Advertisement
E-Paper

রাজ্য জুড়ে তীব্র সন্ত্রাস, আক্রান্ত বিধায়ক, সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও

এক দিনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। তীব্র হিংসায় ফের আটকে গেলেন বিরোধীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:৩৩
বহরমপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় মার কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীকে। —নিজস্ব চিত্র।

বহরমপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় মার কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীকে। —নিজস্ব চিত্র।

মাত্র চার ঘণ্টার জন্য মনোনয়ন জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই চার ঘণ্টাকে সব রকম ভাবে উপদ্রুত এবং সন্ত্রস্ত রাখতে সকাল থেকে শুরু হয়ে গেল ‘অপারেশন’। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর— একের পর এক জেলা থেকে উঠে এল তীব্র হিংসার ছবি। অধিকাংশ এলাকায় বিডিও অফিস পর্যন্ত পৌঁছতেই দেওয়া হল না বিরোধীদের। মুড়ি-মুড়কির মতো পড়ল বোমা, চলল গুলি। পুলিশ কোথাও সম্পূর্ণ নীরব দর্শক, কোথাও শাসক আশ্রিত দুষ্কৃতীদের সহায়ক। অভিযোগ বিরোধীদের। গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ২ জনের মৃত্যু হল মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।

২৭ শতাংশ আসনে প্রার্থীই নেই বিরোধী দলগুলির। প্রত্যাহার পর্ব শুরু আগেই এই ছবি উঠে এসেছিল। বিজেপি, বামফ্রন্ট, কংগ্রেস-সহ সব বিরোধী দল তীব্র হিংসা এবং সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। আদালত পর্যন্ত গড়িয়ে গিয়েছিল মামলা। সুপ্রিম কোর্ট হয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ফেরে সে লড়াই। হাইকোর্টে জোর ধাক্কা খায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আবার জমা নিতে হবে মনোনয়ন, নতুন করে প্রকাশ করতে হবে ভোটগ্রহণের নির্ঘণ্ট, জানিয়ে দেয় হাইকোর্ট।

এত কাণ্ডেও কোনও রকম ভাবে স্বাভাবিকতা ফেরানো গেল না নির্বাচন প্রক্রিয়ায়। বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে যে রকম বেনজির সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে এ বার, তাতে গোটা দেশ বিস্মিত। রাজ্য নির্বাচন কমিশন তাতেও বিচলিত বলে মনে হল না। সোমবার মাত্র চার ঘণ্টা সময় দেওয়া হল মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য। সেই চার ঘণ্টার জন্যও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারল না কমিশন। মনোনয়ন নির্বিঘ্ন রাখার বিন্দুমাত্র চেষ্টা হয়েছে বলেও মনে হল না। পুলিশ-প্রশাসন সর্বত্র ঠুঁটো রইল দিনভর। দুষ্কৃতীদের ভয়ঙ্কর দাপট রোখার কোনও চেষ্টা পুলিশ করল না। জেলায় জেলায় বিরোধীদের উপরেই বরং পুলিশ চড়াও হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূম, মুর্শিদাবাদে পুলিশ বিরোধীদের বাধা দিয়েছে বলে বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামেদের দাবি।

দেখুন ভিডিও:

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ও পুলিশের বিরুদ্ধে ‘নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগ তুললেন। বাবুলের দাবি, এ দিন সকাল থেকেই পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি-কে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। যেখানেই গোলমালের খবর পেয়েছেন, সেখানেই তিনি ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। অণ্ডাল, লাউদোহা-সহ বিভিন্ন এলাকায় বার বার তাঁকে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হামলার মুখে পড়তে হয়েছে বলে বাবুল সুপ্রিয়র অভিযোগ। তিনি জানিয়েছেন, ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে বলে জানিয়ে পুলিশ তাঁর পথ আটকেছে। কিন্তু তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা এবং দুষ্কৃতীরা বিনা বাধায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে। নিজের সেলফোনে বাবুল পুলিশের ‘পক্ষপাতমূলক’ আচরণের ভিডিয়ো রেকর্ডিংও করেন। তবে পুলিশ কর্তারা পাল্টা ‘ঔদ্ধত্য’ দেখিয়ে স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে যারপরনাই দুর্ব্যবহার করেন বলে বিজেপির দাবি।

আরও পড়ুন: নির্লজ্জ বেলাগাম সন্ত্রাস, বোমা-বন্দুক হাতে ঝাঁপাল শাসক, নিহত ৩

বীরভূমের সিউড়ি-১ ব্লকে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে ধুন্ধুমার সংঘর্ষ হয়েছে এ দিন। ব্যাপক গুলি-বোমা চলেছে। পুড়ে গিয়েছে অনেকগুলি বাড়ি। দিলদার শেখ নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন। তিনি বিজেপি কর্মী বলেই স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে তৃণমূলের দাবি, ওই ব্যক্তি তাঁদের দলের কর্মী। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই দাবি করেছেন। গোটা এলাকা থমথমে। ঝাড়খণ্ড থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে বিজেপি হামলা চালিয়েছে বলে ফিরহাদের দাবি। বিজেপি সে অভিযোগ সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেছে।

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত নিয়ে ফের হাইকোর্টে বিরোধীরা, মামলা উঠবে কাল

মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ, জঙ্গিপুর, সামশেরগঞ্জ, হরিহরপাড়া, বহরমপুরে প্রবল হিংসা দেখা গিয়েছে। সামশেরগঞ্জে মনোনয়ন জমা করাতে গিয়েছিলেন দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। তাঁর উপরেও চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। প্রবল দুষ্কৃতী তাণ্ডবের মধ্যে কংগ্রেস সাংসদ দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে আটকে পড়েন। কংগ্রেসের তরফ থেকে আজ যাঁদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা ছিল, তাঁরাও সাংসদের সঙ্গেই কার্যলয়ে বন্দি হয়ে থাকেন। প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছতেই দেওয়া হয়নি তাঁদের।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে তর্কাতর্কি পুলিশকর্তার। ছবি: সংগৃহীত।

একই ছবি রঘুনাথগঞ্জেও। কংগ্রেসের তরফ থেকে মনোনয়ন জমা দিতে ইচ্ছুক ছিলেন য়াঁরা, তাঁরা এ দিন সকালে স্থানীয় বিধায়ক আখরুজ্জামানের বাড়িতে জড়ো হন। এর পর বিধায়কের বাড়ি ঘিরেই শুরু হয় দুষ্কৃতী তাণ্ডব। বোমা পড়ে আখরুজ্জামানের বাড়িতে। মুর্শিদাবাদ জেলা সিপিএমের সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের বাড়ির সামনেও বোমাবাজি হয়। চলে গুলি। হরিহরপাড়ায় আক্রান্ত হয় কংগ্রেস। বেলডাঙায় হামলা হয় বিজেপির উপরে।

বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীও প্রকাশ্য রাস্তায় আক্রান্ত হয়েছেন। বহরমপুরের বুকেই লাঠি-বাঁশ নিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। তাঁকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। জখম অবস্থাতেই পথ অবরোধ শুরু করেন মনোজ চক্রবর্তী। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে কংগ্রেস সূত্রে জানানো হয়েছে। মনোজের উপরে হামলার ঘটনায় পুলিশ কয়েক জনকে আটক করেছে বলে খবর।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে আক্রান্ত হয়েছেন বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এবং প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।

মনোনয়ন জমা নেওয়ার নামে সাংঘাতিক প্রহসন হয়েছে বলে সবকটি বিরোধী দলের দাবি। বিজেপি, কংগ্রেস এবং পিডিএস ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। রাজ্যে এ বার ৩৫৬ ধারা জারির দাবি তোলা হবে, জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

West Bengal Panchayat Elections 2018 Violence Political Clash
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy