Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Sagardighi Assembly Bypoll

তৃণমূলকে হারাতে গিয়েই কি ভোট কমল বিজেপির

দলের একটি অংশের দাবি, শুধু সাগরদিঘিই নয়, এর আগে কলকাতা-সহ রাজ্যের সর্বত্র পুরভোট থেকে বালিগঞ্জ উপনির্বাচন— সব জায়গাতেই এই ‘ট্র্যাডিশন’ চলছে।

Picture of Suvendu Adhikari.

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।

বিমান হাজরা , বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়
সাগরদিঘি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৩ ০৫:২৯
Share: Save:

নিজের নাক কেটে নিজেরই যাত্রাভঙ্গ?

মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে বিজেপির অবস্থা দেখে এলাকার মানুষ রসিকতা করে সে কথাই বলছেন। কেন? এই উপনির্বাচনের প্রচারে একটা সময়ে নিয়মিত এলাকায় এসেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সব মিলিয়ে চার বার। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও দু’বার এবং দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এক বার প্রচারে এসেছেন। ভোটের আগে চার দিন ধরে শুভেন্দু এলাকার সংখ্যালঘু অঞ্চলগুলিতে ঘুরেছেন। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, বিজেপিকে ভোট না দিলেও জোড়াফুলকেও যেন তাঁরা ভোট না দেন।

২ মার্চ ইভিএম খোলার পরে কী দেখা গেল? সংখ্যালঘু ভোট তো দূর অস্ত্, নিজেদের ভোটই ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। ২০২১ সালে এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ২৪ শতাংশ ভোট। তার দু’বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভা এলাকা থেকে বিজেপি পেয়েছিল ২৩ শতাংশ ভোট। এ বারে তা নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ১৩.৯৪ শতাংশে। দু’বছরে এক ধাক্কায় ১০ শতাংশ বিন্দু ভোট কমেছে দলের।

দলের আর একটি অংশের অবশ্য দাবি, ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পরে বেশিরভাগ নির্বাচনে বিজেপির ভোট কমারই ইঙ্গিত মিলেছে। খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কলকাতায় এসে প্রশ্ন করেছিলেন, বিজেপি কমে বাম বাড়ছে কেন? রীতিমতো তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি দেখিয়েছিলেন, কী ভাবে স্থানীয় নির্বাচনে বামেরা বিজেপির ভোট দখল করছে। তা ঠেকাতে তাঁর দাওয়াই ছিল, নেতাদের আরও বেশি করে নিচু তলায় যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এ বারে সাগরদিঘির ক্ষেত্রে কি সেই দাওয়াই পালন করা হয়নি? বিজেপির শিক্ষক সংগঠনের নেতা কল্যাণ মণ্ডল বলছেন, ‘‘দলের বড় নেতারা সাগরদিঘিতে এসে তৃণমূলকে হারাতে প্রচার করেছেন। তার বদলে বিজেপিকে জেতানোর চেষ্টা করা উচিত ছিল। তাই নিচু তলার কর্মীরা একটু হতোদ্যম হয়ে যান।’’

দলের একটি অংশের দাবি, শুধু সাগরদিঘিই নয়, এর আগে কলকাতা-সহ রাজ্যের সর্বত্র পুরভোট থেকে বালিগঞ্জ উপনির্বাচন— সব জায়গাতেই এই ‘ট্র্যাডিশন’ চলছে। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা অনেকে বলছেন, সাগরদিঘির ক্ষেত্রেও শুভেন্দু বারবার তৃণমূলকে হারানোর কথা বলেছেন। ফলাফল বেরোনোর আগেও তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘তৃণমূল জিতবে না, এটুকু বলতে পারি।’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এ দিনও বলেন, ‘‘ওখানে কংগ্রেস জেতেনি। তৃণমূল হেরেছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের জয় হয়েছে।’’ সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘গত দু’টি নির্বাচনে পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। তৃণমূল-বিরোধী ভোট আমরাই পেয়েছিলাম।’’ এর পরেই তাঁর দাবি, ‘‘এ বারও আমরা আমাদের নিজস্ব ভোট ধরে রেখেছি। লোকসভা, বিধানসভায় যে অতিরিক্ত ভোট পেয়েছিলাম, সেটা চলে গিয়েছে।’’ অঙ্কের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালে বিজেপি পেয়েছিল ৪৪ হাজার ৯৮৩টি ভোট। এ বারে পেয়েছে ২৫ হাজার ৮১৫টি ভোট। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুজিত দাসও বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল। শুভেন্দু সেই ক্ষোভকে উস্কে দিয়েছেন।

নেতাদের এত কথা শোনার পরেও কিন্তু স্থানীয় কর্মীদের মনে সেই একই প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে, এর ফলে কি নিজেদেরই যাত্রাভঙ্গ হল না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sagardighi Assembly Bypoll BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE