Advertisement
E-Paper

নাগালে লকেট, জমে গেল ভিড়

গেরুয়া পতাকায় মোড়া প্রচার-গাড়ির কাটআউটটা নজরে আসতেই দ্রুত হাত চালাচ্ছিলেন ওঁরা। তড়িঘড়ি কাজ না সারলে যদি দেখা না হয়!মাঝারি পাড়ার লতিকা দে, সনকা দাসরা তখন ঘাটে বাসন মাজছিলেন। ভর দুপুরে দাওয়ায় বসে কুলো কোলে নিয়ে বিড়ি বাঁধছিলেন সধবা বিবি, হাসিবা বিবিরা।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:১২
পথের আশীর্বাদ। ভোটের প্রচারে বিজেপি নেত্রীকে ঘিরে ভিড়। সোমবার ময়ূরেশ্বরে ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

পথের আশীর্বাদ। ভোটের প্রচারে বিজেপি নেত্রীকে ঘিরে ভিড়। সোমবার ময়ূরেশ্বরে ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

গেরুয়া পতাকায় মোড়া প্রচার-গাড়ির কাটআউটটা নজরে আসতেই দ্রুত হাত চালাচ্ছিলেন ওঁরা। তড়িঘড়ি কাজ না সারলে যদি দেখা না হয়!

মাঝারি পাড়ার লতিকা দে, সনকা দাসরা তখন ঘাটে বাসন মাজছিলেন। ভর দুপুরে দাওয়ায় বসে কুলো কোলে নিয়ে বিড়ি বাঁধছিলেন সধবা বিবি, হাসিবা বিবিরা। গরুর ‘জাবনা’ জোগাড়ে ব্যস্ত ছিলেন রমজান শেখ, কালো বাগদিরা। এমন সময়ে তিনি চলে এলেন। মুহূর্তে রটে গেল খবরটা। জমে গেল ভিড়!

প্রথম প্রচারেই ঝড় তুললেন ময়ূরেশ্বরে বিজেপি-র তারকা প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। স্কুল পড়ুয়া, গৃহবধূ থেকে বিড়ি শ্রমিক— সকলের সঙ্গে মিশে গেলেন নিমেষে।

পৌনে এগারোটা নাগাদ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে রামপুরহাট স্টেশনে পৌঁছন লকেট। তখন বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে শ’তিনেক বিজেপি কর্মী। কখনও গাড়িতে, কখনও দলীয় কর্মীদের সঙ্গে পা মিলিয়ে তারাপীঠে পৌঁছন লকেট। পুজো দিয়ে প্রচারের শুরুতেই যান ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রান্তিক গ্রাম মাঝারি পাড়ায়। মিনিট পনেরো আগেও ওই গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময়ে গ্রামবাসীর কোনও কৌতূহল দেখা যায়নি। লকেটের কাট আউট সাঁটানো গাড়ি ঢুকতেই সকলে বুঝে যান অভিনেত্রী এসে গিয়েছেন।

তারপরেই শুরু উন্মাদনার। অভিনেত্রীকে একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য লোকজনের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আকুলতা দেখে গাড়ি থেকে নামেন লকেট। রাইধোনি মণ্ডল, ছবি মণ্ডলদের কাছে গিয়ে মাথা নামিয়ে বলেন, “আশীর্বাদ করুন। যেন আবার আপনাদের কাছে আসতে পারি।” তখন লকেটের হাত ধরে রয়েছেন হাসিবা বিবি, শুকতারা বিবিরা। হাত ধরেই গ্রামের মধ্যে হাঁটতে থাকেন লকেট। ইতিমধ্যে ঘাটে হাত ধুয়ে মেয়ে টিয়াকে কোলে তুলে এসে গিয়েছেন হাজির হন কল্যাণী বাগদী। অভিনেত্রীকে ছোঁয়ার জন্য হাত বাড়াতেই কোল থেকে মেয়েকে তুলে নিয়ে গাল টিপে আদর করে হাঁটতে শুরু করেন অভিনেত্রী।

তখন লকেটের পিছু নিয়েছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে লকেট বলেন, “আপনারা ফিরে যান। বাড়ির কাজ করুন। আমি আবার আসব।” আনারকলি বিবি, সাহিদা বিবিরা প্রত্যুত্তরে আশীর্বাদ করে বলেন, ‘‘তাই এস মা। আবার যেন তোমার দেখা পাই।’’ একই ভাবে সন্ধিগড়া বাজার গ্রামে গাড়ি থেকে নামেন লকেট। মিষ্টিমুখ করান অলকা মণ্ডল, মায়রানি মণ্ডলরা। কামড়াঘাট হয়ে পৌঁছন কালিকাপুর বাসস্ট্যান্ডে। ওই এলাকায় বাড়ি বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি অর্জুন সাহার। অর্জুনবাবুর স্ত্রী কৃষ্ণাদেবী মিষ্টিমুখ করান। মহিলারা লকেটের মাথায় ফুল ছিটিয়ে দেন। ক্রমশ ব্রাহ্মণ বহড়া, ময়ূরেশ্বর ক্যানেল অফিস পেরিয়ে লকেটের গাড়ি গিয়ে থামে বিজেপি-র আর এক প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রয়াত অরুণাভ ঘোষের বাড়ি। সেখানেই মধ্যাহ্নভোজ।

বাড়ির সামনে স্কুলের ছেলেমেয়েদের দেখে লকেট প্রশ্ন করেন, ‘‘হ্যাঁ রে, তোরা স্কুলে যাস তো? মাস্টারমশাইরা মারেন?’’— পরপর দু’টি উত্তরে ‘হ্যাঁ’ শুনতেই হেসে ফেলেন অভিনেত্রী। যোগ করেন, “তা হলে নিশ্চয়ই তোরা দুষ্টুমি করিস।’’ ফের আসার আশ্বাস দিয়ে এক সময় উঠে পড়েন লকেট। এরপরেই ময়ূরেশ্বরের এক অনুষ্ঠান ভবনে কর্মিসভায় যোগ দেন। ঘণ্টাখানেকের সভা শেষে মিছিল। তারপরে ফেরা।

এ দিনের কর্মসূচিতে তারকা-প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি-র জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়, প্রাক্তন জেলা সভাপতি অর্জুন সাহা, সাত্তোরের নির্যাতিতা-সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। দেখা মেলেনি সন্ন্যাস ভেঙে রাজনীতির ময়দানে ফেরা প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের। পরে সন্ধ্যায় দুধকুমারের কোটাসুরের বাড়িতে যান লকেট। ঘণ্টাখানেক কথা বলেন। লকেটের কথায়, ‘‘উনি আমার দাদার মতো। আশীর্বাদ চেয়েছি। আগামী দিনে প্রচারেও থাকবেন।’’ পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন দুধকুমারও।

নির্বাচনী এলাকা ঘুরে অভিভূত লকেট। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভাবতেই পারিনি এত স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাব। আসলে মানুষের মনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচুর ক্ষোভ জমে রয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এমনকী, নিরাপত্তাটুকুও নিশ্চিৎ করতে পারেনি ওই দল।’’ লকেটের প্রতিশ্রুতি, ‘‘ভোটে জিতলে ময়ূরেশ্বরের মেয়ে হয়ে বীরভূমবাসীর জন্য কাজ করব।’’ কয়েক মাস আগে ময়ূরেশ্বর চারবারের বিধায়ককে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। সে প্রসঙ্গ তুলে লকেটের মন্তব্য, ‘‘একজন জনপ্রতিনিধির যদি এ রকম অবস্থা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা ভাবুন!’’

লকেটের এ দিনের প্রচার, অভিনেত্রীকে ঘিরে উন্মাদনা দেখে অনেকের বীরভূম লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের কথা মনে পড়েছে। ঠিক এমন ভাবেই বছর সাতেক আগে শতাব্দী মিশে গিয়েছিলেন বীরভূমের গ্রামগুলিতে। প্রবল উন্মাদনার মাঝে গ্রামের পরে গ্রাম ঘুরে জয়ী হন শতাব্দী। ঘুরছেন লকেট! ভিড়ও জমছে।

(সহ প্রতিবেদন: অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়)

BJP candidate election assembly election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy