নোট বাতিল, পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে হিংসা বা পেট্রো-পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সাম্প্রতিক কালের ধর্মঘটের সময়ে প্রশ্ন উঠেছিল দলের অন্দরেই। ধর্মঘট ডেকে সকলে যদি ঘরেই বসে থাকেন, তা হলে এই ধরনের কর্মসূচি নেওয়ার অর্থ কী? এ বার দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘটে সংগঠন শেষ পর্যন্ত রাস্তায় থাকায় লোকসভা ভোটের আগে স্বস্তি বাম শিবিরে!
পরপর দু’দিন ১২ ঘণ্টা করে নেতা-কর্মীদের পথে থাকতে হবে বলে ধর্মঘটের আগে কড়া নির্দেশিকা জারি করেছিল আলিমুদ্দিন। রাজ্য থেকে শুরু করে ব্লক এবং পুরসভা স্তর পর্যন্ত গড়া হয়েছিল স্ট্রাইক কমিটি। জেলায় জেলায় মঙ্গল ও বুধবার দফায় দফায় অবরোধ করে বা কোথাও ভাঙচুরে মানুষের ভোগান্তির কারণ ঘটিয়ে বাম নেতা-কর্মীরা সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঠিকই। পুলিশ এবং শাসক দল তৃণমূলের বাহিনীর হাতে ‘আক্রান্ত’ হওয়ার অভিযোগও এসেছে নানা জায়গায়। কিন্তু মার খেয়েও কর্মীরা ময়দান না ছা়ড়ায় লোকসভা নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক স্তরে ফের কোমর বাঁধতে চাইছেন বাম নেতৃত্ব। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুলিশ এবং শাসক দলের ‘আক্রমণে’র বিরুদ্ধে দু’দিন প্রতিবাদ কর্মসূচি চলবে সারা রাজ্যে। ধর্মঘটকারী ট্রেড ইউনিয়নগুলির তরফে কলকাতায় কেন্দ্রীয় মিছিল হবে কাল, শুক্রবার।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেছেন, ‘‘সত্তরের দশকেও আক্রমণ হত। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি আরও কঠিন। আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়েই স্থানীয় স্তরে কর্মীরা রাস্তায় থেকেছেন।’’ আঘাত হলে প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তাঁরা। তা কি হয়েছে? সূর্যবাবুর জবাব, ‘‘যেখানে সম্ভব, প্রতিরোধ হয়েছে। বেশির ভাগ জায়গাতেই আক্রমণকারীদের রক্ষা করতে পুলিশ এগিয়ে এসেছে। তার পরে আমাদের লোকেদেরই গ্রেফতার করেছে।’’ আলিপুরদুয়ারের একটি ভি়ডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ধর্মঘট-বিরোধী তৃণমূলের সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন এক বৃদ্ধ। তাঁদের হাত ছাড়িয়ে ওই বৃদ্ধ বামেদের মিছিলে ঢুকে যেতেই লাল পতাকার ডান্ডা দিয়ে তৃণমূলকে পাল্টা মার দিয়ে তাড়া করছেন ধর্মঘট সমর্থকেরা! আবার অণ্ডাল থানায় আটক ৩৫ জন বাম কর্মী ‘মুচলেকা’ দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁদের বেশি রাতে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে পুলিশই।
কলকাতা শহরে এ দিন পুলিশি প্রস্তুতি ছিল ব্যাপক। সূর্যবাবুদের অভিযোগ, মিছিল আটকানোর জন্য অঘোষিত ১৪৪ ধারা জারি হয়েছিল! পুলিশকে ফাঁকি দিতেই অলি-গলি ঘুরে নোনাপুকুরে মিছিল নিয়ে যান সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু। মিছিল করতে গিয়েই যাদবপুরে ফের গ্রেফতার হয়েছেন সুজন চক্রবর্তী। নদিয়ায় গ্রেফতার করা হয় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর আর এক সদস্য মৃদুল দে-কে। সুজনবাবুর মন্তব্য, ‘‘মিছিল করারও অধিকার নেই! এমনই গণতন্ত্র রাজ্যে!’’ অনাদিবাবুর প্রশ্ন, ‘‘ধর্মঘটের মধ্যেই লোকসভায় নতুন ট্রেড ইউনিয়ন বিল পেশ করল কেন্দ্র। তৃণমূল কিছু বলল না! মৌন কি সম্মতির লক্ষণ?’’ ছাত্র সংগঠন এসএফআই হোক বা বামফ্রন্টের বাইরে এসইউসি— সকলকেই চোখে পড়েছে পথে।
তৃণমূলের তরফে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য কটাক্ষ করছেন, ‘‘যারা অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে, তারা প্রাসঙ্গিক থাকার নানা চেষ্টা করেছে। তবে মানুষ তাতে সাড়া দেননি।’’