Advertisement
২১ মে ২০২৪

ধরপাকড়ে ‘আমরা-ওরা’, নালিশ বিজেপির

যে ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের ২০ জন বিজেপির, ৬ জন সিপিএমের। তৃণমূলের একজনও নেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৫:১৬
Share: Save:

মনোনয়ন নিয়ে শনিবার উত্তাল হয়ে উঠেছিল বীরভূমের মহম্মদবাজার। যে ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের ২০ জন বিজেপির, ৬ জন সিপিএমের। তৃণমূলের একজনও নেই। ওই দিনই কোচবিহারের মাথাভাঙায় বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে ৫ জনকে হাজতে পুরেছে পুলিশ। সকলেই বিজেপির। কিন্তু তৃণমূলের কেউই গ্রেফতার হচ্ছেন না কেন? জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, তদন্ত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যা শুনে বিরোধীদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের মুখে প্রশাসন ‘আমরা-ওরা’ নীতি নিয়ে চলছে। শাসক দলের কেউ অভিযুক্ত হলে প্রশাসন খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া ছাড়া আর কি‌ছুই করছে না। কিন্তু বিরোধীদের ক্ষেত্রে অভিযোগ হলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে।

বিরোধীদের দাবি, বীরভূমে প্রশাসন মাওবাদী তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। বীরভূমের পুলিশ সুপার নীলকান্তম সুধীর কুমার মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ফোনই ধরছেন না। এসএমএসের জবাবও মিলছে না। তবে, বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলে দিচ্ছেন, ‘‘শনিবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পুলিশ সেটাই করছে।’’ যা শুনে সিপিএমের প্রশ্ন, তদন্ত আদৌ হচ্ছে কি? কারণ, নলহাটিতে শুক্রবার তাদের মিছিলে তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনী হামলা চালানো সত্ত্বেও কাউকে পুলিশ ধরেনি।

এই একই অভিযোগ বিজেপি তুলেছে উত্তর দিনাজপুরেও। রায়গঞ্জে বুধবারের গোলমালে তিন জনকে পুলি‌শ ধরেছে। কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় পুলিশ জানাতে চায়নি। বৃহস্পতিবার ইটাহার বিডিও অফিসে বিজেপির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে তৃণমূল বাধা দিয়েছে বলে দাবি ওঠে। তৃণমূলের কেউই গ্রেফতার হননি। সে দিনই বিজেপির কর্মীদের বিরুদ্ধে বিডিও অফিস ভাঙচুর, পুলিশকর্মীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় চার বিজেপিকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই দিনে রায়গঞ্জের সুভাষগঞ্জে বিজেপির এক কর্মীর বাড়িতে আগুন দেয় দুষ্কৃতীরা। তৃণমূলের নাম জড়ায়। তাতেও আবার কোনও গ্রেফতার নেই। শুক্রবার রাতে এই জেলারই কালিয়াগঞ্জে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষ আক্রান্ত হন। তার পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে বলে তৃণমূলের দাবি। সেখানে বিজেপির সাত কর্মীকে ধরা হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দামের বক্তব্য, ‘‘বিজেপির নাম জড়ালে পুলিশ সক্রিয় হয়ে উঠছে। তৃণমূলের ক্ষেত্রে একেবারেই নিষ্ক্রিয়।’’

কোচবিহারেও পুলিশ অসহযোগিতা করছে বলে বিরোধীদের দাবি। প্রাক্তন বিধায়ক তমসের আলি ও তাঁর স্ত্রী মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে তুফানগঞ্জে তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হন। তাঁরা পুলিশের কাছে অভিযোগ পর্যন্ত জানাতে পারেননি বলে দাবি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়ের বক্তব্য, ‘‘পুলিশ আসলে দলদাসে পরিণত হয়েছে।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “আমরা সব অভিযোগ নিচ্ছি। তার মধ্যে অনেকগুলি মিথ্যে থাকে। তদন্ত করে দেখেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘‘সব জায়গাতেই দেখছি, আইন বিরোধীদের জন্য এক রকম, আর তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের জন্য অন্য রকম। গণতন্ত্রের রক্ষকই ভক্ষক!’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য পুলিশ ঠিক ভূমিকা পালন করছে বলে দাবি করেন। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতারও বক্তব্য, প্রশাসনের কাজ প্রশাসন করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE