রাজ্যে শিল্প বেহাল। তোলাবাজির দাপট। এই অবস্থায় লগ্নি আনতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদেশ যাত্রা নিয়ে আগেই সংশয় প্রকাশ করেছিল বিরোধীরা। এ বার মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গাপুর রওনা হওয়ার প্রাক্ কালে ওই সফর নিয়ে কটাক্ষের মাত্রা বাড়িয়ে দিল বিজেপি। অন্য দুই বিরোধী বাম এবং কংগ্রেস ওই সফর নিয়ে প্রশ্ন তোলা অব্যাহত রাখল।
সারদা-দুর্নীতির টাকা রাখতেই মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর যাত্রা কি না, তা নিয়ে শনিবার প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বিষয়টিকে কোনও গুরুত্বই দেননি।
এ দিন গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ‘ক্রীড়াপ্রেমী দিবস’ পালনের পর সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পাঁচ দিনের জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। কিন্তু সেখানে বৈঠক তো এক দিনের! তা হলে বাকি চার দিন তিনি কী করবেন? সারদা প্রভৃতি দুর্নীতির টাকা রেখে আসার ব্যবস্থা করবেন না তো?”
সিদ্ধার্থনাথের আরও কটাক্ষ, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঙ্গল লিড্স করেছেন। কিন্তু আসলে বেঙ্গল ব্লিডস! শিল্পায়ন তো হলই না। উল্টে একের পর এক শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!” বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তিরও প্রশ্ন পাঁচ দিন মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গাপুরে কী করবেন?
সিদ্ধার্থনাথের ওই কটাক্ষকে গুরুত্বই না দিয়ে তৃণমূল নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “বিজেপি সরকারের অনেক দুর্নীতি আছে। আগে তার জবাব দিন। তার পরে অন্য প্রশ্নের অবতারণা করবেন।”
মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফর নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। এ দিন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম সিদ্ধার্থনাথের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, “সারদার টাকা কাদের কাছে গিয়েছে, সেই তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সারদার টাকা যে বিদেশে গিয়েছে, সে কথাও তদন্তকারীরা বলেছিলেন। ফলে এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকছেই।”
পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সব দাবি ‘অস্বচ্ছ’ বলে অভিযোগ করে সেলিম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফরের উদ্দেশ্য, সফরসঙ্গী কারা, এ সব নিয়ে একটা রহস্যময়তা রাখা হয়েছে।”
বিজেপি নেতার মন্তব্য নিয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া না দিলেও মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফরে রাজ্যে বিনিয়োগ আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, “বিজেপি নেতারা কী বলেছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করছি না। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিঙ্গাপুর যাত্রায় কিছুই হবে না।” অধীরবাবুর দাবি, “পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের খুবই দুরবস্থা। মমতার মুখ দেখে তো আর বিনিয়োগকারীরা এখানে আসবেন না! বিনিয়োগের পরিকাঠামো থাকলে তবেই তাঁরা আগ্রহী হবেন। সে পরিকাঠামো এখানে নেই।”
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফরকে বিদ্রূপ করতে ছাড়েননি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর যাত্রার সঙ্গীদের নিয়ে। রাহুলবাবুর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী নাকি শিল্প ধরতে যাচ্ছেন! তা হলে তো সরকারি কর্তা এবং শিল্পপতিদের তাঁর সঙ্গে যাওয়ার কথা। কিন্তু যাচ্ছেন গায়ক, নায়ক! তা হলে কি সেখানে ফূর্তির শিল্প হবে?” মুখ্যমন্ত্রী মুম্বইতে শিল্প সম্মেলন করেছিলেন। তার পরেও এ রাজ্যে কোনও বিনিয়োগ আসেনি বলে রাহুলবাবু অভিযোগ করেন। তাঁরও মত, রাজ্যে বিনিয়োগের প্রধান প্রতিবন্ধক জমি নিয়ে সরকারের অনড় মনোভাব এবং শিল্প বিকাশের উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy