পুজোয় বইয়ের বিপণিতে বিমান বসু। নিজস্ব চিত্র।
বয়সের নীতি মেনে আগামী পার্টি কংগ্রেসেই তাঁর কমিটির পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার কথা। সম্মেলনের সেই পর্বের আগে শেষ পুজোর অবসরে দলের কর্মীদের বড় অংশের কাজের কড়া সমালোচনা উঠে এল প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসুর কলমে। নিজের দীর্ঘ পার্টি জীবনের অভিজ্ঞতার নিরিখে যিনি দেখিয়েছেন, যে লক্ষ্যের কথা বলে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ নেওয়া হয়, অনেকের কাজেই সেই প্রতিফলন নেই। কর্মীরা ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করছেন কি না, তা দেখার কাজে নেতৃত্বের ব্যর্থতা প্রসঙ্গেও স্পষ্ট কথা বলেছেন বিমানবাবু।
বিধানসভা নির্বাচনে এ বার রাজ্যে বামেরা নজিরবিহীন ভাবে শূন্য হয়ে গিয়েছে। তার জেরে বাম কর্মী ও সমথর্কদের মধ্যে হতাশার মনোভাব এসেছে বলে মেনে নিয়েছেন বিমানবাবু। কিন্তু সিপিএমের বর্যীয়ান পলিটবুরো সদস্ঠের মতে, সেখানেই বামপন্থীরা থেমে থাকতে পারেন না। দলের একটি মুখপত্রের শারদ-সংখ্যায় তিনি সাফ বলেছেন, ‘জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করছে কেন্দ্র ও রাজ্যের উভয় সরকার। আরএসএসের ফ্যাসিবাদী কায়দা এবং তৃণমূলের স্বৈরাচারী পদক্ষেপ সব ধরনের সচেতন নাগরিক সমাজ উপলব্ধি করছেন। এই সময়ে রাজ্যব্যাপী ছড়িয়ে থাকা পার্টি সদস্যদের সব ধরনের গণ-কর্মসূচিতে যে ভাবে রাস্তায় থাকা উচিত, তা কিন্তু সব সময়ে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না’। আন্দোলন থেকে পিছিয়ে পড়লে ‘রাজ্য রাজনীতিতে আমরা অপ্রাসঙ্গিক’— এই প্রচারের মোকাবিলা যে করা যাবে না, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান। তাঁর মত, ‘এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতেই হবে। নতুবা তরুণ প্রজন্মের মনোজগতে আকর্ষণ সৃষ্টির কাজে সমস্যা দেখা যাবে’।
সংগঠনের নির্দিষ্ট দায়িত্ব যে দলের সদস্যদের অনেকেই প্রত্যাশিত ভাবে পালন করেন না, তা-ও এ বার খোলাখুলি উল্লেখ করেছেন বিমানবাবু। কেউ শুধু বৈঠকে অংশগ্রহণ করেই দায় সারেন, কেউ কেউ দলের নিয়মিত চাঁদা দেন না। অথচ দায়বদ্ধতা বেঁধে দেওয়া, ত্রুটির জন্য সংশ্লিষ্ট সদস্যদের জবাবদিহি চাওয়া এবং প্রয়োজনে সদস্যপদ বাতিল করার মতো পদক্ষেপ ঠিক মতো হয় না কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রবীণ নেতা। তাঁর প্রশ্ন, ‘আমি অনেক কম বয়স থেকে জেনে এসেছি, কমিউনিস্ট পার্টি সক্রিয় সদস্যদের পার্টি। কোনও কারণ ছাড়াই দৈনন্দিন কোনও কাজে অংশগ্রহণ করেন না, শুধু পার্টির দেয় জমা দিয়ে সদস্যপদ রক্ষা করেন যাঁরা, তাঁরা পার্টিতে থাকবেন কেন’? দলে ‘নিষ্ক্রিয়’ লোকজন থেকে গেলে তরুণ প্রজন্ম কাজ করতে উৎসাহী হবেন না বলেই আশঙ্কা অশীতিপর নেতার।
বয়সে প্রবীণ হলেও দলের যে কোনও কর্মসূচিতে এখনও নিয়মিত হাজির থাকেন বিমানবাবু। ষষ্ঠীর সন্ধ্যাতেও কলেজ স্কোয়ারে বামপন্থী পুস্তক বিপণি উদ্বোধন করে বই বিক্রিতে হাত লাগিয়েছেন। তাঁর দর্শন হল, দলে থাকবেন কাজ করেই। এ বার নিজের কলমে আক্ষেপের সুরে লিখেছেন, ‘আমার ব্যক্তিগত পার্টিজীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কোনও কোনও ক্ষেত্রে পার্টিসভ্যদের জন্য যে কর্তব্যগুলি নির্দিষ্ট রয়েছে, তা পালন না করলেও অধিকারসমূহ পালন করার জন্য সংশ্লিষ্ট পার্টিসভ্যদের কোনও লজ্জাবোধ থাকে না’!
বস্তুত, দলের জন্য আত্মসমীক্ষার সুরেই বিমানবাবু এ বার ‘পরিবর্তনপন্থী’! তাঁর লেখার শিরোনাম— ‘গঠনতান্ত্রিক বিধান মান্য করে কাজের ধারার পরিবর্তন চাই’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy