রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিন হাতির হানায় পরীক্ষার্থী অর্জুন দাসের মৃত্যুর খবর নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে। ফাইল চিত্র।
সামনের বাড়ির ছেলে মাধ্যমিকের ফল হাতে হাসিমুখে স্কুল থেকে ফিরল। পিছনের বাড়ির ছেলে বলে গেল— ‘‘কাকু, পাশ করেছি!’’ তিন-চারটে বাড়ির পরে থাকা বন্ধু ফোন করে জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে মাধ্যমিকে পাশ করেছে। চার দিকে খুশির খবর। কিন্তু জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া মহারাজ ঘাটের বাড়ির দোরের সামনে বসা বিষ্ণু দাসের মুখে পড়ন্ত বেলার ছায়া। বলছেন, ‘‘ছেলেটা থাকলে, নিশ্চয়ই পাশ করত!’’
এখনও দৃশ্যটা ভাসে বিষ্ণুর চোখের সামনে। স্কুলের পোশাক পরা ছেলেকে মোটরবাইকে বসিয়ে চলেছেন মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে। জঙ্গলপথে আচমকা সামনে আসা হাতি তাড়া করল তাঁদের। ছেলেকে শুঁড়ে তুলে আছড়ে, পিষে দিল দাঁতাল! গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিন হাতির হানায় পরীক্ষার্থী অর্জুন দাসের মৃত্যুর খবর নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে।
শুক্রবার গোটা রাজ্য যখন মাধ্যমিকের কৃতী এবং সফলদের নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত, তখন কাজে না গিয়ে দরজার সামনে বসে থাকা বিষ্ণু বললেন, ‘‘আমার ঘরেও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল! পরীক্ষা দিতেই নিয়ে যাচ্ছিলাম! আর ফিরবে না!’’
পরিচিত কেউ কেউ মোবাইলে ফোন করছেন। ফোন তুলছেন না বিষ্ণু। এক-দু’বার ফোন ধরছে ছোট ছেলে দীপাঞ্জন। দাদার পড়ার ঘরের দখল এখন তার। দখল দাদার পড়ার টেবিলেরও। দীপাঞ্জন বলল, ‘‘দাদা পড়াশোনায় ভাল ছিল। গ্রামে দাদার বন্ধুরা সবাই পাশ করেছে। দাদা থাকলে, দাদাও পাশ করত!’’
দুপুরের আকাশে কালো মেঘ। বৃষ্টি হতে পারে। চালে প্লাস্টিক বিছোতে হবে। বিষ্ণু হঠাৎ উল্টো দিকে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলের দিকে আঙুল দেখালেন। ওই জঙ্গলপথেই ছেলেকে নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিন। ওই জঙ্গলের কাছেই এক টুকরো জমিতে ছেলের শেষকৃত্য হয়েছে। বিষ্ণু বললেন, ‘‘ছেলের শেষ কাজ যেখানে করেছি, সেখানেও সে দিন হাতির দল এসেছিল। প্রায় ২৫টি হাতি।’’
জঙ্গলের উপরের আকাশে কালো মেঘ উড়ছে। ঘরে ঢোকার আগে, বিষ্ণু দাস বলে গেলেন, ‘‘আমি আর ও দিকে যাই না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy