বিকিকিনি: দোকান খুলেছে চকবাজারে। —নিজস্ব চিত্র।
দু’মাস আগে অবধি কথায় কথায় ফতোয়া জারি করতেন তিনি। এখন সাঁড়াশি চাপে পড়ে মেপে পা ফেলছেন সেই বিমল গুরুঙ্গই। মোর্চার অন্দরের খবর, এই অবস্থায় ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা বুদ্ধি দিয়েছিলেন, জামুনিতে বড় মাপের সভায় ‘আত্মপ্রকাশ’ করে বরং গ্রেফতার হোন মোর্চা সভাপতি। গুরুঙ্গ কিন্তু তাতে রাজি নন। বরং, আপাতত দেওয়ালি অবধি দিল্লিতে দৌত্য চালিয়ে গ্রেফতারি এড়াতেই বদ্ধপরিকর তিনি। সঙ্গে সংগঠন ধরে রাখার চেষ্টাও চালিয়ে যেতে চান।
আরও পড়ুন: নেতাদের বাড়িতেই দফতর পাহাড়ে
কোন সাঁড়াশি চাপে দাপুটে মোর্চা প্রধানের এমন দশা? মোর্চার নেতারা জানান, প্রথমত, তিনি ইউএপিএতে অভিযুক্ত। ভানুভবন মামলায় তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও লুক-আউট নোটিসও জারি হয়েছে। পুজোর মধ্যেও রঙ্গিতের ধারে পাহাড়ি উপত্যকায়, চা বাগানে, একাধিক হোম স্টে-তে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। তাই পালিয়ে বেড়ানো ছাড়া উপায় নেই। দ্বিতীয়ত, বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপা জিটিএ-র কেয়ারটেকার বোর্ডের মাথায় বসে প্রশাসনিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে টানছেন। রোজই দার্জিলিঙে বিনয়ের বাড়িতে, কার্শিয়াঙে অনীতের অফিসে মোর্চা নেতা-কর্মীদের ভিড় উপচে পড়ছে। ১০৪ দিনের বন্ধে আর্থিক সমস্যায় পড়া বহু মানুষকে সাহায্যও করছেন দু’জন। এত দিন এই ‘সাহায্য’ গুরুঙ্গ একা হাতে করতেন। ফলে, পাহাড়ের বহু দলীয় দফতরেই গুরুঙ্গ-অনুগামীদের দাপট কমেছে। বিনয়-অনীতরাও ছোটখাটো অফিসে চলে যাচ্ছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ডেকে পরামর্শ করছেন। জিএনএলএফ, জন আন্দোলন পার্টি, গোর্খা লিগের নেতাদের ফোন করছেন। ১৬ অক্টোবর নবান্নে যে সর্বদল বৈঠক হবে, সেখানে পাহাড়ের সব দলের লোকদের হাজির করানোটাও নিশ্চিত করতে চাইছেন বিনয়রা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘এখন থেকে পাহাড় কারও একার ফতোয়ায় চলবে না। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন থেকে পাহাড়ের উন্নয়ন, সব দলকে সঙ্গে নিয়েই হবে।’’
বিনয়-অনীতদের অস্থায়ী বোর্ডের মাথায় এনে কৌশলী চাল দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন আলোচনায় বসতে গেলে জিটিএ প্রতিনিধি হিসেবে বিনয়দের স্বাগত জানাতে হবে কেন্দ্রকেও। গত ২৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানান, ১৫ দিনের মধ্যে পাহাড় নিয়ে আলোচনায় বসতে বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্রসচিবকে। যদিও আলোচনা কাদের নিয়ে হবে, তা স্পষ্ট হয়নি। মোর্চার কট্টরপন্থীদের কয়েক জন জানান, সে ক্ষেত্রে ১১ অক্টোবরের মধ্যেই এই সংক্রান্ত চিঠি আসা উচিত, তা সে কেন্দ্রই পাঠাক বা রাজ্যের মাধ্যমেই আসুক। এ সব কথা মাথায় রেখেই ফরমান জারির অভ্যেস আপাতত ছাড়তে হয়েছে গুরুঙ্গকে।
মামলা এড়িয়ে, বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপাকে টপকে কবে, কী ভাবে ফের স্বমহিমায় ফিরবেন গুরুঙ্গ, তা নিয়ে অনুগামীদের সংশয় জোরদার হচ্ছে। যদিও মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য জানান, যথাসময়েই আত্মপ্রকাশ করে সভাপতি দেখিয়ে দেবেন, তিনিই পাহাড়ে এখনও এতটুকুও অপ্রসাঙ্গিক হননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy