মনোনয়নের শেষ দিনেও চলল জেলায় জেলায় তাণ্ডব। —নিজস্ব চিত্র।
সুপ্রিম কোর্ট হাত তুলে নিতেই যেন আরও উদ্দীপ্ত হয়ে ময়দানে নেমে পড়ে শাসকদল। আজই মনোনয়নের শেষ দিন ছিল। বিভিন্ন জেলা থেকেই খবর আসতে শুরু করে মারদাঙ্গার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে বিরোধীরা শাসকদলের কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। মেদিনীপুর থেকে মুর্শিদাবাদ— সব জেলাতেই ছবিটা মোটামুটি একই।
অভিযোগ, এ দিন সকাল থেকে তমলুকে জেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে ক্যাম্প করে গাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছেন তৃণমূল সমর্থকেরা।
সকাল থেকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না মনোনয়ন জমা দিতে আসা বাম-বিজেপি প্রার্থীদের। সংবাদ মাধ্যমের লোক দেখলেই লাঠি হাতে তাড়ান তাঁরা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর পরিস্থিতি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মার থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন বিরোধীরা।
ছাড় পাচ্ছেন না চিকিৎসা করাতে আসা রোগীরাও। তমলুকে গাড়ি থামিয়ে তাঁদেরও তল্লাশি চালাচ্ছেন শাসকদলের কর্মীরা।
বহরমপুরেও চিত্রটা একই। মনোনয়ন শুরুর আগেই শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা মারধর করে বিরোধীদের তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ বহরমপুর এসডিও অফিসে। এমনকী এসডিও এবং বিডিও অফিসের সামনে তৃণমূলের কর্মীরা বাঁশে দলীয় পতাকা বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। বহরমপুর ছাড়াও লালবাগ, নবগ্রাম, রানিতলাতেও একই ছবি ধরা পড়ে। জঙ্গিপুরে লাঠি হাতে হেলমেট পড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তৃণমূল কর্মীদের। পুলিশের সামনেই তাঁরা রাস্তা অবরোধও করেন, অভিযোগ বিরোধীদের।
মুর্শিদাবাদের ডোমকলে প্রকাশ্যেই লাঠি হাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
দুর্গাপুরে মহকুমা শাসকের অফিসের ১৫০ মিটারের মধ্যে একটা ব্যাগ থেকে বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। বিরোধীদের অভিযোগ, বহিরাগতরা ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন ওই এলাকায়। তাঁরাই একটি ব্যাগে ওই বোমা এনেছিল। পুলিশ দেখে ব্যাগ ফেলে চম্পট দেন। এই ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দু’জনেই বহিরাগত। পরে বেলা দেড়টা নাগাদ আসানসোল আদালত চত্বরেও শাসকদলের কর্মীদের হাতে বিরোধীরা আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে হস্তক্ষেপ নয়, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অশান্তিও আরও বাড়তে থাকে। মগরাহাটে মনোনয়ন জমা দিতে গেলে বিজেপি বাধা পায়। সেখানে জমায়েত হওয়া তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বিজেপির হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। পুলিশ বাধা দিতে গেলে সেই জমায়েত থেকে গুলি চলে। তাতে গুলিবিদ্ধ হন রফিক জামাল নামে এক সাব-ইনস্পেক্টর। তাঁকে চিকিৎসার জন্য ডায়মন্ড হারবারের নিয়ে যাওয়া হয়।
বারুইপুর এসডিও অফিসের সামনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ মহকুমা শাসকের নিরাপত্তারক্ষীদের।
বারুইপুরে মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দিতে যান এক বিজেপি প্রার্থী। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মীরা বিজেপি প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে শুধু বাধা দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, তাঁর মেয়েকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। পুলিশ থামাতে গেলে তাদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ নির্বাচন কমিশনে যান তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পৌঁছন বাম এবং বিজেপি প্রতিনিধিরাও। রাজ্যে শাসকদল তান্ডব চালাচ্ছে, বিরোধীদের এই অভিযোগ নিয়েই নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল তাঁদের।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy