Advertisement
E-Paper

পাড়ুইয়ের সদাই গ্রেফতার, তোপ বিজেপির

শান্তি বৈঠকের পরের দিনই পুলিশ ধরল পাড়ুইয়ের বিজেপি নেতা সদাই শেখকে। চৌমণ্ডলপুর গ্রামে ওসি-র উপরে হামলা চালানো এবং মাখড়ায় তৃণমূল কর্মী হত্যায় অভিযুক্ত সদাই শেখকে শনিবার গভীর রাতে বীরভূমের মহম্মদবাজার থানার ভাঁড়কাটা গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে হানা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। বিজেপি-র অভিযোগ, দু’মুখো নীতি নিয়ে চলছে জেলা পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৬
আদালতে সদাই শেখ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

আদালতে সদাই শেখ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

শান্তি বৈঠকের পরের দিনই পুলিশ ধরল পাড়ুইয়ের বিজেপি নেতা সদাই শেখকে।

চৌমণ্ডলপুর গ্রামে ওসি-র উপরে হামলা চালানো এবং মাখড়ায় তৃণমূল কর্মী হত্যায় অভিযুক্ত সদাই শেখকে শনিবার গভীর রাতে বীরভূমের মহম্মদবাজার থানার ভাঁড়কাটা গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে হানা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। বিজেপি-র অভিযোগ, দু’মুখো নীতি নিয়ে চলছে জেলা পুলিশ। অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক তকমা দেখেই তারা পদক্ষেপ করছে। বিজেপি-র বীরভূম জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের ক্ষোভ, “সদাই শেখ আমাদের দলের কর্মী। এফআইআর-এ নাম ছিল, পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে আইনত কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আমার প্রশ্ন, মাখড়া গ্রামেরই আমাদের সমর্থক তৌসিফ আলিকে যারা খুন করল, সেই তৃণমূল নেতাদের কেন ধরা হচ্ছে না?”

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক হিংসায় অশান্ত পাড়ুই অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে শুক্রবার সর্বদল বৈঠক হয় পাড়ুই থানায়। সেই বৈঠকে শাসকদলের নেতাদের মধ্যে তিন জন মুস্তাক হোসেন, নুরুল ইসলাম এবং শেখ মুস্তফা মাখড়ার তৌসিফ আলির খুনে প্রধান অভিযুক্ত। পুলিশ তাঁদের ধরেনি। প্রতিবাদে সভা ছেড়ে বেরিয়ে যায় বিজেপি এবং সিপিএম। সেই সূত্রেই সদাই শেখ গ্রেফতার হওয়ার পরে দুধকুমারের অভিযোগ, “আসলে শাসক দলের নেতাদের আড়াল করার জন্যই পুলিশের রাজনৈতিক পক্ষপাত দেখাচ্ছে!” এই পরিস্থিতিতে সদাইকে দলের তরফে সব রকমের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। সদাই এ দিন সিউড়ি আদালত চত্বরে দাবি করেন, “আমি কোনও অপরাধমূলক ঘটনার সঙ্গেই যুক্ত নই। অনুব্রত মণ্ডলের অনৈতিক দাবি মেনে নিইনি বলেই চক্রান্ত করে আমাকে ফাঁসানো হল।”

রবিবার বারবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “এফআইআরে কারও নাম থাকতেই পারে। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে। যাঁদের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা কেউ পালিয়েও যাননি। পুলিশ সব কিছুই তদন্ত করে দেখছে।” তা হলে সদাই গ্রেফতার কেন? ওই পুলিশকর্তার দাবি, চৌমণ্ডলপুর ও মাখড়ার ঘটনায় সদাইয়ের যুক্ত থাকার বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ তাঁদের কাছে রয়েছে। তা ছাড়া সদাই পালিয়েও বেড়াচ্ছিলেন।

শাসকদলের নেতাদের গ্রেফতারির ক্ষেত্রে পক্ষপাতের অভিযোগ অবশ্য বীরভূম পুলিশের ক্ষেত্রে নতুন নয়। দুবরাজপুর থানার এসআই অমিত চক্রবর্তী খুনে অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শেখ আলিমকে পুলিশ আজও ধরেনি। খয়রাশোলের লোকপুর ফাঁড়ি হামলাতেও অভিযুক্ত শাসক দলের নেতা-কর্মীদের পুলিশ গ্রেফতার করেনি। মাসখানেক আগে তাঁরা বিনা বাধায় সিউড়ি আদালতে আগাম জামিনও পেয়ে গিয়েছেন। বোলপুর থানায় ঢুকে পুলিশকর্মী পেটানোয় অভিযুক্ত যুব তৃণমূলের তৎকালীন জেলা সভাপতি সুদীপ্ত ঘোষের দু’ দু’বার আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হলেও বীরভূম পুলিশ তাঁকে ধরার সাহস করেনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২৪ অক্টোবর পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্তের উপরে হামলা এবং মাখড়ায় তৃণমূল কর্মী শেখ মোজাম্মেলকে খুন-সহ চারটি মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন চৌমণ্ডলপুরের বাসিন্দা সদাই শেখ। পুলিশের দাবি, শনিবার সন্ধ্যায় খবর আসে, ভাঁড়কাটায় সদাই তাঁর এক সম্পর্কিত বোনের বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন। গভীর রাতে সেখান থেকেই তাঁকে ধরা হয়। রবিবার দুপুরে সিউড়ি আদালত ধৃতকে বারো দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।

তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, একদা সিপিএম সমর্থক সদাই শেখ ২০০৫ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েত ও আশপাশের এলাকায় কার্যত সদাইয়ের নেতৃত্বেই তৃণমূল চলত। সমস্যা শুরু হয় গত বছর পঞ্চায়েতের বোর্ডগুলির গঠনের পর থেকেই। সব ক’টিতেই সদাই ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেন। পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজের ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে তখন থেকেই দলের একাংশের সঙ্গে সদাইয়ের বিরোধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। লোকসভা ভোটে জেতার পরেই অনুব্রত-গোষ্ঠী সদাইকে দল থেকে ছেঁটে ফেলে। সদাই যোগ দেন বিজেপি-তে। তার পর থেকেই পাড়ুইয়ে বিজেপি-র প্রভাব বাড়তে শুরু করে। এবং শাসকদলের সঙ্গে সংঘাতও বাড়তে থাকে বিজেপি-র।

সদাইকে যদিও সমাজবিরোধী বলেই দাবি করছেন তৃণমূলের পাড়ুই থানা কমিটির সভাপতি মুস্তাক হোসেন। তিনি বলেন, “সদাই অপরাধমূলক কাণ্ডে জড়িত। তাই ওকে দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল।” পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে বলেও তিনি মনে করেন। তাঁর যুক্তি, “মাখড়া পরবর্তী ঘটনায় এই পুলিশই তৃণমূল কর্মীদের সব থেকে বেশি ধরেছে। এর পরে কি বলা যায়, পুলিশ আমাদের কথা শুনে কাজ করছে?” এ দিনই আবার পাড়ুইয়ের যাদবপুর গ্রামে দলের ঘরছাড়াদের ফিরিয়েছেন অনুব্রত। সেখানে পরে তিনি বলেন, “আমাদেরও কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। তাঁরাও বিজেপি-র উপরে হামলা চালাতে পারতেন। কিন্তু মা-মাটি-মানুষের দল এই নীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা শান্তি চাই। কিন্তু বিজেপি-ই এলাকায় সন্ত্রাস করছে। পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে।”

অনুব্রত যখন এ কথা বলছেন, তখন এই জেলারই সদাইপুর থানার সাহাপুরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে অনুব্রতরই দলের বিরুদ্ধে।

sadai sekh choumondalpur parui bharkanta bjp leader arrest state news online state news Sadai Seikh BJP leader arrest police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy