লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে কয়েক জন বর্তমান সাংসদের নাম। লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রাথমিক পর্যায়ে বিজেপি শিবিরে চিন্তা-ভাবনা অন্তত এই রকমই। এই ভাবনা গতি পেলে লোকসভার প্রার্থী তালিকায় দেখা যেতে পারে দলের কয়েক জন বিধায়ককে।
বাংলায় গত বার ১৮টা লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। তার মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে তৃণমূলকে কার্যত ‘সাফ’ করে একচেটিয়া দখলদারি কায়েম করেছিল তারা। পরে বিধানসভা নির্বাচনেও উত্তরবঙ্গ থেকে বিজেপি অধিকাংশ আসন জিতলেও লোকসভার জয়ের তুলনায় তার ‘জৌলুস’ কমে গিয়েছিল। তৃণমূল ধীরে ধীরে জমি পুনরুদ্ধার শুরু করে। গত পুরসভা, মহকুমা পরিষদ ও ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের কাছে পর্যদুস্ত হওয়া ছাড়াও ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রও উপনির্বাচনে বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে। প্রকাশ্যে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস, ভোট লুটে’র কথা বললেও দলের অন্দরে বিজেপি নেতারা মানছেন, তাঁদের ‘শক্ত ঘাঁটি’ আলগা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি, বিশেষ করে, সাংসদদের কেউ কেউ সাধারণ গরিব, চা-শ্রমিক, জনজাতি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে দলকে ‘ধাক্কা’ খেতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এলাকায় দলীয় সাংসদদের জনসংযোগের অভাবকেও কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে বিজেপির অভ্যন্তরে। সে সব কারণেই লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক আলোচনায় কয়েক জন সাংসদকে আর টিকিট না দেওয়ার কথা আসছে। তবে এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে প্রচারকদের (বিজেপির পরিভাষায় বিস্তারক) দেওয়া রিপোর্ট। প্রার্থীর ক্ষেত্রে কোনও সিদ্ধান্তই এখনও চূড়ান্ত নয়।
কিন্তু বর্তমান সাংসদকে বাদ দিয়ে ময়দানে নামলে প্রথমেই কি লড়াইয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়বে না দল? পদ্ম নেতারা অবশ্য সেই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা দাবি, জয় নিশ্চিত করতেই আসন ধরে ধরে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিধায়কেরা লোকসভায় জিতে দিল্লি চলে গেলে তাঁদের ছেড়ে যাওয়া আসনেরই কী হবে? সে ক্ষেত্রেও গেরুয়া শিবিরের দাবি, লোকসভায় জিতলে সেই অভিঘাতে বিধানসভা আসন বার করা কঠিন হবে না।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বেঁধে দেওয়া লক্ষমাত্রা পূরণে এ বার বিজেপির লক্ষ্য, উত্তরবঙ্গে গত বারের ৭টি আসন নিশ্চিত করে ৮-এ ৮ করা। সূত্রের খবর, দার্জিলিং, কোচবিহার ও বালুরঘাটে প্রার্থী অপরিবর্তিত থাকার সম্ভবনা কার্যত নিশ্চিত। তবে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে প্রার্থী বদলের সম্ভবনা আছে। তফসিলি জনজাতির জন্য সংরক্ষিত আলিপুরদুয়ার আসনের একটা বড় অংশ চা-বাগান। তাই চা-শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক বিধায়ককে প্রার্থী করার ভাবনা রয়েছে দলের একাংশে। রায়গঞ্জের বতর্মান সাংসদের কেন্দ্র বদল হতে পারে বলে দলের মধ্যেই আলোচনা চলছে। সে ক্ষেত্রে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে এক বিধায়কের নাম নিয়ে জল্পনা চলছে। তবে ওই দুই বিধায়কই বিজেপি পরিষদীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাই তাঁদের লোকসভার টিকিট দেওয়ার আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মতামতকেই শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে। মালদহ উত্তর আসনেও এ বার প্রার্থী বদল হলে সেখানে এখনও পর্যন্ত এগিয়ে আছেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া এক স্থানীয় নেতা এবং সেই সঙ্গে এক বিধায়কও।
তবে প্রাথমিক আলোচনা যা-ই হোক না কেন, লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপির কেন্দ্রীয় সংসদীয় কমিটি। এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি রথীন্দ্রনাথ বসুর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গের প্রতি বঞ্চনা, তৃণমূলের দুর্নীতি এবং গত বারের তুলনায় আমাদের শক্তিশালী সংগঠন— এই তিন কারণে উত্তরবঙ্গে আমাদের ফলাফল আগের চেয়ে ভাল হবে। ফলাফল ভাল করতে যা করতে হয়, দল তা-ই করবে। প্রার্থী বাছাইয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় দল।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)