Advertisement
E-Paper

পঞ্চায়েত: পুলিশের সামনেই বোমা-গুলি-লাঠি, হামলা চলছেই

এ দিন সব থেকে বেশি অশান্তির খবর এসেছে মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া এবং বীরভূম থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৪:৩৩
মনোনয়নকে ঘিরে অশান্তি। পুলিশের সামনেই লাঠি, ইট, বোমা নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদে। নিজস্ব চিত্র।

মনোনয়নকে ঘিরে অশান্তি। পুলিশের সামনেই লাঠি, ইট, বোমা নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদে। নিজস্ব চিত্র।

কয়েক দিন ধরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে চলতে থাকা অশান্তি, হাঙ্গামা থেমে নেই শুক্রবারও। কখনও পুলিশের সামনে, কখনও আবার পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই বিরোধীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ দিন সব থেকে বেশি অশান্তির খবর এসেছে মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া এবং বীরভূম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় থেকে।

মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে মিছিল করে মহকুমা শাসকের দফতরে যাওয়ার সময় বিজেপি নেতা-কর্মীদের উপর বোমা নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ বিজেপির মিছিল মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে আসতেই সেই মিছিল লক্ষ্য করে পর পর ১৫টি বোমা ছোড়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। আরও অভিযোগ, একের পর এক বোমা ফেলেছে ওই দুষ্কৃতীরা, অথচ পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। হামলার মুখে পড়ে বিজেপির লোকজনেরা পিছিয়ে যায়। তার পরেও বোমা মারা হয় বলে অভিযোগ।

বিজেপির অভিযোগ, তাদের উপর হামলা চালানো হল, অথচ তাদের লোকজনকেই পুলিশ সেখান থেকে মেরে তাড়িয়েছে। এ দিনের হামলায় বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক জন সাংবাদিকও। বিজেপির উপর হামলা চালানোর পরই ওই দুষ্কৃতীরা মহকুমা শাসকের দফতর থেকে ৫০০ মিটার দূরে সিপিএমের একটি দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর করে, বোমা মারে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন সিপিএমের এক নেতা।

আরও পড়ুন: ভোট আছে, হিংসা আছে, নেই সেই পঞ্চায়েত

বোমা নিয়ে হামলা। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সিপিএমের উপরেও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকে এ দিন বিডিও অফিসে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাচ্ছিলেন সিপিএমের পাঁচ জনের একটি প্রতিনিধি দল। সেই সময় তাঁদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। মারধরের পর তিন জনকে আটকে রাখা হয়ে বলে অভিযোগ।

রঘুনাথগঞ্জে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হামলার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: ভোট আছে, হিংসা আছে, নেই সেই পঞ্চায়েত

ফলে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেনি সিপিএম। অন্য দিকে, নবগ্রাম ব্লকে কংগ্রেস ও সিপিএমের লোকেরা মনোনয়ন পত্র জামা দিতে গেলে পুলিশের সামনেই ইট, লাঠি এবং বন্দুক নিয়ে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।

বিরোধীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে বাঁকুড়াতেও। যে ভাবে বিজেপির কর্মী ও নেতারা বাঁকুড়া জেলায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তা নিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি জানাতে এ দিন সকালে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সংগঠন সম্পাদক শ্যামাপদ মণ্ডল-সহ বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল জেলাশাসকের দফতরে গিয়েছিলেন।

মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে পুলিশের সামনেই হামলা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

অভিযোগ, সেখানে বিজেপির প্রতিনিধি দলটি পৌঁছতেই তাঁদের উপর হামলা চালায় তৃণমূলের লোকজন। বিজেপির প্রতিনিধিরা আসছেন সেটা আগাম জানতে পেরেই জেলাশাসকের দফতরের বাইরে জমায়েত হয়েছিল তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামাপদ মণ্ডলদের গা়ড়ি পৌঁছতেই ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে তাঁদের গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করা হয়। মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারা হয় শ্যামাপদ মণ্ডলকে।

বাঁকুড়ায় জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিজেপি নেতাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর। ছবি: রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুধু তাই নয়, পুলিশের সামনেই তাঁদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও পরে পুলিশ ওই বিজেপি নেতাদের উদ্ধার করে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পরে জেলাশাসকের দফতরে আসেন জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা।

মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে হামলায় আহত কংগ্রেস কর্মী সাজিদ শেখ। ছবি: শুভাশিস সৈয়দ

এ দিনের হামলা প্রসঙ্গে জেলার সাংগঠনিক সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, “জেলাশাসকের দফতরের সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের লোকেদের মারধর করেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এ রাজ্যে গণতন্ত্র বলে যে কিছুই নেই তা ফের প্রমাণ হল।” যদিও এ দিনের হামলায় তাদের কোনও যোগ নেই বলেই জানিয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরে। ছবি: সফি ইসলাম।

এ দিন পুরুলিয়ার কাশীপুরেও সিপিএম নেতা এবং প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার উপরও হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দল এবং দলীয় নেতার উপর তৃণমূলের হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি রাজ্যের সর্বত্র এই হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ডাক দেন।

নলহাটিতে এ দিন সকালে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন সিপিএম নেত্রী বৈশাখী দাস মহলদার। অভিযোগ, তাঁকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয় তৃণমূলের বাইকবাহিনী। জমা দিতে দেওয়া হয়নি মনোনয়ন পত্রও।

মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে বিজেপির মিছিলে হামলার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

পরে বিজেপি কর্মীরা গেলে তাঁদেরও তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর পর বিজেপি কর্মীরা দালীয় কার্যালয়ে জমায়েত হন। সে সময় রামপুরহাটের এস়ডিপিও মিতুন কুমার দে বিজেপি কর্মীদের গিয়ে বলেন, দল বেঁধে নয়, এক এক করে মনোনয়ন জমা দিয়ে আসতে।

রঘুনাথগঞ্জে বিজেপির মিছিলের উপর বোমা নিয়ে হামলা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বিজেপির কর্মীদের সঙ্গে যখন এ বিষয়ে কথা বলছিলেন তিনি, অভিযোগ সে সময় ওই কর্মীদের মধ্যে থেকে কেউ এসডিপিও-কে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে। বুকে চোট পান তিনি। শুধু তাই নয়, পুলিশকে লক্ষ্য করে দূর থেকে ইটও ছোড়া হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ লাঠি চার্জ করে, কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেটও ছোড়ে। ব্যবহার করা হয় জলকামান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এসডিপিও শূন্যে গুলি ছোড়ে। এই ঘটনায় ২৫ জন বিজেপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। বিজেপির পার্টি অফিস থেকে ৯টি কৌটো বোমা, ব্যাগভর্তি ইটের টুকরো, বাঁশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ দিকে, মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গিয়ে জমি কমিটির প্রার্থীদের ব্লক অফিসের মধ্যে মারধর করার অভিযোগ উঠল শাসক দলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে ভাঙড়-২ ব্লক অফিসে। শাসক দলের মারে গুরুতর জখম হন বেশ কয়েকজন জমি কমিটির প্রার্থী। উল্টোদিকে বহিরাগত বেশ কয়েকজনকে নিয়ে এসে এলাকায় গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টার অভিযোগ জমি কমিটির তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গিয়ে ভাঙড়ে আক্রান্ত জমি কমিটির সদস্যরা। অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ছবি: সামসুল হুদা।

প্রশাসন ও স্থানীয় সুত্রের খবর, পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতের নতুনহাট এলাকায় পাওয়ার গ্রি়ড হবে কিনা সেই নিয়ে মানুষের রায় পেতে ওই পঞ্চায়েত এলাকায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেয় জমি কমিটি। তারা সিপিএমের সমর্থনে নির্দলে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতো এ দিন দুপুরের দিকে ৪ টি বাসে করে কাঁঠালিয়াতে আসে পাওয়ার গ্রি়ড বিরোধী জমি আন্দোলনকারীরা। পুলিশ আগে থেকে গোটা এলাকা ১৪৪ ধারা জারি করে রেখেছিল। এ দিন কয়েকশো আন্দোলনকারী মনোনয়ন জমা দিতে আসলে কাঁঠালিয়াতে পুলিশ তাদের আটকে দেয়।

গ্রি়ড বিরোধী জমি আন্দোলনকারীদের বাস থেকে লাঠি,রড়,গুলতি,সাইকেলের চেন উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি: সামসুল হুদা।

তাদের সঙ্গে বাসের মধ্যে ছিল লাঠি,রড়,গুলতি,সাইকেলের চেন সহ নানা ধরনের জিনিসপত্র। পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে তা উদ্ধার করে। এরপর কেবলমাত্র জমি প্রার্থীদের ব্লক অফিসে যাওয়ার কথা বলে। রাস্তায় যাতে তাদের কোন সমস্যা না হয় সেজন্য পুলিশ তাদের সঙ্গে করে ব্লক অফিসের গেট পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। অভিযোগ ব্লক অফিসে ঢুকতে শাসক দলের লোকজন তাদের বেধড়ক মারধর করে। এই ঘটনায় সৌমিত্র মন্ডল,ইমতাজুল খান,চন্দনা সর্দার,নিতাই সর্দার সহ বেশ কয়েকজন গুরুতর জখম হয়।

লাউহাটি-হাড়োয়া রোডের বিভিন্ন জায়গা অবরোধ করেন জমি কমিটির সদস্যরা। ছবি: সামসুল হুদা।

পরে জমি কমিটির সদস্যরা এলাকায় ফিরে গিয়ে মিদ্দেপাড়া,উড়িয়াপাড়াতে তৃণমূলের চারটি বাড়ি ভাঙচুর করে এবং লাউহাটি-হাড়োয়া রোডের বিভিন্ন জায়গা অবরোধ করে।

এবিষয়ে ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, একটি ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ কোনও লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

(নবগ্রামের আহত কংগ্রেস কর্মীকে সিপিএম কর্মী বলে লেখা হয়েছিল। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।)

তথ্য সহায়তা: রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভাশিস সৈয়দ, বিমান হাজরা, সব্যসাচী ইসলাম।

ভিডিও সহায়তা: রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভাশিস সৈয়দ এবং অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

Panchayat Election West bengal Nomination পঞ্চায়েত নির্বাচন Murshidabad Bankura West Bengal Panchayat Elections 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy