Advertisement
E-Paper

BGBS 2022: প্রচারই সার, আগের পাঁচ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে কত লগ্নি বাস্তবায়িত হয়েছে, সরব বিরোধীরা

রাজ্য সরকারের তরফে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘রাজনৈতিক হতাশা’ থেকেই এমন কথা বলছে বিরোধীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২২ ০৫:২৮
শিল্প সম্মেলনে গৌতম আদানি, সঙ্গে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও।

শিল্প সম্মেলনে গৌতম আদানি, সঙ্গে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। ছবি পিটিআই।

দফায় দফায় শিল্প সম্মেলনই সার। বাংলায় বিনিয়োগ, শিল্প বা কর্মসংস্থানের বাস্তব চিত্র অত্যন্ত করুণ বলে একযোগে সরব হল বিরোধীরা। তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে তাদের দাবি, এর আগে পাঁচ বার শিল্প সম্মেলন করেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। রাজ্যে শূন্যপদে নিয়োগ নেই, নতুন কর্মসংস্থান নেই। কাজের সন্ধানে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। বিরোধী নেতাদের আরও প্রশ্ন, যেখানে তোলাবাজি, সিন্ডিকেট নিয়ে কথায় কথায় সংঘর্ষ হয়, আইনশৃঙ্খলার গুরুতর সমস্যা যেখানে রয়েছে, সেখানে বিনিয়োগ করতে কেউ আসবেন কোন ভরসায়?

রাজ্য সরকারের তরফে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘রাজনৈতিক হতাশা’ থেকেই এমন কথা বলছে বিরোধীরা। শিল্পপতিরা যখন বাংলাকে বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেওয়ার কথা বলছেন, বিরোধীরা তখন রাজ্যের স্বার্থের কথা ভাবছে না।

বিশ্ব বাংলা শিল্প সম্মেলন সম্পর্কে (বিজিবিএস) বুধবার বিজেপির অর্থনীতিবিদ-বিধায়ক অশোক লাহিড়ীও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর প্রশ্ন, আগের পাঁচটি শিল্প সম্মেলন থেকে যে বিনিয়োগের অঙ্ক বলা হচ্ছে, তার কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে? অশোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘এই রাজ্য থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক অন্য রাজ্যে কাজ করতে যান, ভিন্‌ রাজ্যে তাঁরা বেশি মজুরিও পান। এখানে কাজের ভাল সুযোগ থাকলে কি এমন হত? পরিকাঠামো, পরিবেশের সহায়তা, প্রশাসনের স্বচ্ছতা না থাকলে কেউ বিনিয়োগ করবেন কী ভাবে?’’ বাম আমলের প্রসঙ্গ টেনে অশোকবাবু বলেছেন, ‘‘শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় শিল্প আনার বহু চেষ্টা করেছিলেন। অনেক ‘মউ’ স্বাক্ষর হয়েছিল। কিছু ফল মিলেছিল, বেশি নয়। শিল্পপতিরা আবেগে উৎসারিত হয়ে বিনিয়োগ করেন না, মুনাফার সুযোগ দেখে করেন।’’ তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘দু’বছর বন্ধ থাকার পরে বিখ্যাত জলসাটা আবার দেখছি! করের টাকায় খেলা, মেলার মতো আরও একটা। যেখানে সকাল থেকে পাড়ায় গুলি চলে, বোমা পড়ে, তোলাবাজি চলে সেখানে বিনিয়োগ করতে কে আসবে? মুখ্যমন্ত্রীকে কালীপুজো, দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করতে দেখেছি। একটা কারখানাও উদ্বোধন করতে দেখিনি!’’

কলকাতায় শিল্প সম্মেলন শুরু হওয়ার দিনেই সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানার পরিত্যক্ত জমি দেখতে গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি জানিয়েছেন, শিল্প নিয়ে রাজ্য সরকার বিজেপিকে

ডাকলে তাদের প্রতিনিধিদল গুজরাতে গিয়ে শিল্পপতিদের এ রাজ্যে শিল্প করার কথা বলবে। সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, ‘‘এ রাজ্যে বিজেপি সরকার হলে, কৃষকেরা যদি চান, তা হলে ছ’মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এখানে শিল্প করে দেখাব।’’

সিঙ্গুরের গোপালনগর এলাকায় এক সময়ের প্রস্তাবিত শিল্পের জমিতে এখন ভেড়ি কাটা হচ্ছে। সেখানে গিয়ে সুকান্তের কটাক্ষ, ‘‘২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে অনেক কথা বলেছিলেন এবং এই এলাকাকে শিল্পের বধ্যভূমিতে পরিণত করেছিলেন। উনি বলেছিলেন, এখানে প্রচুর কাশ ফুল হয়। তাই দেখলাম, কাশ ফুল থেকে শিল্প হয় কি না! শিল্প হয়নি। কতগুলো ভেড়ি হয়েছে, দেখলাম। রাজ্যে শিল্প না আসার পিছনে সিঙ্গুর একটা কারণ।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এর আগেও অন্য শিল্পগোষ্ঠী এখানে এসেছিল। মুখ্যমন্ত্রী লন্ডনেও গিয়েছিলেন। কিন্তু যতক্ষণ না শিল্পের পূর্ব শর্তগুলি পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে শিল্প হবে না।’’ বর্ধমানে গিয়েও এ দিন তথ্য পেশ করে মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প-দাবি নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন তুলেছেন সুকান্ত।

রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিধায়ক বেচারাম মান্না বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, ‘‘উনি রাজনীতিতে শিশু! আমরা বলেছিলাম, তিন ফসলি জমিতে শিল্প করা যাবে না। ওঁদের পায়ের তলার মাটি নেই। এ রাজ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন হচ্ছে। তাই ওঁরা আতঙ্কগ্রস্ত।’’

বিজেপির অর্থনীতিবিদ-বিধায়ক অশোক লাহিড়ীও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, আগের পাঁচ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে কত লগ্নি বাস্তবায়িত হয়েছে। একই প্রশ্ন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও। রাজ্য সরকারেরই ‘স্টেট অফ এনভায়রনমেন্ট রিপোর্ট, ২০২১’ উদ্ধৃত করে সুজনবাবু তথ্য দিয়েছেন, বাংলায় শিল্পকেন্দ্রের সংখ্যা ২০১৬ সালের ৬০,৯০০ থেকে কমে এখন হয়েছে ৩৯,৩৫৯। বড় শিল্প ১৩৩৭ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১০৬৬। কারখানা বন্ধ হওয়া ও কর্মচারীদের কর্মচ্যুত হওয়ার মানে যে বিপুল পরিমাণ শ্রম দিবস নষ্ট, তা-ও অঙ্ক কষে দেখানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা। সুজনবাবুর কথায়, ‘‘এটা তো ৬ নম্বর শিল্প সম্মেলন। আগে বিধানসভাতেও আমরা বিনিয়োগ নিয়ে তথ্য চেয়েছি, শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করেছি। চ্যালেঞ্জ করছি, মুখ্যমন্ত্রী ৬টা কারখানার নাম বলুন, যার ফিতে কেটেছেন!’’ আদানিরা বিজেপি-বিরোধী শক্তিকে ভাগ করতে চায় বলে অভিযোগ করার পাশাপাশি সিপিএম নেতার দাবি, ‘‘পরিকাঠামো যা হয়েছে, সব বাম আমলে। এখন তোলাবাজি, দুর্নীতি হচ্ছে শুধু!’’

রাজ্যের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। বোলপুরে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘লগ্নি এখানে বাস্তবে হয় না, কাগজে-কলমে হয়! এখানে যেমন ১০০ দিনের কাজ কাগজে-কলমে হয়, ঘরের টাকা কাগজে-কলমে হয়, চাকরি হয় কাগজে-কলমে, তেমনি শিল্পও হয় কাগজে-কলমে।’’ তাঁর বক্তব্য, তৃণমূল সরকারের আমলে একের পর এক বাণিজ্য সম্মেলন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী সাড়ে ১২ থেকে ১৩ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হওয়ার কথা। অধীরবাবুর প্রশ্ন, ‘‘বাংলায় যদি সত্যিই এত বিনিয়োগ হত, লকডাউনের সময়ে এ রাজ্যের হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের দুর্দশা আমাদের দেখতে হল কেন? বাংলায় শিল্পের নামে ভাষণ, বিজ্ঞাপন হয় কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই!’’

বিরোধীদের এই আক্রমণের জবাবে শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক হতাশাকে রাজনৈতিক ভবিষ্যতের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলছে বিরোধীরা! দেশের প্রতিষ্ঠিত, প্রথম সারির শিল্পপতিরা এ দিন যা বলেছেন, বিরোধীরা কি তা শোনেননি? শিল্পপতিরা তো রাজ্যকে বিনিয়োগের উত্তম ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করছেন।’’

BGBS 2022 BJP CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy