বাসুদেব আচারিয়ার পর এ বার অমিয় পাত্র। বাঁকুড়ার আর এক শীর্ষ সিপিএম নেতার উপর হামলার অভিযোগ উঠল পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে।
সিমিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির কমিটির সদস্য এবং বাঁকুড়া জেলার প্রাক্তন সম্পাদক অমিয়বাবুর বাড়ি বাঁকুড়ার তালড্যাংরায়। অভিযোগ, শনিবার সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ তাঁর বাড়িতে ৫০-৬০ জনের একটি সশস্ত্র দুষ্কৃতী দল সদর দরজা ভেঙে ঢুকে বেধড়ক ভাঙচুর চালায়। জেলা পরিষদ থেকে সমস্ত সিমিএম প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে হবে, এই দাবি তুলে তারা জানলা-দরজার কাচের পাশাপাশি তারা ফ্রিজ, এসি মেশিন, সাইকেল, জিমের জন্য ব্যবহৃত ওয়াকার, ইলেকট্রিকের সমস্ত সরঞ্জাম, ইনভার্টার, সুইচ বোর্ড ভেঙে দেয়। অমিয়বাবু এবং তাঁর স্ত্রীকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। সঙ্গে অকথ্য গালিগালাজ এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি। পাত্র দম্পতি কোনও রকমে দোতলার একটি ঘরে ঢুকে ছিটকিনি আটকে প্রাণে বাঁচেন। সিমিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকেরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যদিও শাসকদল তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সব উড়িয়ে দিয়েছে।
বাড়ির সদর দরজায় ছিটকিনি লাগানো ছিল। সেই দরজা অনেকে মিলে ধাক্কা দিয়ে ভেঙে দুষ্কৃতীরা বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ে বলে অমিয়বাবুর অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘আমি তখন বাড়ি থেকে বেরবো বলে তৈরি হচ্ছি। সেই সময় ৫০-৬০ জনের একটি সশস্ত্র দল বেপরোয়া ভাবে ইট-পাটকেল ছুড়তে ছুড়তে বাড়ির ভিতর ভেঙে ঢুকে পড়ে। আমাকে শাসানি দেওয়া হতে থাকে, জেলা পরিষদের সব প্রার্থী তুলে নিতে হবে। না হলে আমাকে মেরে ফেলা হবে।’’ অমিয়বাবুর দাবি, এই সময় তিনি প্রাণে বাঁচতে স্ত্রীকে নিয়ে দোতলার একটি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। ফোন করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহকে। কমিশনার বিষয়টি দেখছেন বলে ফোন রেখে দেন। ১০-১২ মিনিট ধরে তাণ্ডব চালানোর পর অমিয়বাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। অমিয়বাবুর কথায়, ‘‘ওরা বেরিয়ে যেতে যেতে বলল, প্রার্থী না তুললে আমরা আবার আসব। ছাড়ব না। তার পর কাউকে একটা ফোন করে বলে, আমাদের অপারেশন শেষ। আপনারা আসতে পারেন।’’ সিপিএম নেতার দাবি, ওই ফোনটি পুলিশকেই করা হয়েছিল। কারণ, তার পরেই পুলিশ আসে।
আরও পড়ুন: বাধা দিলে বাধবে লড়াই, মরতে হবে, দিলীপকে চ্যালেঞ্জ পার্থর
জেলা সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে, বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমা এলাকায় জেলা পরিষদে মোট আসন ১৫। কিন্তু, সিপিএম ১৪টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। তালড্যাংরা ব্লক থেকে দু’টি আসনের মধ্যে একটি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। যিনি দিয়েছেন, সেই অঞ্জলি মান্ডি এই ব্লকের নন। তিনি মনোনয়ন তুলে নিলে তালড্যাংরা ব্লকের কোনও বুথেই আর ভোটের প্রয়োজন হবে না। শাসক দল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাবে। সেই কারণেই এ সব করা হয়েছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। অমিয়বাবুর কথায়, ‘‘দুষ্কৃতীদের অনেককেই চিনতে পেরেছি। ওরা শাসকদলের লোক। কিছু বাইরের লোকও ছিল।’’
তবে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই।’’
জেলা পুলিশের এক কর্তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার কথা শুনেছি। অমিয়বাবুকে লিখিত ভাবে অভিযোগ করার কথাও বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলেই তদন্ত শুরু হবে। ওই বাড়িতে পুলিশি প্রহরাও বসানো হয়েছে। অমিয়বাবু জানিয়েছেন, তিনি এ দিন বিকালের মধ্যে লিখিত অভিযোগ করবেন।
এর আগে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাসুদেব আচারিয়াকে পুরুলিয়ার কাশীপুরে আক্রমণ করা হয়। বীরভূমের নলহাটিতে আক্রমণ করা হয় কেন্দ্রীয় কমিটির আর এক সদস্য রামচন্দ্র ডোমকে। মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy