Advertisement
২১ মে ২০২৪

শব্দবাজির দাপটে জেরবার সারা রাজ্য

গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, কালীপুজোর চেয়ে দেওয়ালির রাতেই শব্দবাজি বেশি ফাটে। তাই বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন ছিল।

ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে আশপাশ। —নিজস্ব চিত্র।

ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে আশপাশ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৩৪
Share: Save:

কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপট টের পেয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। আশা করেছিলেন, বুধবার দেওয়ালির রাতে হয়তো প্রশাসনের সক্রিয়তা বাড়বে। কিন্তু খাস কলকাতাই হোক বা জেলা শহর, বুধবারও শব্দবাজির তাণ্ডবে নাজেহাল হলেন তাঁরা। কোথাও কোথাও অভিযোগ জানালে পুলিশের দেখা মিলেছে। কোথাও পুলিশ আপসের ‘পরামর্শ’ দিয়েছে!

গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, কালীপুজোর চেয়ে দেওয়ালির রাতেই শব্দবাজি বেশি ফাটে। তাই বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাস্তব বলছে, পুলিশ এখনও যথেষ্ট কঠোর নয়। উল্টে বুধবার শব্দবাজি বন্ধ করতে গিয়ে তাঁরাই নিগৃহীত হন।

পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্তের মতে, ‘‘২০১৫ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালত বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করতে বলেছিল। রাজ্য কিছুই করেনি। শুধু কালীপুজো-দেওয়ালির রাতে লোকদেখানো সক্রিয়তার অর্থ হয় না।’’ পুলিশকে দুষছেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও।

লালবাজারের হিসেব, শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ৭৭০ জন। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ২৪৬৭ কেজি শব্দবাজি। তবে অনেকেই বলছেন, কলকাতায় যেটুকু পুলিশের সক্রিয়তা চোখে পড়েছে, শহরতলিতে তা-ও ছিল না। হাবড়ায় শব্দবাজি ফাটাতে গিয়ে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নয়ন বিশ্বাস (১১) নামে এক বালকের। অবস্থা খারাপ হওয়ায় বৃহস্পতিবার তাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আনা হয়। ওখানে বাজির আগুনে জখম নিত্যানন্দ পাল ও অসিত মণ্ডল নামে দুই বালকও।

উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানেও কালীপুজো ও দেওয়ালিতে শব্দবাজির দাপট অব্যাহত ছিল। আসানসোলে বায়ুদূষণ সূচক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেও ছিল অস্বাস্থ্যকর। পশ্চিম মেদিনীপুর, খড়্গপুরেও একই অবস্থা। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে শব্দবাজি না ফাটলেও রাত পর্যন্ত তারস্বরে মাইক বেজেছে। তবে পাঁশকুড়া ও কাঁথিতে গত বছরের তুলনায় শব্দবাজির দাপট কম ছিল।
দীপাবলিতে উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, মালদহ, রায়গঞ্জ, বালুরঘাটের মতো শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় শব্দবাজির দাপটে গভীর রাত পর্যন্ত কান পাতা দায় ছিল। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন ৩২ জন। কারও চকোলেট বোমা ফাটাতে গিয়ে হাতে ফেটেছে, কারও হাতে তুবড়ি ফেটেছে। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে বাজিতে জখম ৫ জন চিকিৎসা করিয়েছেন। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের পিছনেও বাজি ফেটেছে। মালদহের জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষের অবশ্য দাবি, “যেখানেই অভিযোগ এসেছে, পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
দেওয়ালির রাতে হুগলির চুঁচুড়ায় জেলাশাসক এবং পুলিশ কমিশনারের দফতরের কাছেই শব্দবাজি ফেটেছে। জেলার নানা জায়গায় এর সঙ্গে ছিল ডিজের দাপট। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য লাগামছাড়া বাজি ফাটানোর কথা অস্বীকার করেছেন।
দু’দিনের অভিজ্ঞতার নিরিখে প্রশ্ন উঠেছে, আদালতের এত নির্দেশের পরেও কি নিষিদ্ধ বাজিরই জয় হল?
বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব নিষিদ্ধ বাজিকে জিতিয়ে দিল।’’ বাজি থেকে দূষণের দায় পুলিশ-প্রশাসনকে নিতে হবে, মন্তব্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক শীর্ষ কর্তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Air Pollution Sound Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE