Advertisement
E-Paper

ভিড় হচ্ছে, মন ভরছে হাঁটো ভাই হাঁটো রে

গোঘাটের এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় ‘শিল্প চাই’ ট্যাবলো বেশ নড়বড় করছে। দাঁড়িয়েও পড়ছে থেকে থেকে। সে রাস্তায় লম্বা লম্বা পা ফেলতে ফেলতেই তিনি বলছেন, ‘‘এর মধ্যে অনেক জায়গায় গত পৌনে পাঁচ বছরে প্রথম ঠ্যাং রাখলাম! ভাল লাগছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ঠ্যাং খুলেই যাবে!’’ সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী স্বভাবজ রসিক মানুষ। হাসতে হাসতেই বলা তাঁর কথা শুনে কি মনে হচ্ছে, বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের ভয়ে পা কাঁপছে?

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৬
বামেদের পদযাত্রা। মঙ্গলবার কামারপুকুর চটিতে। ছবি: মোহন দাস

বামেদের পদযাত্রা। মঙ্গলবার কামারপুকুর চটিতে। ছবি: মোহন দাস

গোঘাটের এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় ‘শিল্প চাই’ ট্যাবলো বেশ নড়বড় করছে। দাঁড়িয়েও পড়ছে থেকে থেকে। সে রাস্তায় লম্বা লম্বা পা ফেলতে ফেলতেই তিনি বলছেন, ‘‘এর মধ্যে অনেক জায়গায় গত পৌনে পাঁচ বছরে প্রথম ঠ্যাং রাখলাম! ভাল লাগছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ঠ্যাং খুলেই যাবে!’’

সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী স্বভাবজ রসিক মানুষ। হাসতে হাসতেই বলা তাঁর কথা শুনে কি মনে হচ্ছে, বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের ভয়ে পা কাঁপছে?

নাহ্! আদ্যন্ত ভুল হল! সুদর্শনবাবু যা বলছেন, তা আসলে হণ্টনের যন্ত্রণা! এবং তিনি একা নন। তিনি যা বলছেন, এই মুহূর্তে বামফ্রন্টে তাঁর প্রতিধ্বনি করার মতো মুখ অনেক পাওয়া যাবে। বামফ্রন্ট ডাক দিয়েছে, শিল্প চাই। শিল্প চাইতে চাইতে সিঙ্গুর থেকে শালবনির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছেন কমরেডরা। তৃণমূলের জমানায় যে সব জায়গায় পা ফেলার হিম্মত হয়নি বামদের, সেখানে পদচারণা করতেই প্রবল উদ্দীপনা। রাস্তার ধারে শাঁখ-ফুল নিয়ে অভ্যর্থনা, সবই চলছে। তাতে মনও ভরছে। কিন্তু পদ যুগল? সত্যি বলতে কী, বেশ ব্যথা আছে!

সুদর্শনবাবুর যেমন ইদানীং কালের রাজনীতির পরিচিত অনুষঙ্গ স্নিকার্সে একেবারে অভ্যাস নেই। আঙুল-গলানো মোজার উপরে চটি গলিয়ে হাঁটছেন। পা টনটন করলে একটু বাইকে, কখনও একটু গাড়িতে চেপে নিয়ে সামাল দিচ্ছেন। এই ক’টা দিন গরম মলম পায়ের পাতায় মালিশ করে শুতে যাচ্ছেন। সিঙ্গুরের সাহানাপাড়া থেকে শুরু হওয়া পদযাত্রার হুগলি জেলার ৯০ কিলোমিটার অংশ যখন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোঘাটের হাজীপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানায় শেষ হল, সুদর্শনবাবুদের মুখে অনেকটা যেন বিসর্জন ভালয় ভালয় মিটে যাওয়ার পরে পুজোর উদ্যোক্তা-সুলভ হাসি!

সিঙ্গুরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শিল্পের দাবিতে পদযাত্রা সূচনা করার পরে বাম মহলে এ বারের অভিযান নিয়ে আগ্রহ বিপুল। উৎসাহ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েই নেতারা অবশ্য পরে ঠেলা টের পাচ্ছেন! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য সুজন চক্রবর্তী ও রবীন দেব পায়ে স্নিকার্স পরেই হুগলি এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মাইলের পর মাইল হেঁটে কাতর। বর্ষীয়ান নেতা শ্যামল চক্রবর্তী মনের জোরে প্রথমে হলদিয়া, পরের দিন বাঁকুড়ায় একটু হেঁটেছেন। শেষমেশ এ দিন আর পশ্চিম মেদিনীপুরের রামজীবনপুরে তাঁর আসা হয়নি। তাঁর পরিবর্ত হিসাবে রামজীবনপুর থেকে ক্ষীরপাই পর্যন্ত পদযাত্রা কাবুলি জুতো পরে সারছিলেন তরুণ সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন জেলা সম্পাদক দীপক সরকার হাঁটতে হাঁটতেই স্মরণ করাচ্ছিলেন ঠেলা বোঝা যাবে দ্বিতীয়ার্ধে! মধ্যাহ্ন ভোজের পরে চন্দ্রকোনা পর্যন্ত যাওয়ার পথে জুতো বদলে স্নিকার্সে যেতে হল ঋতব্রতকে। তিনি অবশ্য দাবি করছিলেন, ‘‘তৃণমূল বলছে বিরোধীদের দেখতে দূরবীন লাগবে! এখানে এসে যখন দেখছি আল ধরে মানুষ এগিয়ে আসছে, হাত মেলাচ্ছে, ওই দূরবীনের কথা মনে পড়ছে! কষ্ট কিছু মালুমই হচ্ছে না!’’

তবে নির্ভেজাল হাঁটার আবার সুফলও তো আছে! ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায় যেমন বাড়ি থেকে বেরোন ইনস্যুলিন নিয়ে। সকালে পাড়ায় হাঁটেন। চিকিৎসক তাঁকে বলেছেন, হাঁটাহাঁটিতে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মাঝেমধ্যে হাঁপ ধরে এলেও শিবু মালিক, বিশ্বনাথ কারকদের সঙ্গে নিয়ে বৈদ্যবাটীর নরেনবাবু তাই পা চালাচ্ছেন!

সুগার-স্নিকার্স বা অন্য কোনও কিছুতেই যায় আসছে না অবশ্য এক জনের। বয়স ৭৬। যাঁকে হাঁটতে দেখে নমস্য ভঙ্গিতে সুদর্শনবাবু বলেছিলেন, ‘‘উনি এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ!’’ উত্তরপাড়ার প্রাক্তন বিধায়ক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলছিলেন, ‘‘উনি হচ্ছেন সেই মানুষ, যাঁর আমাদের দলে সব থেকে বেশি বার রক্ত দেওয়া এবং হাঁটার রেকর্ড রয়েছে।’’ কাঁধে ছোট তোয়ালে ফেলে তিনি অতএব অম্লান বদলে হাঁটছেন। সোমবার মহিষাদলে, মঙ্গলবার গোঘাটে, বুধবার চন্দ্রকোনায়। রাতে থাকছেন এক একটা দলীয় কার্যালয়ে। হাঁটতে হাঁটতে পথের পাশে জনতাকে শুধু বলছেন, ‘‘ভাল থাকবেন, ভাল রাখবেন!’’ আর প্রশ্ন করলে আমল না দিয়ে বলছেন, ‘‘হাঁটা নিয়ে আবার এত কথার কী আছে? আমি এমনিই হাঁটি! চটি পরেই দিব্যি চলছি।’’

হেঁটে শিল্প আসুক না আসুক, বিমান বসু আছেন। হণ্টন-শিল্পও আছে!

sandipan chakrabarty cpim jatha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy