বেরা-প্রস্তুতি: লালবাগে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
অনেকে বলেন, বাংলা নববর্ষ পালন নাকি ধর্ম সস্প্রদায় নির্বিশেষ সব বাঙালির উৎসব। বহুল প্রচারিত ওই উৎসবের আড়ালে বাংলা ও উর্দুভাষী বাঙালি যুগ যুগ ধরে আরও একটি উৎসব পালন করে আসছে। বাংলার নবাবদের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত সেই উৎসবের নাম বেরা ভাসান।
বাংলার নবাবেরা সিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিম ছিলেন। মুসলিম ধর্মে কোনও দেবদেবীর অস্তিত্ব না থাকলেও ব্যতিক্রম কেবল নবাবদের চালু করা জলদেবতা খাজা খিজির। দিল্লির বাদশাকে নদীপথে কর দিতে যাওয়ার আগে জলদেবতাকে তুষ্ট করতে মুর্শিদাবাদের প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ বেরা উৎসবের সূচনা করেন লালবোগে। ৩১৫ বছর আগে লালবাগের ভাগীরথীতে ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এলাহি আয়োজনে আলোকোজ্জ্বল কলার ভেলা ভাসিয়ে বেরা উৎসবের সূচনা করেন তিনি। ইংরেজ আমলেও অনেক বছর ধরে বেরা উৎসবে নবাবি জৌলুস অটুট ছিল। পরে জৌলুস কমলেও লক্ষাধিক লোকের সমাবেশে ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার সেই উৎসবের ট্রাডিশন চলে আসছে। এ বারই কেবল ব্যতিক্রম।
লালবাগের নবাব পরিবারের ২৩টি উৎসব পালন করা হয় রাজ্য সরকারের আইন বিভাগের অধীনে থাকা ‘মুর্শিদাবাদ এস্টেট’-এর তহবিলের সৌজন্যে। এস্টেট ম্যানেজার অচিন্ত্য সিংহ বলেন, ‘‘আলোকোজ্জ্বল বেরা ভাসান উৎসবের জন্য খসড়া বাজেট ধরা হয়েছে ৭ লক্ষ টাকা। তবে এ বার ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবারের বদলে বেরা ভাসান হবে তার আগের সপ্তাহের বহস্পতিবার অর্থাৎ আজ সন্ধ্যায়।’’ মুর্শিদাবাদ এস্টেটের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সুপার তথা নবাব বংশের বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম প্রতিনিধি সৈয়দ জামিল মির্জা বলেন, ‘‘মহরম হচ্ছে আরব মুলুকের কারবালার ময়দানের যুদ্ধক্ষেত্রে শহিদ নবী (হজরত মহম্মদ) সাহেবের দুই নাতি হাসান ও হোসেনকে নিয়ে শোক পালনের অনুষ্ঠান। মহরম মাস থেক শুরু করে ৬৮ দিন ধরে সেই শোক পালন করা হয়। এ বার সেই শোক পালনের অনুষ্ঠানের সময়ের মধ্যেই পড়েছে ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবারের আনন্দের, জাঁকজমকের, আতশবাজির বেরা উৎসব। তাই এ বার বেরা উৎসব এক সপ্তাহ এগিয়ে আনা হয়েছে।’’
সিটি মুর্শিদাবাদ (লালবাগ) ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ শহরের মানুষ মহরমের শোক পালনের পাশাপাশি বেরার আনন্দেও বরাবর মশগুল থাকেন। হাজারদুয়ারি লাগোয়া নিউ প্যালেসের সামনে নদীর দু’ পাড়ে লক্ষ লোকের জমায়েত হয় বেরার দিন বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। নির্ঘণ্টের বদল হলেও এ বারও তার অন্যথা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy