Advertisement
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
COVID 19

‘তিনি’ যে ও ঘরে কে তা জানত! সব রিপোর্ট নেগেটিভ, হাঁফ ছাড়ল বঙ্গ বিজেপি

বিজেপির তরফে প্রায় হাঁফ ছাড়ার ঢঙে এ বার জানানো হচ্ছে যে, সবার রিপোর্টই নেগেটিভ।

অমিত শাহ, স্বপন দাশগুপ্ত, বাবুল সুপ্রিয় ও অর্জুন সিংহ। ফাইল চিত্র।

অমিত শাহ, স্বপন দাশগুপ্ত, বাবুল সুপ্রিয় ও অর্জুন সিংহ। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ১৪:৫৮
Share: Save:

খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘরে যে ঘাপটি মেরেছে কোভিড, কে-ই বা জানতেন তখন? কেউই তো জানতেন না। জানার পরে বেশ উদ্বেগে কেটেছে গোটা একটা সপ্তাহ। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির সামনের সারির বেশ কয়েকজন মুখ-সহ যে আধ ডজন সাংসদ অমিত শাহের ঘরে ঢুকেছিলেন সম্প্রতি, গত এক সপ্তাহে তাঁদের সবারই কোভিড পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। বিজেপির তরফে প্রায় হাঁফ ছাড়ার ঢঙে এ বার জানানো হচ্ছে যে, সবার রিপোর্টই নেগেটিভ। আর মন্ত্রিসভায় অমিত শাহের সহকর্মী বাবুল সুপ্রিয় একধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘‘এ বার নিশ্চয়ই প্রমাণ হল, সামাজিক দূরত্ব বিধি আমরা প্রত্যেকে কতটা মেনে চলি।’’
২ অগস্ট গোটা দেশে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। টুইট করে সে দিন জানিয়েছিলেন যে, তিনি কোভিড পজিটিভ এবং কোনও উপসর্গ না থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অমিত শাহের এই টুইটে চাঞ্চল্য ছড়ায় রাষ্ট্রক্ষমতার সর্বোচ্চ অলিন্দে। শাহের ওই টুইটের আগের কয়েক দিনে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন বা বৈঠক করেছেন, এমন কেউকেটার সংখ্যাটা নেহাত কম ছিল না। ফলে তাঁদের সবাইকে অবিলম্বে কোয়রান্টিনে যাওয়ার এবং কোভিড পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

অমিত শাহের রিপোর্ট যে দিন পজিটিভ আসে, সেই তারিখ থেকে পিছিয়ে গেলে যত দিন পর্যন্ত বিপজ্জনক সময়সীমা বলে ধরে যেতে পারে, তত দিনের মধ্যে তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংযোগে অন্তত ২০০ জন এসেছিলেন বলে নর্থ ব্লক সূত্রের খবর। এঁদের মধ্যে বঙ্গ বিজেপির অন্তত ৬ জন ছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, ব্যারাকপুরের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি অর্জুন সিংহ, বিষ্ণুপুরের সাংসদ তথা রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ, কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক, রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার— এঁদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন অমিত শাহ।
বৈঠক সেরে বেরিয়ে কেউ জানিয়েছিলেন যে, প্রশাসনিক বিষয়ে কথা হয়েছে। কেউ জানিয়েছিলেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু অমিত শাহের সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির এই নেতাদের বৈঠকের আগে দিল্লিতে দলের সপ্তাহব্যাপী বৈঠক হয়েছিল। বঙ্গ বিজেপির সে বৈঠক বার বার উত্তপ্ত হচ্ছে বলে খবর আসছিল। এবং রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি যাঁদের ক্ষোভ রয়েছে, তাঁরাই শাহের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছেন বলেও জানা গিয়েছিল। তাই দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে মন্ত্রী-সাংসদরা যা-ই বলুন, কলকাতার মুরলীধর সেন লেনের কর্তারা সে সব কথাকে সম্ভবত সর্বৈব সত্য বলে ধরে নেননি। শাহের সঙ্গে আধ ডজন সাংসদের সাক্ষাৎ পর্বে ঠিক কী কথা হয়েছিল, তা নিয়ে নিয়ে উদ্বেগও বোধহয় খুব কম তৈরি হয়নি।

কিন্তু উদ্বেগ এক শিবিরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। অমিত শাহের করোনা হয়েছে জানা যেতেই উদ্বেগ তৈরি হয় উল্টো দিকেও। প্রত্যেকেই কোয়রান্টিনে বা সেল্ফ আইসোলেশনে চলে যান। কলকাতায় বা রাজ্যে ফেরার পরিকল্পনা প্রত্যেককেই বাতিল করতে হয়। ২-৩ দিন পর থেকে তাঁরা লালারসের নমুনা পরীক্ষা করাতে শুরু করেন। রবিবার জানা গিয়েছে যে, শুধু বঙ্গ বিজেপির এই নেতাদের নন, বিপজ্জনক সময়সীমার মধ্যে শাহের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংযোগে এসেছিলেন যে ২০০ জন, তাঁদের সকলেরই পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। ওড়িশার নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ছাড়া আর সবার রিপোর্টই নেগেটিভ। অতএব উদ্বেগে আপাতত ইতি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়ে থাকা বাঙালি নেতারা।

আরও পড়ুন: সংক্রমণ কমার লক্ষণ নেই, দেশে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪,৩৯৯

রবিবার বাবুল সুপ্রিয় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অমিতজির সঙ্গে যাঁদের বৈঠক হয়েছিল, তাঁদের কারও মধ্যেই কোনও উপসর্গ দেখা দেয়নি। তবু সতর্কতা বিধি মেনে আমরা কোয়রান্টিনে ছিলাম। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কেউই সংক্রামিত হননি।’’ বাবুলের কথায়, ‘‘এর থেকে প্রমাণ হল, দূরত্ব বিধি এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ মেনে চলাটা আমাদের কাছে কথার কথা নয়। আমরা অক্ষরে অক্ষরেই মেনে চলি। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও কর্মসূচি হোক বা বিজেপির বৈঠক, সবেতেই করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মেনে চলা হয়। সেই কারণেই অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেও তাঁর থেকে কারও মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায়নি।’’

প্রায় একই কথা বলেছেন অর্জুন সিংহও। শাহের সঙ্গে বৈঠক সেরে বাকিরা দিল্লিতে থাকলেও অর্জুন কিন্তু ছিলেন না। তিনি উত্তরপ্রদেশ চলে গিয়েছিলেন। রবিবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে অর্জুন সিংহ বলেন, ‘‘অমিতজির রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে জানার পরে আমি উত্তরপ্রদেশেই পরীক্ষা করিয়েছিলাম। আমার রিপোর্ট তখনই নেগেটিভ আসে।’’ অর্জুনের কথায়, ‘‘সংক্রমণ ছড়ানো সম্ভবও ছিল না। কারণ অমিত শাহের সঙ্গে আমরা যে দিন দেখা করতে গিয়েছিলাম, আমাদের সঙ্গে তাঁর অন্তত ১০ ফুট দূরত্ব ছিল। প্রত্যেকের সঙ্গেই প্রত্যেকের ১০ ফুট করে দূরত্ব ছিল। ফলে কারও থেকেই অন্য কারও সংক্রামিত হওয়া সম্ভব ছিল না। তবু চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে পরীক্ষা করিয়ে নিয়েছিলাম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

COVID 19 Bengal BJP Amit Shah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy