ব্ল্যাকবোর্ডে খসখস করে লিখে ‘মাস্টারজি’ বুঝিয়ে চলেছেন— ‘‘বেঙ্গলি মে স্মাগলার কো পাচারকারী, ফেন্সিং কো কাঁটাতারের বেড়া কহতা হ্যায়।’’ মন দিয়ে শুনছেন সামনের চেয়ারে বসা জনা তিরিশেক জলপাই উর্দি পরা ছাত্র। এক পাশে টেবিল-চেয়ার পেতে ক্লাসের উপরে নজর রাখছেন ‘হেডমাস্টার’।
হালকা শীতের সকালে এই ছবি দেখা গেল বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা মুরুটিয়ার শিকারপুর বিএসএফ ক্যাম্পে। ‘মাস্টারজি’ ওই ক্যাম্পেরই এক বাঙালি জওয়ান। ছাত্র অন্য প্রদেশ থেকে আসা তাঁরই সহকর্মীরা। আর ‘হেডমাস্টার’ ৩৯ নম্বর ব্যাটেলিয়নের সি কোম্পানি কমান্ডার গুরুদত্ত পুন্দির।
ব্যাপারখানা কী?
কমান্ডার জানালেন, রোজকার কাজের প্রয়োজনেই বাংলা শেখানো হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কর্তব্যরত অন্য ভাষাভাষী বিএসএফ জওয়ানদের। কেননা এ পারের মানুষ যেমন বাংলাভাষী, ও পারের মানুষও বাংলাতেই কথা বলেন। এই এলাকার মানুষ বা কাঁটাতারের বেড়ার ও পারে কাজে যাওয়া চাষিদের কথা বুঝতে না পারলে জওয়ানদের সমস্যায় পড়তে হয়। ভুগতে হয় নিরীহ মানুষদেরও। অকারণে জওয়ানদের সঙ্গে তাঁদের ভুল বোঝাবুঝি হয়।
সমস্যা হল, এই কোম্পানির জনা আশি জওয়ানের মধ্যে হাতে গোনা কয়েক জন বাঙালি। বাকিরা হিন্দি বা নিজের মাতৃভাষা ছাড়া কিছু জানেন না। বাংলায় কথা বলা দূরের কথা, শুনে বুঝতেও পারেন না। কিন্তু না জানলেই বা চলবে কী করে? তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কিছু দিন ধরে নিয়মিত বাংলা ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
‘মাস্টারজি’ তাপস বিশ্বাস বলেন, “আমরা যারা বাংলা বলতে পারি, তারাই এই ক্লাস নিই। মূলত ছোট ছোট ইংরেজি বা হিন্দি শব্দের বাংলা মানে জানানো হয়। কখনও একটি বড় বাক্যের বাংলা তর্জমা করে শেখানো হয়। কিছু দিন শেখার পরে এখন অনেকেই বাংলা ভাল বুঝতে পারছে, এমনকি বলতেও পারছে। এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে সুবিধা হচ্ছে।”
এতে খানিক হলেও সুরাহা হয়েছে সীমান্তের মানুষেরও। শিকারপুরে ওই ক্যাম্পের সামনেই বহু দিনের চায়ের দোকান বাসুদেব ঘোষের।
তিনি বলেন, “জওয়ান তো কম দেখলাম না! আমরা রাম বললে ওঁরা অনেকেই লক্ষ্মণ বোঝেন। বহু বার এমন হয়েছে যে, কথা বুঝতে না পারায় সীমান্তের মাঠে যাওয়া চাষিদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে জওয়ানের বিরুদ্ধে। লাঞ্ছিত হয়েছেন এলাকার মানুষ। সেই ঝামেলা এখন অনেক কমেছে।”
আর চাকরি করতে এসে নতুন একটা ভাষা শিখে ফেলা ভিন্ রাজ্যের অনেক জওয়ানের কাছেই উপরি পাওনা। মহারাষ্ট্রের অমিত সালভে, ওড়িশার প্রশান্ত কুমার, অন্ধ্রপ্রদেশের পি সিলভারা ভাঙা-ভাঙা বলছেন, “আমরা বাংলা ভালবাসে...।”