সবে ভোট শুরু হয়েছে তখন। সকাল-সকাল ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে। এমন সময়ে শুরু হল বোমাবাজি। ভয়ে পালাতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন কেউ। কারও গায়ে লাগল বোমার স্প্লিন্টার। এরই মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়লেন একজন।
সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙ্গার পাঁচপোতায় বোমার আঘাতে খুন হলেন সিপিএম কর্মী তহিবুর গায়েন (২৯)। আহত আরও একজন। বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থীর হয়ে এ বার পঞ্চায়েত ভোটের কাজ করছিলেন তহিবুর। তাঁর পরিবার ও নির্দল সমর্থকদের অভিযোগ, তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই বোমা মেরে খুন করেছে তহিবূরকে। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বোমাবাজি করতে গিয়ে হাতে বোমা ফেটে প্রাণ গিয়েছে ওই যুবকের।
বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পরে ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয় ওই কেন্দ্রে। তবে আগের মতো ভিড় ছিল না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে।’’ দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে।
২০১৩ সালে ওই পঞ্চায়েতে ১৬৮ ভোটে জয়ী হয়েছিল সিপিএম। এ বার ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের হয়ে লড়াই করছেন বাবলু মল্লিক। তাঁর বিরুদ্ধে বামেদের সমর্থন নিয়ে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন আব্দুল কাদের। কাদেরের হয়েই প্রচার করছিলেন তহিবুর।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ দিন সকালে শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট চলছিল পাঁচপোতার এফপি স্কুলে। স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘হঠাৎই বুথের বাইরে পর পর তিনটে বোমা পড়ল। প্রচণ্ড শব্দ আর ধোঁয়ার ভরে গেল এলাকা। ভয়ে সকলে ছুটোছুটি করতে থাকে। আরও বোমা ফাটতে থাকে।’’ বুকে, হাতে আঘাত পেয়েছিলেন তহিবুর। কল্যাণী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন বাসিন্দারা। কিন্তু তার আগেই মারা যায় যুবকের।
আমডাঙার তৃণমূল বিধায়ক রফিকুর রহমানের দাবি, ‘‘কোনও খুন হয়নি। নিজেই বোমা বাঁধতে গিয়ে মারা গিয়েছেন ওই ব্যক্তি।’’
এ দিন এলাকায় সংবাদসংগ্রহে গেলে বার বার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে সশস্ত্র বাইকবাহিনী। তির-ধনুক হাতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাহারা দিচ্ছিল মুখে কাপড় বাঁধা যুবকেরা। গোটা এলাকা থমথমে।
ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছিলেন তহিবুরের স্ত্রী। বাবা মুস্তাফা গায়েন বলেন, ‘‘সকলেই ওকে ভালবাসত। আমাদের গোটা পরিবার আগাগোড়া সিপিএম করি। সে জন্য এত বড় মাসুল গুণতে হবে, কে জানত!’’