Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Bengal Panchayat Election 2018

বাঁকুড়ায় ‘জয় শ্রীরাম’ বলে সিপিএমের মিছিলে ঝাঁপাল তৃণমূল

এ দিন সকালে বাঁকুড়া সদরে মহকুমা শাসকের দফতরে সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন দলের প্রার্থী ও কর্মীরা।  

বাঁকুড়ায় সিপিএমের মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ছবি: রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাঁকুড়ায় সিপিএমের মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ছবি: রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ ১৩:১৪
Share: Save:

একই জমায়েত থেকে ‘মমতা ব্যানার্জি জিন্দাবাদ’ এবং ‘জয় শ্রীরাম’ আওয়াজ উঠল বাঁকুড়ায়। আর এ ভাবেই শনিবার শাসকদলের বাহিনী সিপিএমের মিছিলে হামলা চালাল বলে অভিযোগ।

এ দিন সকালে বাঁকুড়া সদরে মহকুমা শাসকের দফতরে সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন দলের প্রার্থী ও কর্মীরা।

মহকুমা শাসকের দফতরের কিছুটা আগেই কয়েকশো লোক মুখে রুমাল বেঁধে, মাথায় হেলমেট পরে আগে থেকেই জমায়েত হয়েছিল। অভিযোগ, সিপিএমের প্রার্থী ও কর্মীরা মহকুমা শাসকের দফতরে ঢুকতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ‘জয় শ্রীরাম’ আওয়াজ তুলে সিপিএমের লোকজনদের ঘিরে ধরে। তার পরই শুরু হয় রড, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর।

আরও পড়ুন: শাসকের লাঠি পুলিশের হাতে

মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও হামলা ঠেকাতে কোনও পুলিশ কোনও ভূমিকা নেয়নি বলে অভিযোগ সিপিএমের। পুলিশের সামনেই মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয় সিপিএম প্রার্থী ও কর্মীদের। সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূলের গৈরিকীকরণ সম্পূর্ণ হল। আক্রমণ করতে করতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা মুখে জয় শ্রীরাম শ্লোগান দিচ্ছিল।পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাদের উপরে হামলা চালিয়েছে। ওরা এসডিও, ডিএম অফিস শুধু নয়, পুলিশ সুপারের অফিসও দখল করে রেখেছে।”

আরও পড়ুন: আগে দখল, পরে মার, আজব ভোট

বাঁকুড়ায় সুজন চক্রবর্তী, অমিয় পাত্রদের মিছিলে হামলার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

আবার সিপিএম নেতা অমিয় পাত্র বলেন, “একটা এমন পরিস্থিতি যে আমরা কোথায় গিয়ে অভিযোগ করব সেটাই বুঝতে পারছি না। ডিএম অফিস, এসডিও অফিসে আমরা যেতে পারছি না। কৌশল করে এই সময় হাইকোর্টও বন্ধ করে রেখে দিয়েছে।” যদিও জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এই হামলার দায় অস্বীকার করেছে।

শুক্রবারেও বিজেপি নেতাদের উপর একই ভাবে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মহকুমা শাসকের দফতরে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সংগঠন সম্পাদক শ্যামাপদ মণ্ডলেরা মনোনয়ন নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু দফতরে ঢোকার আগেই গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে জয় শ্রী রাম ধ্বনি তুলতে তুলতে হেলমেট পরা, মুখ ঢাকা এক দল লোক তাঁদের মাটিতে ফেলে মারধর করে, গাড়ি ভাঙচুর চালায়।

কান্দি থানায় অভিযোগ জানাতে যান অধীর চৌধুরী। ছবি: কৌশিক সাহা।

অন্য দিকে, মুর্শিদাবাদের কান্দি এবং বড়ঞাতে কংগ্রেস কর্মীদের উপর তৃণমূল হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর মিছিলেও। এ দিন সকাল সাড়ে ১০ নাগাদ মহকুমা শাসকের দফতরে প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাচ্ছিলেন অধীর চৌধুরী। সেই সময় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীবাহিনী প্রার্থীদের উপর আচমকাই চড়াও হয়ে মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। তাঁদের হাত থেকে কাগজপত্র কেড়ে নেয় ওই দুষ্কৃতীরা। ফলে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। এই হামলা প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী বলেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী দেখিয়ে দিলেন কী ভাবে ভোট করতে হয়। তিনি সারা পশ্চিমবাংলা দখল করতে চান।” কটাক্ষ করে বলেন, “এমনি হয় না, সঙ্গে আবার পুলিশ! একা রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর।” নির্বাচন যে প্রহসনে পরিণত হয়েছে সে অভিযোগও তুলেছেন অধীর। এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পরে তিনি কান্দি থানায় যান।

শুধু কান্দি নয়, বড়ঞাতেও কংগ্রেস কর্মীদের মারধর, বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। বড়ঞা ব্লক অফিসের সামনে, ডাকবাংলো মোড় এবং বাহাদুর মোড়ে ব্যাপক বোমাবাজি চলে।

কান্দিতে বিজেপির মিছিল। ছবি: কৌশিক সাহা।

সিউড়িতে মনোনয়ন দিতে পারেনি বিজেপি। অভিযোগ এ দিন সকালে মহকুমা শাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য আসছিল বিজেপির প্রার্থী ও কর্মীরা। অভিযোগ, মহকুমা শাসকের দফতরে ঢোকার আগেই বিজেপির কর্মীদের তাড়া করে এক দল লোক। তাদের প্রত্যেকের মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা ছিল। রড, লাঠি দিয়ে বিজেপির লোকজনকে মারধর করে। জেলা বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, হামলা চালাবে আগে থেকেই প্রস্তুত নিয়েছিল তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। তাঁদের কর্মীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গেলে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বীরভূমের মহম্মদবাজারেও এ দিন মনোনয়নকে ঘিরে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বিজেপির মিছিল লক্ষ্য করে গুলি, বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

তথ্য সহায়তা: রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দয়াল সেনগুপ্ত, কৌশিক সাহা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE