Advertisement
E-Paper

বছরভর ধর্ষণ, বাংলার মেয়ে ধুঁকছে দিল্লিতে

মেয়েটির গোপনাঙ্গে আর মুখে গভীর ক্ষত। রোজই প্রচুর পুঁজ-রক্ত বেরোচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০ বোতল রক্ত দেওয়া হয়েছে। লাগাতার শারীরিক নির্যাতনের জেরেই তার এই অবস্থা বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১০

মেয়েটির গোপনাঙ্গে আর মুখে গভীর ক্ষত। রোজই প্রচুর পুঁজ-রক্ত বেরোচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০ বোতল রক্ত দেওয়া হয়েছে। লাগাতার শারীরিক নির্যাতনের জেরেই তার এই অবস্থা বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

রাজধানী দিল্লির হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ওই কিশোরীর বয়ানে ফের উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে সক্রিয় একটি নারী পাচার চক্রের বৃত্তান্ত।

কয়েক দিন আগে গা়জিয়াবাদের এক বেসরকারি হাসপাতালে রক্তাক্ত অবস্থায় আয়েশা (নাম পরিবর্তিত)-কে ভর্তি করিয়ে দিয়ে গা-ঢাকা দেয় কিছু লোক। গাজিয়াবাদ পুলিশ ও দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রের খবর, মেয়েটিকে দেখে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, সে গণধর্ষণের শিকার। ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। এই অবস্থায় সোমবার দিল্লির গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে আয়েশাকে ‘রেফার’ করা হয়। হাসপাতাল থেকে খবর পাঠানো হয় দিল্লি পুলিশ এবং ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে। পুলিশ ওই কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, সে ডায়মন্ড হারবার এলাকার বাসিন্দা। বছরখানেক আগে এক দিন স্কুল থেকে ফেরার পথে তাকে অপহরণ করা হয়। সেই থেকে একাধিক পুরুষ তাকে ক্রমাগত ধর্ষণ করে গিয়েছে।

ওই ঘটনায় গাজিয়াবাদ থেকে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দিল্লি মহিলা কমিশন কিশোরীর দেখভাল করছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল বৃহস্পতিবার জানান, আসলাম ওরফে জব্বার নামে ধৃত ওই ব্যক্তি জেরায় স্বীকার করেছে, ধর্ষকদের মধ্যে সে-ও ছিল। ডায়মন্ড হারবারেই তার বাড়ি। উত্তরপ্রদেশেও তার বাড়ি আছে। সে-ই রাসায়নিক মেশানো রুমাল নাকে চেপে অজ্ঞান করে মেয়েটিকে অপহরণ করে। ‘‘লোকটি আরও জানায়, সে ২০১১ সাল থেকে এইচআইভি পজিটিভ। আমরা তাই কিশোরীর এইচআইভি পরীক্ষা করাচ্ছি,’’ বললেন স্বাতীদেবী। আয়েশাকে হাসপাতালে দেখে এসে স্বাতীদেবী জানান, উদ্ধারের পরেও মেয়েটির কষ্টের অন্ত নেই। বসতে পারছে না, হাঁটাচলা তো নয়ই।

দিল্লির ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে ঋষিকান্ত এ দিন জানান, মাস ছয়েক আগে পশ্চিমবঙ্গ থেকে একটি মেয়ে পাচারের অভিযোগ যায় তাঁদের কাছে। অভিযোগের ভিত্তিতে খোঁজখবর করতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, বছর সতেরোর কিশোরীটি এক দিন স্কুল থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোকেরা থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু মেয়ের খোঁজ পাননি। গত মার্চে পরিবারের কাছে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোন করেছিল ওই কিশোরীই। মেয়েটি জানায়, সে হিমাচলপ্রদেশে রয়েছে। বাবা-মা তাকে যেন উদ্ধারের ব্যবস্থা করে।

ঋষিকান্ত আরও জানান, তার পরেই গাজিয়াবাদ পুলিশের সাহায্য নিয়ে তাঁরা মেয়েটির খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। গত মঙ্গলবার গাজিয়াবাদ থানার মাধ্যমে খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, ওই কিশোরীই ডায়মন্ড হারবারের সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়ে। ডায়মন্ড হারবার থানার তদন্তকারী অফিসার এবং কিশোরীর বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে। ওই থানা বৃহস্পতিবার জানায়, ইতিমধ্যে মেয়েটির বাবা মারা গিয়েছেন।

আয়েশা একা নয়। চলতি বছরেই দিল্লি এবং তার সংলগ্ন এলাকা থেকে এ রাজ্যের ৪৫ জন নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত বছর সংখ্যাটা ছিল ৫০। ঋষিকান্ত জানান, ওই সব মেয়েকে অপহরণ করে অথবা কাজ দেওয়ার নাম করে নিয়ে গিয়ে পাচার করা হয়েছিল। রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি একই কথা বলছে। কিন্তু এমন আরও কত চক্র এ রাজ্যে সক্রিয়, পশ্চিমবঙ্গের কত মেয়ে অপহৃত হয়ে পাচার হয়ে গিয়েছে— তার পরিসংখ্যান জানে না কেউ।

gang rape delhi bengal teenager dikshya bhuiyan fatal assault serious condition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy