Advertisement
E-Paper

অন্যের পাপ বইতে হচ্ছে, ক্ষোভ পুলিশে

ভোটের দিন ঠুঁটো হয়ে থাকার জ্বালা চিড়বিড় করছে ওঁদের। লজ্জা, অসম্মান ও অপমানের জ্বালা। বিধাননগর কমিশনারেটে পুলিশের একাংশ এখন বুঝতে পারছেন না, এর পর কোনও কাজে নাগরিকদের সহযোগিতা চেয়ে কী ভাবে তাঁদের সামনে দাঁড়াবেন।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩১
পুলিশের সামনেই চলেছে শাসানি। — নিজস্ব চিত্র।

পুলিশের সামনেই চলেছে শাসানি। — নিজস্ব চিত্র।

ভোটের দিন ঠুঁটো হয়ে থাকার জ্বালা চিড়বিড় করছে ওঁদের। লজ্জা, অসম্মান ও অপমানের জ্বালা। বিধাননগর কমিশনারেটে পুলিশের একাংশ এখন বুঝতে পারছেন না, এর পর কোনও কাজে নাগরিকদের সহযোগিতা চেয়ে কী ভাবে তাঁদের সামনে দাঁড়াবেন।

দুর্গাপুজোর আর সপ্তাহ দুয়েক বাকি। উৎসবের সময় আইনশৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে, নাগরিকেরা যাতে চোখকান খোলা রাখেন, তার প্রচারে পুলিশের নামার কথা দিন কয়েক পরেই। রবিবার এক ইনস্পেক্টর বললেন, ‘‘এই পোড়া মুখ নিয়ে কী ভাবে যাব?’’ আর এক ইনস্পেক্টরের খেদোক্তি, ‘‘ঘর-সংসার না থাকলে শনিবারই চাকরি ছেড়ে দিতাম। এমন লজ্জা আর অপমান চাকরিজীবনে আর কখনও হয়নি।’’

শনিবার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের এবি-এসি ব্লকে পুলিশকর্মীদের হেনস্থাও কম হয়নি। তাঁদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়েছে, মহিলা পুলিশকর্মীদের মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে এটিআই বুথে কর্তব্যরত পুলিশকে ইটপাটকেল মেরে জখম করা হয়েছে। তার পরেও পুলিশ নিজে থেকে মামলা রুজু করেনি। রবিবার ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সুয়ো মোটো (স্বতঃপ্রণোদিত) মামলা করা যায় কি না, আমরা সেটা খতিয়ে দেখছি।’’

ডিসি যা-ই বলুন, বিরক্ত ও লজ্জিত অন্য অফিসাররা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, শনিবার বেলা ১২টার পরেই কমিশনারেটের পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয় এবং ‘বহিরাগত’ পুলিশ অফিসারদের হাতে চলে যায় ভোট পরিচালনার দায়িত্ব। যাঁরা আবার অনেক জায়গাতেই সেই দায়িত্ব তুলে দেন বহিরাগত বাহুবলীদের হাতে। অভিযোগ, অন্য জায়গা থেকে আসা পুলিশ অফিসাররা কমিশনারেটের পুলিশের নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে ঊর্ধ্বতন অফিসারদের নির্দেশে সন্ত্রাস ও ছাপ্পা ভোটে মদত দিয়েছেন, খুল্লমখুল্লা প্রশ্রয় দিয়েছেন বহিরাগত গুন্ডাদের। যেমন বাগুইআটি থানা শনিবার দুপুরে বারবার ফোন পাচ্ছিল যে, তেঘরিয়া তল্লাটে ভোট লুঠ হচ্ছে। থানা থেকে টহলদার পুলিশের দলকে ঘটনাস্থলে যেতে বলা হয়। কিন্তু ওই দলটির নেতৃত্বে থাকা বাগুইআটির এক অফিসার সেখানে পৌঁছলে তাঁকে ফিরে যেতে হুকুম করেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক ইনস্পেক্টর। তেঘরিয়ায় ‘ভোট করানোর’ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শাসক-দল ঘনিষ্ঠ ওই ইনস্পেক্টরকেই।

একই ভাবে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের একটি থানার আইসি ছিলেন কৈখালির দায়িত্বে, উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশের এক ইনস্পেক্টরকে পাঠানো হয়েছিল আটঘরা-ন’পাড়ার দায়িত্বে। ডিআইজি-র অফিসে কর্মরত এক ইনস্পেক্টরকে নিউ টাউনে এবং শাসনের এক অফিসারকে সল্টলেকের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে রাখা হয়েছিল। বিধাননগরের পুলিশকর্মীদের অভিযোগ, যে তল্লাটে যে এলাকার বহিরাগত দুষ্কৃতীরা ‘কাজ’ করেছে, সেই তল্লাটে সেই এলাকার বাছাই করা অফিসারদেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিধাননগরের এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘দুপুর ২টোর পর নিউ টাউনের বুথ থেকে স্থানীয় কনস্টেবলদের বার করে দেওয়া হয়। তাঁরা প্রিসাইডিং অফিসার, সেক্টর অফিসারদের ঘটনাটি জানান। উপরমহলেও বার্তা দেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।’’

কমিশনারেটের একাধিক অফিসার জানাচ্ছেন, ভোট চলাকালীন অনেকেই তাঁদের পরিচিত, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে মোবাইলে ফোন পেয়েছেন। তাঁদের কাতর অনুরোধ ছিল, ‘ভোট লুঠ ঠেকান।’ কিন্তু হতাশ অফিসারদের স্বীকারোক্তি, ‘‘আমরা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারিনি। আমাদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।’’ আর এক অফিসারের বক্তব্য, ‘‘দু’বেলা আমার সঙ্গে দেখা হয়, এমন মানুষ বারবার ফোন করে বলছেন, আমরা ভোট দিতে পারছি না। দয়া করে দেখুন। অথচ আমরা অসহায়। বাধ্য হয়ে একটা সময় পর ফোন কেটে দিচ্ছিলাম।’’ বিধাননগর কমিশনারেটের এক শীর্ষকর্তাও প্রায় একই সুরে বলছেন, ‘‘অনেক সময়ে জীবনে অন্যের পাপও বয়ে বেড়াতে হয়। শনিবার আমাদের সেটাই হয়েছে।’’

কিন্তু বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই তো তিন বহিরাগত বিধায়ক সুজিত বসু, পরেশ পাল ও অর্জুন সিংহের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সঙ্গে অন্য বহিরাগতরাও ছিল। কঙ্করবাবু কোনও ব্যবস্থা নিলেন না কেন? কঙ্করবাবুর উত্তর, ‘‘যা বলার ডিসি (সদর) বলবেন।’’ ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।

সুজিতবাবু আগেই জানিয়েছিলেন, স্থানীয় বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেই তিনি এসেছিলেন। তা হলে বেলেঘাটার পরেশ পাল ও ভাটপাড়ার অর্জুন সিংহ কেন এলেন? রবিবার সুজিতবাবুর জবাব, ‘‘বিরোধীদের হাতে আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের দেখতেই ওঁরা এসেছিলেন।’’

prabal ganguly bidhannagar commissionarate poll violence police angry saltlake police angry saltlake police tmc violence saltlake vote saltlake vote picture
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy