু।

দৃশ্য দুই: হাজরায় দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও ‌শুভেন্দু অধিকারীর ‘মেগা’ সভা। যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে মহিলা মোর্চার এক কর্মী। সঙ্গে পোড় খাওয়া এক প্রৌঢ়। মহিলা বিরক্তির সঙ্গে জানাচ্ছেন আর দল করবেন না। কারণ? ভেতরে খালি ‘খেয়োখেয়ি’। প্রৌঢ় বোঝালেন, এমনটা থাকবেই। সব ছেড়ে দেওয়াটা সমাধান না।

দৃশ্য তিন: যুব মোর্চার দক্ষিণ কলকাতার এক নেত্রী চেয়ার ছেড়ে উঠে এগিয়ে এলেন দাঁড়িয়ে থাকা দুই যুবকের কাছে। এক জনের উদ্দেশে বললেন, ‘‘কী ব্যাপার, তোমার নামে এত অভিযোগ কেন? ডেঙ্গি নিয়ে বোরো অফিস ঘেরাও ছিল, যাওনি কেন?” উত্তরে যুবক বললেন, “খবরই পাইনি!” নেত্রীর পাল্টা তোপ, ‘‘তুমি মণ্ডলের নেতা। তুমি খবর পাওনি বললে চলবে? এ বার একটু সক্রিয় হও। পুরনোরা বসে গেলে হবে?”

চুম্বকে উপরের তিনটি দৃশ্য ধরলে বোঝা যাবে, নিচু তলায় কতটা অগোছালো রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। বুথ এবং মণ্ডল স্তরের নেতাদের সঙ্গে জেলা নেতাদের বোঝাপড়া যে তলানিতে, সে কথা পৌঁছেছে স্বয়ং সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডার কানে। কলকাতায় দলের রাজ্য দফতরে বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এই বিষয়টি তোলেন।

সম্প্রতি বিজেপির হাওড়া সদর সাংগঠনিক জেলার সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল। বৈঠকে হাওড়া সদর, হাওড়া গ্রামীণ ও শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। নেতারা জানান, ডাকলে লোক পাওয়া যাচ্ছে না। দলীয় বৈঠকে আসায় অনীহা ৬০-৭০ শতাংশের। ফলে নিচু তলায় কর্মসূচি নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ জানতে চান বনসল। এক নেতা জানান, জেলার নেতারা পছন্দের লোকেদের খবর দিচ্ছেন। কর্মসূচি বা বৈঠকের খবর পৌঁছচ্ছে না সবার কাছে। আবার খবর নিচু তলা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে নেতারা দায়িত্বশীল নন, এমন কথাও উঠে আসে। ক্ষিপ্ত বনসল জানান, খবর পৌঁছতে নেতাদের উদ্যোগের অভাব মেনে নেওয়া যায় না। কর্মীরা কর্মসূচিতে যোগ দিতে মুখিয়ে থাকেন। নেতারা তাঁদের কাছে পৌঁছতে পারেন না।

এই সমস্যার কথা এর আগে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের গলাতেও শোনা গিয়েছিল। রাজ্য বিজেপির পদাধিকারীদের বৈঠকে তিনি জানিয়েছিলেন, অনেক জেলাতেই সভা করতে গিয়ে দেখেছেন অর্ধেক লোকও আসেনি। সম্প্রতি দুই বর্ধমানে সাংগঠনিক বৈঠক করতে যান রাজ্য বিজেপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ধন্ড। লোক না হওয়ায় তিনি বিরক্ত হয়ে সভা বাতিল করে দেন বলে সূত্রের খবর।

এই পরিস্থিতি সামলাতে মাঠে নামতে হয়েছে শাহ, নড্ডাকে। রাজ্য নেতাদের শাহ স্পষ্টই জানিয়েছেন, নেতাদের সঙ্গে নিচু তলার কর্মীদের যোগাযোগ নেই। তাই আসন সংখ্যায় বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও রাস্তার আন্দোলনে ‘ঝাঁঝ’ নেই। নেতাদের নিয়মিত কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। নড্ডা দিল্লিতে সংসদীয় দলের বৈঠকে নতুন ও পুরোনো কর্মীদের একসঙ্গে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। সেই সঙ্গে এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি সময় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এখন দেখার— শাহ, নড্ডার নির্দেশের পরে নেতারা নিচু তলায় ‘সম্পর্ক’ তৈরিতে কী ব্যবস্থা নেন।

যদিও পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, “বিজেপি তার নিজস্ব গতিতে সাবলীল ভাবেই রয়েছে। যখন প্রয়োজন পড়বে, মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ বিজেপিকে দেখতে পাবে।”

BJP West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy