Advertisement
২২ মে ২০২৪
Mamata Banerjee-Bidyut Chakraborty

‘আপনি কান দিয়ে দেখেন’! ফলক-বিতর্কে চাপে থাকা বিদ্যুৎ চিঠিতে লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে

অমর্ত্য সেন ও বিশ্বভারতীর মধ্যে জমি বিবাদে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। সেই সময়েও মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ‘কান দিয়ে দেখেন’ মন্তব্য করেছিলেন বিদ্যুৎ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৩৭
Share: Save:

বিশ্বভারতীতে ফলক বিতর্কের মধ্যে আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে বেনজির আক্রমণ করলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। শনিবারই বিশ্বভারতীর বিতর্কিত ফলক সরিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে ‘পরামর্শ’ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই রবিবার চিঠিতে মমতার উদ্দেশে বিদ্যুতের মন্তব্য, ‘‘আপনার স্তাবকেরা যা বলেন, আপনি তা-ই বিশ্বাস করেন। আপনি এখনও কান দিয়েই দেখেন!’’ মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে এই মন্তব্য আগেও করেছেন উপাচার্য। অমর্ত্য সেন ও বিশ্বভারতীর মধ্যে জমি বিবাদে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ‘কান দিয়ে দেখেন’ মন্তব্য করেছিলেন বিদ্যুৎ। তা নিয়ে তুমুল বিতর্কও হয় সেই সময়।

বিদ্যুতের সাম্প্রতিক মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে শাসকদল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘আমরা সকলেই জানি, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। অমর্ত্য সেনের সঙ্গে উনি কী করেছেন, তা-ও সকলের জানা। এমন অপদার্থ উপাচার্যকে শীঘ্রই সরানো হোক। কেন্দ্রের কাছে এই দাবি জানাব।’’

শান্তিনিকেতনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করার পর থেকেই অভিযোগ উঠছে, এই কাজের জন্য উপাচার্য নিজে কৃতিত্ব নিতে চান তো বটেই, আচার্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাও তিনি তুলে ধরতে চান। এই আবহে সম্প্রতি বিশ্বভারতীর তরফে উপাসনা গৃহ, ছাতিমতলা এবং রবীন্দ্রভবনের উত্তরায়ণের সামনে শ্বেতপাথরের ফলক বসানো হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’। তার ঠিক নীচে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিদ্যুতের নাম রয়েছে। তাতে কবিগুরুর উল্লেখ নেই।

এর প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রীর নির্দেশে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের ছবি বুকে নিয়ে ধর্না কর্মসূচি শুরু করেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রীও শনিবার এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে যে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র বিশ্বভারতীকে তৈরি করেছিলেন, বর্তমানে তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। কিন্তু বর্তমান কর্তৃপক্ষ সেই স্থানের স্মারক হিসাবে যে ফলকটি বসিয়েছেন, তাতে উপাচার্যেরও নাম রয়েছে, বাদ কেবল গুরুদেবের নাম!’’ মমতার বার্তা, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারকে পরামর্শ, এই অহংকারী, আত্মপ্রদর্শনবাদের নমুনাটিকে সরিয়ে দেওয়া হোক এবং গুরুদেবকে যাতে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেশ জানাতে পারে, তার ব্যবস্থা হোক।’’

ফলক নিয়ে এই বিতর্কের মধ্যেই মমতাকে চিঠি দিয়েছেন উপাচার্য। আশ্রমের ভিতরের রাস্তা ফেরত চেয়ে আগেও মুখ্যমন্ত্রীকে দু’বার চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। তার উত্তর এখনও রাজ্যের তরফে মেলেনি। রবিবার আবার চিঠি দিয়ে উপসাগৃহ থেকে কালীসায়র পর্যন্ত ওই রাস্তা ফেরত চাইলেন বিদ্যুৎ। সেই চিঠিতেই মুখ্যমন্ত্রী ‘কান দিয়ে দেখেন’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। ফলক সরানো নিয়েও উপাচার্য চিঠিতে জানিয়েছেন, ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই)-এর নির্দেশ মতো ফলক তৈরি হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যেই তা সকলে দেখতে পাবেন।

প্রসঙ্গত, বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথের নাম বাদ যাওয়ায় ক্ষুব্ধ আশ্রমিক থেকে শুরু করে প্রাক্তনী ও বিশ্বভারতীর শিক্ষকদের একাংশ। এমন ঘটনা অতীতে কোনও দিন ঘটেনি বলেও বিশ্বভারতীর অনেকের দাবি। বিশ্বভারতীর প্রথা অনুযায়ী কোনও উদ্বোধনী ফলক বা স্বীকৃতি ফলকে সাধারণত কারও নাম উল্লেখ করা হয় না। ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর আক্ষেপ করে আগেই বলেছেন, “বর্তমান উপাচার্য বিশ্বভারতীর হর্তা-কর্তা-বিধাতা হয়ে গিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ বলে কেউ ছিলেন, আজ বোধহয় তাঁরা ভুলে গিয়েছেন। এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি এখানে।’’ আর এক আশ্রমিক তথা প্রাক্তনী অনিল কোনারেরও মন্তব্য, “৭০ বছরে আমি কোনও উপাচার্যের নামের কোনও ফলক এখানে দেখিনি। এই রীতি এখানে চলে না। উনি নিজের মতো করে একের পর এক ঐতিহ্য ভেঙে চলেছেন।’’

বিশ্বভারতীর শিক্ষক সংগঠন ভিবিইউএফএ-র সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্যও আগে দাবি করেছেন, যেখানে যেখানে ফলক লাগানো হয়েছে, তার মালিকানা হয় শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের, নয়তো পূর্ত দফতরের। তাই ফলক বসানোর কোনও আইনি অধিকার উপাচার্যের নেই। তিনি বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথকে মুছে দিয়ে নিজের নামে এই প্রচার করার ব্যাপারটি নিয়ে আইনি পরামর্শ করছি। যে ভাবে আচার্যের নাম ব্যবহৃত হয়েছে, তাতে তাঁর সম্মতি নেওয়া হয়েছে কি না, তা-ও আমরা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জানতে চাইব।’’

শনিবার ধর্না মঞ্চ থেকেও উপাচার্যকে নিশানা করেছিলেন তৃণমূল নেতারা। বিদ্যুৎকে তাঁর বাড়ি ও বোলপুর থেকে ‘বার করে দেওয়ার’ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শাসকদলের নেতা গদাধর হাজরা। সেই মঞ্চেই উপস্থিত ছিলেন রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন বিদ্যুৎ। নিশানা করলেন শাসকদল তৃণমূলকে। সেই সঙ্গে গরু-কয়লা পাচার মামলা, রেশন দুর্নীতি মামলার উল্লেখ করেছেন উপাচার্য। রাজ্যের দুই জেলবন্দি মন্ত্রীর প্রসঙ্গও টানা হয়েছে চিঠিতে। তবে কারও নাম নেওয়া হয়নি। তবে বিদ্যুৎ যে নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথাই বলতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট সকলের কাছেই।

তার প্রেক্ষিতে বিশ্বভারতীতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী মীনাক্ষী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘উপাচার্য নিজের ঢাক পেটানোর জন্য এ সব করছেন। বিশ্বভারতীর মানুষ, শান্তিনিকেতনের মানুষ জানেন উনি কেমন। মুখ্যমন্ত্রী জানেন। এ সব চিঠি দিয়ে কিছু হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Bidyut Chakraborty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE