Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
জঙ্গিপুরে অশান্তি • রঘুনাথগঞ্জে দুষ্কৃতী তাণ্ডব

শাসকের লাঠি পুলিশের হাতে

পঞ্চায়েতের মনোনয়ন ঘিরে তৃণমূলের ‘শাসন’ ও পুলিশের, কখনও নির্বিকার কখনও বা নিস্পৃহ ভূমিকা নিয়ে অভিযোগটা উঠছিল বিভিন্ন জেলা থেকে।

মারমুখী: মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

মারমুখী: মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৫৫
Share: Save:

আঙুলটা উঠছিল প্রথম দিন থেকেই। শুক্রবার, সেটা একেবারে ‘নির্লজ্জ’ হয়ে উঠল বলেই মনে করছেন বিরোধীরা।

পঞ্চায়েতের মনোনয়ন ঘিরে তৃণমূলের ‘শাসন’ ও পুলিশের, কখনও নির্বিকার কখনও বা নিস্পৃহ ভূমিকা নিয়ে অভিযোগটা উঠছিল বিভিন্ন জেলা থেকে। শুক্রবার, মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে সেই পুলিশকেই একেবারে ‘সক্রিয়’ হতে দেখা গিয়েছে বলে সমস্বরে দাবি করছে বিরোধীরা। তবে, উর্দিধারীদের চেনা চেহারায় নয়, কংগ্রেসের প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক মইনুল হক মনে করাচ্ছেন, ‘‘পুলিশ ছিল তৃণমূলের অতি-সক্রিয় কর্মীর ভূমিকায়!’’

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে সেই সক্রিয় পুলিশের চড় খেলেন মনোয়নপত্র জমা দিতে আসা সিপিএম প্রার্থীর প্রস্তাবক। এ দিন, জঙ্গিপুরে দলের জেলা পরিষদ প্রার্থী হাসিনা খাতুনকে নিয়ে এসডিও অফিসে মনোনয়ন তুলতে গিয়েছিলেন রাজেশ শেখ। বের হতেই তাঁদের দিকে এগিয়ে আসেন এক পুলিশ অফিসার। হাসিনা বলছেন, ‘‘আমার সামনেই পুলিশ রাজেশকে সপাটে চড় কষাল। পড়ে যেতেই তার কলার ধরে টেনে তুলে কনুইয়ের গুঁতো আর লাঠি পেটা করতে করতে পুলিশ বলল, ‘এক্ষুনি পালা!’’ কাগজপত্র কেড়ে প্রায় গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় তাঁদের। এর পরেই লালগোলা–জঙ্গিপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ শুরু করে সিপিএম। তবে, জেলা পুলিশের এক মুখপাত্র নির্বিকার গলায় জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এমন ঘটনাই ঘটেনি।’’

ইসলামপুরে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।

অবরোধের মধ্যেই রঘুনাথগঞ্জ শহরে মনোনয়ন জমা দিতে আসা বিরোধীদের উপরে রীতিমতো বন্দুক উঁচিয়ে তেড়ে যেতে দেখা যায় পুলিশকে। বিজেপির অভিযোগ, সকালে কয়েকশো কর্মী নিয়ে এসডিও অফিসের কাছাকাছি আসতেই প্রথমে পাঁচিল তোলে দুষ্কৃতীরা। তাদের সকলের হাতেই ছিল খেটো বাঁশ আর আর রং বেরঙের উইকেট। ধাক্কাধাক্কি শুরু হতেই পিছন থেকে একেবারে বন্দুক উঁচিয়ে তেড়ে আসে পুলিশ। তার পর রে রে করে তাদের এলাকা ছাড়া করে। বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ শূন্যেও গুলি ছুড়েছে। মিনিট পনেরোর মধ্যেই সুনসান রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় খান কয়েক পরিত্যক্ত চপ্পল।

হাতিয়ার: প্রকাশ্যে বোমা হাতে দুষ্কৃতী। রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদ সভাপতি সুজিত দাস বলছেন, ‘‘দেখলেন তো কী ভাবে পুলিশকে নিয়ে এলাকা ছাড়া করল!’’ ঘণ্টাখানেক পরে, সিপিএম মনোনয়ন জমা দিতে এলে একই ব্যবহার পায় পুলিশের কাছে। সিপিএমের প্রধান দলীয় দফতরে পুলিশের সামনেই বোমা ছুড়তে থাকে তৃণমূল কর্মীরা। সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুলিশকে তো উর্দি পরা তৃণমূল-কর্মী ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না।’’

আরও পড়ুন: তিন জেলায় তিন পদস্থ পুলিশকর্তা

সিপিএমের এক স্থানীয় নেতা বলছেন, ‘‘বোমায় ছত্রখান রঘুনাথগঞ্জ ব্যাঙ্ক মোড় যখন ধোঁয়াচ্ছন্ন, তখন শুনছি, পুলিশের এক কর্তা জিপে বসে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের বলছেন, ‘আর ছুড়িস না। সব পালিয়ে গিয়েছে’!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE