Advertisement
E-Paper

অ্যাকাউন্টে কি চালের ভূত

সিবিআইয়ের নজরে থাকা অ্যাকাউন্টগুলি সঙ্গে যাঁদের নাম-ঠিকানার মিল রয়েছে, তাঁদের অনেকেই জানেন না, সমবায় ব্যাঙ্কে তাঁদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৪
তদন্তকারী সংস্থার অনুমান, খাদ্য দফতরের সঙ্গে চালকল মালিকদের যোগসাজশে ভুয়ো চাষি সাজিয়ে ধান কেনা হতে পারে।

তদন্তকারী সংস্থার অনুমান, খাদ্য দফতরের সঙ্গে চালকল মালিকদের যোগসাজশে ভুয়ো চাষি সাজিয়ে ধান কেনা হতে পারে। ফাইল চিত্র।

বীরভূমে গরু-পাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে গোড়াতেই চালকল যোগ পেয়েছিল সিবিআই। এ বার চালকল থেকে টাকা সমবায় ব্যাঙ্কের ‘ভূতুড়ে’ অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল কি না, সেই সন্দেহ জোরালো হল।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সিউড়ির মূল শাখায় হানা দিয়ে ১৭৭টি ভুয়ো অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে সিবিআই। ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক আড়ালে মানছেন, ‘‘সিবিআই যে অ্যাকাউন্টগুলি খতিয়ে দেখে নথি সংগ্রহ করেছে, সেগুলিতে ধান সংগ্রহ সংক্রান্ত বেশ কিছু লেনদেন হয়েছে। সবই ডিজিটাল বা নেট ব্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমে।’’ সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠছে, ধান কেনার দায়িত্বে থাকে যে খাদ্য দফতর, তার আধিকারিকদের নজর এড়িয়ে এমন ‘ভুয়ো’ চাষিদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকানো হল কী করে?

জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পরেই অনুব্রত ‘নিয়ন্ত্রিত’ ভোলেবোম ও শিবশম্ভু চালকলে তল্লাশিও চালায় সিবিআই। গরু পাচার মামলায় আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে নেমে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-ও দাবি করে, গরু পাচারের টাকা চালকলে বিনিয়োগ হতে পারে। এ বার ভুয়ো অ্যাকাউন্টে ধান কেনার লেনদেন নজরে আসতে খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের কার্যকলাপও নজরে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে দাবি।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এক জন চাষিকে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে হলে আগে জমির দলিল, সচিত্র পরিচয়পত্র, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে হত। চলতি বছর থেকে নিয়ম আরও কঠোর হয়েছে। গোটা ব্যবস্থাও অনলাইন হয়েছে। নির্দিষ্ট দিনে চাষিদের বিক্রি করা ধান, চালকল মালিক নিয়ে যান। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এর পরে চাষিদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যায়। এখানে যদি কোনও চাষি ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন, খাদ্য দফতরের সঠিক নজরদারি হলে সেটা ধরা পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যে ভাবে শতাধিক বাসিন্দার অজ্ঞাতসারে তাঁদের নথি ব্যবহার করে ‘ভুয়ো’ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এবং সেই অ্যাকাউন্টে ধান সংগ্রহের লেনদেন হয়েছে, তা খাদ্য দফতরের নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকে যুক্ত না থাকলে সম্ভব নয় বলে তদন্তকারীদের দাবি।

সিবিআইয়ের নজরে থাকা অ্যাকাউন্টগুলি সঙ্গে যাঁদের নাম-ঠিকানার মিল রয়েছে, তাঁদের অনেকেই জানেন না, সমবায় ব্যাঙ্কে তাঁদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এমনকি মৃতের নামেও অ্যাকাউন্ট পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, চালকলের টাকা রাখতেই ওই সব অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হতে পারে।

তদন্তকারী সংস্থার অনুমান, খাদ্য দফতরের সঙ্গে চালকল মালিকদের যোগসাজশে ভুয়ো চাষি সাজিয়ে ধান কেনা হতে পারে। ফলে ধান বিক্রির টাকা ঢুকলে ‘ভুয়ো’ অ্যাকাউন্ট থেকে তা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। অন্য মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকায় যাঁদের নথি ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল, তাঁরাও লেনদেনের তথ্য জানতে পারেননি।

খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘জেলায় কমবেশি ২৫টি কেন্দ্রীয় ধান সংগ্রহ কেন্দ্র ও বেশ কিছু সংখ্যক কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি থেকে ধান কেনা হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের ভুয়ো অ্যাকাউন্টে যে টাকা ঢুকেছে, সেটা কোথা থেকে, তা তদন্তসাপেক্ষ।’’

CBI Bank Accounts Birbhum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy