Advertisement
০৫ মে ২০২৪
BJP

ঘোষের ‘জোশ’ দেখানো ঘরে তালা! বিজেপির আদি দফতরে ‘অনুপ্রবেশ’ রুখতে সিদ্ধান্ত, বলছেন পদ্ম নেতারা

দলকে না জানিয়ে রাজ্য দফতরে অনুগামীদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনী করেছিলেন দিলীপ ঘোষ। তার পরেই কর্মসূচি হওয়া সেই হলঘরটিতে তালা ঝোলাচ্ছে রাজ্য বিজেপি।

৩০ অক্টোবর রাজ্য দফতরে হওয়া দিলীপ ঘোষের বিজয়া সম্মেলনী।

৩০ অক্টোবর রাজ্য দফতরে হওয়া দিলীপ ঘোষের বিজয়া সম্মেলনী। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৫১
Share: Save:

দলীয় ঘোষণা ছাড়াই রাজ্য বিজেপির ‘আদি’ দফতরে অনুগামীদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনী করেছিলেন মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। অভিযোগ, গত সোমবারের সেই কর্মসূচির কথা আগে থেকে দলকে জানাননি প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। একই সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে ওঠা স্লোগান বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বকে ‘অস্বস্তি’তে ফেলেছে। ভবিষ্যতে যাতে আর কোনও নেতা এমন ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণ’ না হয়ে ওঠেন, সে জন্য ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের সেই হলঘরে তালা ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। এ জন্য আলাদা করে কোনও ঘোষণা না-হলেও দল ঠিক করেছে, নির্দিষ্ট কর্মসূচি থাকলেই ওই হলঘরের দরজা খোলা হবে। আগের মতো সব সময়ে খোলা থাকবে না।

কয়েক মাস আগে থেকেই রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা হচ্ছে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের একটি বাড়ি থেকে। ভাড়া নেওয়া বাড়িতেই তৈরি হয়েছে রাজ্য দফতর। রাজ্য নেতাদের আলাদা আলাদা ঘরও রয়েছে সেখানে। সেই সঙ্গে দলের সব ক’টি মোর্চার জন্যও রয়েছে ঘর। অন্য দিকে, ঠিক হয়েছে পুরনো দফতরে তৈরি হবে রাজ্য দলের ‘কল সেন্টার’। এর পাশাপাশি কলকাতা উত্তর লোকসভা এলাকা নিয়ে যে জেলা, তারও দফতর থাকবে মুরলীধর সেন লেনের ওই বাড়িতে। এখন সেই সংস্কারের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই উপরের দিকের অনেক ঘর ভেঙে কাজ চলছে। অস্থায়ী ভাবে দফতর সামলাচ্ছেন কলকাতা উত্তরের জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ। বাকি কোনও নেতার জন্যই আর ঘর নেই। তবে অক্ষত রয়েছে একতলার হল ঘরটি। সেখানে এখনও মাঝে-মধ্যে সাংবাদিক বৈঠক হয়।

সেই ঘরটিতেই গত সোমবার অনরাগীদের দেওয়া মুকুট পরে বিজয় সম্মেলন করেছিলেন দিলীপ। সেখানে স্লোগান উঠেছিল, ‘‘হাউ ইজ় দ্য জোশ! দিলীপ ঘোষ, দিলীপ ঘোষ।’’ দলের পক্ষে কোনও ঘোষণা না-করা হলেও দিলীপের তরফে আলাদা করে সংবাধমাধ্যমের কাছে এই কর্মসূচির কথা বলা হয়েছিল। দিলীপের পাশাপাশি কলকাতা এবং আশপাশের জেলা থেকেও কর্মীরা চলে এসেছিলেন। সংখ্যায় খুব বেশি না-হলেও সরু রাস্তার জমায়েতে ‘উল্লাস’ ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই ভিড়ে দেখা যায়, সম্প্রতি তৈরি হওয়া ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’র নেতাদেরও। ‘জোশ’-এর সঙ্গে ‘ঘোষ’ মিলিয়ে স্লোগানের পাশাপাশি শোনা যায়, ‘‘হামারা মুখ্যমন্ত্রী ক্যায়সা হো! দিলীপ ঘোষ জ্যায়সা হো!’’

দিলীপের এই কর্মসূচির পরেই দলে সমালোচনা শুরু হয়। বিজেপির মতো একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ দলে এমন আচরণ কি করা যায়? এক জন প্রবীণ নেতা, যিনি এক সময়ে আরএসএস প্রচারক থেকে বিজেপিতে এসে রাজ্যের সভাপতি এবং সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হন, তিনি কেন দলকে না-জানিয়ে এমনটা করলেন? প্রকাশ্যে কেউ সমালোচনা না-করলেও দলের ভিতরে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর পরেই মুরলীধরের হলঘরে তালা ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, এখন থেকে কোনও মোর্চা, শাখা বা কলকাতা উত্তরের কর্মসূচির জন্য ওই হলঘর প্রয়োজন হলে আগে থেকে রাজ্য নেতৃত্বের অনুমতি নিতে হবে।

এমন সিদ্ধান্তের কথা মানলেও রাজ্য নেতারা কেউই এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। কেন এমন সিদ্ধান্ত তা নিয়ে কথা বললেও রাজ্য স্তরের এক নেতা বলেন, ‘‘পুরনো কোনও কর্মসূচির প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বলা যাবে না। আগে থেকেই এটা ঠিক হয়েছিল যে, বাকি বাড়িতে সংস্কারের কাজ চলার সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ওই ঘরে রাখা হবে। সেটা চলছে। এর পরে নিরাপত্তার কারণেই ওই ঘরে তালা দিয়ে রাখা হবে।’’ ওই নেতা একই সঙ্গে জানিয়েছেন, ঘরটি খোলা থাকায়, অনেক সময়ে অনুমতি বা আমন্ত্রণ ছাড়াই অনেকে এসে হলঘরে বসে থাকেন। এসি, ফ্যান, আলো জ্বলতেই থাকে। সে সবও বন্ধ করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত।

ওই ঘর বন্ধ করা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দিলীপও কোনও মন্তব্য করেননি। তবে দিলীপ-অনুগামীরা বলছেন, সোমবার ‘আদি’দের ‘জোশ’ দেখেই ভয় পেয়ে গিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। দিলীপের অনুষ্ঠানে হাজির থাকা এক আদি নেতার বক্তব্য, ‘‘একটা কবিতা মনে পড়ছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি। সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি? এ বার সত্যিই দেখা যাচ্ছে, রাজ্য নেতৃত্ব ‘সত্য’কে ঢুকতে দিতে চাইছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Dilip Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE