E-Paper

জাতীয় গড়ের বাইরে থেকেই লড়াইয়ে বাংলা

দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরো গঠন হবে আজ, রবিবার। বয়স-নীতি মেনে বর্তমান পলিটব্যুরোর ৭ সদস্যের এ বার বিদায় নেওয়ার কথা।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:১৬
নিস্তরঙ্গ পার্টি কংগ্রেসেও ঈষৎ আলোড়ন উঠে গেল সম্মেলনের শেষ রাতে!

নিস্তরঙ্গ পার্টি কংগ্রেসেও ঈষৎ আলোড়ন উঠে গেল সম্মেলনের শেষ রাতে! —প্রতীকী চিত্র।

রোদে পোড়া দিনের শেষে জমিয়ে বৃষ্টি নেমেছিল তামিলনাড়ুর মন্দির নগরীতে। শহরে সিপিএমের নিস্তরঙ্গ পার্টি কংগ্রেসেও ঈষৎ আলোড়ন উঠে গেল সম্মেলনের শেষ রাতে!

দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরো গঠন হবে আজ, রবিবার। বয়স-নীতি মেনে বর্তমান পলিটব্যুরোর ৭ সদস্যের এ বার বিদায় নেওয়ার কথা। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে তাঁদের মধ্যে দু-এক জনকে ‘ব্যতিক্রম’ হি্সেবে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে দলের অন্দরে। সূ্ত্রে খবর, রাতে বিদায়ী পলিটব্যুরোর বৈঠকে সেই প্রস্তাব নিয়েই আপত্তি তুলেছেন শীর্ষ নেতাদের একাংশ। তাঁদের মধ্যে আছেন বাংলার নেতৃত্বও। তাঁদের যুক্তি, দল যখন আলোচনা করে বয়স-নীতি চালু করেছে, একেবারে শীর্ষ স্তর থেকে তার ‘ব্যতিক্রম’ রাখা ভাল দৃষ্টান্ত নয়। বিমান বসুর মতো সর্বজনগ্রাহ্য নেতা বা কৃষক আন্দোলনে সক্রিয় হান্নান মোল্লা পলিটব্যুরো থেকে অব্যাহতি নেওয়ার সময়ে তো ‘ব্যতিক্রমে’র দাবি ওঠেনি!

এর বিপরীত যুক্তিও অবশ্য আছে। পলিটব্যুরোর সদস্য বি ভি রাঘবুলুর বক্তব্য, ‘‘বয়স-নীতি যখন তৈরি হয়েছে, ব্যতিক্রমের সংস্থানও তখন রাখা হয়েছে। কোথায় কী ভাবে তার প্রয়োগ হবে, দলকে সেটা ঠিক করতে হবে।’’

পার্টি কংগ্রেসের শেষ পর্বে সংগঠন নিয়ে আলোচনায় অবশ্য প্রবল আত্মসমালোচনাই উঠে এসেছে। সাংগঠনিক রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের তুলনায় সিপিএমের সদস্য-সংখ্যা বেড়েছে ঠিকই কিন্তু ২০২২ বা ২০২৩ সালের হিসেব ধরলে, তার তুলনায় কিছুটা কমেছে! মোট ১১টি রাজ্যে রেখচিত্র পড়তির দিকে, ১৫টিতে তুলনায় ঊর্ধ্বমুখী। আন্দোলনের তীব্রতা এবং সব অংশের মানুষের কাছে সংগঠনকে নিয়ে যেতে না-পারার দায় নেতৃত্বের না নিচু তলায় কর্মীদের, সেই প্রশ্নেও বিতর্ক আছে। তবে সিপিএমের শীর্ষ স্তরের ব্যাখ্যা, যৌথ দায়িত্বেই দল চলে। সংগঠনের শু‌ধু বহর বাড়ালেই হবে না, গুণগত মানে নজর দিতে হবে। সদস্যপদের ক্ষেত্রে পাঁচ দফা শর্তের ছাঁকনি বিভিন্ন রাজ্যকে কড়া ভাবে প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে, তার জেরে সদস্য কিছু জায়গায় কমই হয়েছে।

সাংগঠনিক রিপোর্ট বলছে, মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৮% থেকে ২০% এবং তরুণদের ক্ষেত্রে ১৯.৫% থেকে ২২.৬%— এই সামান্য বৃদ্ধি হয়েছে গত তিন বছরে। সদস্যসংখ্যার নিরিখে কেরল ও বাংলার পরে এখন তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে তামিলনাডু। আবার ত্রিপুরার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে তেলঙ্গানা! তরুণ ও মহিলা সদস্যের ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে সিপিএমে যে সামান্য বৃদ্ধির প্রবণতা, বাংলায় দেখা যাচ্ছে তার উল্টো ছবি। আন্দোলনে ছাত্র ও যুবরা সামনের সারিতে থাকলেও দলে অন্তর্ভুক্তির হার তাদের সামান্য কমেছে।

বাংলার তরফে দেবব্রত ঘোষ, জাহানারা খান ও সৈয়দ হোসেন সাংগঠনিক রিপোর্টের উপরে আলোচনায় বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। অন্য রাজ্যের প্রতিনিধিরাও মানছেন, বাংলায় ঘুরে দাঁড়াতে না-পারলে সামনে এগোনো কঠিন সিপিএমের।

কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এ বার বিদায় নেওয়ার কথা সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব, রেখা গোস্বামী ও অঞ্জু করের। সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত, তাঁদের জায়গায় দুই মহিলা মুখ-সহ যে চার জনকে ভাবা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ফের এক জেলা সম্পাদককে দেখা যেতে পারে!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM Left

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy