অমিত শাহের আসন্ন কলকাতা সফর ঘিরে অভিনব পরিকল্পনা করেছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। দল এবং বিজেপি যুব মোর্চা সূত্রের খবর, বাইক মিছিল সঙ্গে নিয়ে এক গন্তব্য থেকে আর এক গন্তব্যে পৌঁছোবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বছরের শেষ দু’দিনে কলকাতায় সাংগঠনিক কর্মসূচিতে আসার কথা শাহের। বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল গত সোমবার তার প্রস্তুতি বৈঠকও সেরে ফেলেছেন। শাহের দফতর থেকে এখনও চূড়ান্ত সফরসূচি রাজ্য বিজেপির কাছে পৌঁছোয়নি বলে তাঁর সফরের বিষয়ে দল এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু ঘোষণা করেনি। তবে কর্মসূচি বাতিল না হলে এ বার শাহের সফরে যে ছবি তৈরি করার পরিকল্পনা বিজেপি নিয়েছে, তা আগে কখনও দেখা যায়নি।
বিজেপি সূত্রের খবর, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই কলকাতায় পৌঁছোবেন শাহ। তার পরে ৩০ এবং ৩১ ডিসেম্বর একগুচ্ছ সাংগঠনিক বৈঠক করবেন। তার মাঝেই বাইক মিছিলের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর রাতে অথবা ৩০ ডিসেম্বর সকালে বিজেপি যুবমোর্চার এই মিছিল দেখা যেতে পারে। কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলির মোট ১০টি সাংগঠনিক জেলাকে এই কর্মসূচির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি সাংগঠনিক জেলাকে ৫০০টি করে বাইকের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে যুবমোর্চা সূত্রের দাবি। সে ক্ষেত্রে মোট সংখ্যা দাঁড়াতে পারে হাজার পাঁচেক। যুবমোর্চার কর্মীরা জানাচ্ছেন, পাঁচ হাজার পুরোপুরি না হলেও শাহের কনভয়ের সামনে-পিছনে মিলিয়ে হাজার চারেক বাইক থাকবে।
বাইক মিছিলের মাঝখানে চলতে চলতে কোথা থেকে কোথায় যাবেন শাহ? বিজেপি সূত্রের খবর, এই বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। কারণ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও কোনও চূড়ান্ত সফরসূচি পাঠানো হয়নি। তবে ২৯ ডিসেম্বর রাতে বাইক মিছিল হলে তার যাত্রাপথ হবে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে নিউটাউন পর্যন্ত। অর্থাৎ, বিমানবন্দরে শাহকে স্বাগত জানিয়ে তাঁর নৈশাবাস পর্যন্ত তাঁকে পৌঁছে দেবে বাইক মিছিল। আর মিছিল ৩০ ডিসেম্বর সকালে হলে নিউটাউন থেকে বিধাননগর সেক্টর ফাইভের বিজেপি দফতর পর্যন্ত শাহের কনভয় যাবে বাইক মিছিলের মাঝখানে। সে ক্ষেত্রে যাত্রাপথ কিছুটা বাড়িয়ে নেওয়া হবে। নিউটাউন থেকে সরাসরি সেক্টর ফাইভ যাবেন না শাহ। বাইক মিছিল সঙ্গে নিয়ে তাঁর কনভয় হলদিরাম মোড়, ভিআইপি রোড, উল্টোডাঙা, হাডকো মোড়, ইএম বাইপাস হয়ে সেক্টর ফাইভ যাবে।
আরও পড়ুন:
সেক্টর ফাইভ নিয়ে একটা ‘উদ্বেগ’ অবশ্য থেকেই যাচ্ছে। বিজেপি দফতর যে রাস্তায়, সেখানে এমনিতেই বিজেপি নেতা এবং তাঁদের নিরাপত্তারক্ষীদের গাড়ির ভিড় থাকে। তার পাশে পুলিশেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর রয়েছে। সেই দফতরের সামনেও অনেকগুলি গাড়ি থাকে। ফলে ওই গলিতে কয়েক হাজার বাইক একসঙ্গে ঢুকতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে গলির মুখ পর্যন্ত শাহের কনভয়ের সঙ্গে থাকবে বাইক মিছিল। তার পরে কনভয় দলীয় দফতরের দিকে ঢুকে যাবে, বাইক মিছিল সোজা রাস্তা ধরে বেরিয়ে যাবে। প্রাথমিক ভাবে এমনই পরিকল্পনা। বিজেপির একাংশ চাইছে, ৩০ ডিসেম্বর সকালেই ওই কর্মসূচি হোক। দিনের বেলায় কর্মসূচি হলে জনসংযোগের সুযোগ বেশি। কিন্তু অনেকে আবার ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ওই কর্মসূচি রাখার পক্ষপাতী। তাঁদের মতে, বিমানবন্দর থেকে নিউটাউন পৌঁছোনোর প্রশস্ত রাস্তায় রাতে একসঙ্গে কয়েক হাজার বাইকের হেডলাইট ঝলমল করার দৃশ্য বেশি নয়নাভিরাম হবে। তবে শাহের চূড়ান্ত সফরসূচি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে না আসা পর্যন্ত বিষয়টি চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।
গত ১১ বছরে বিজেপির সর্বোচ্চ স্তরের নেতাদের মধ্যে শাহই সবচেয়ে বেশি বার পশ্চিমবঙ্গে সফর করেছেন। কিন্তু তাঁর কনভয় ঘিরে এ ভাবে বাইক মিছিলের আয়োজনের কথা কখনও ভাবা হয়নি। এ বারের শাহি-সফরে তা হলে এমন পরিকল্পনা কেন? বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, শাহের এই সফরে কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচি বা জনসভা থাকছে না। সবই অভ্যন্তরীণ তথা সাংগঠনিক বৈঠক। তাই জনসংযোগের অবকাশ তেমন নেই। কিন্তু নির্বাচন এসে যাওয়ায় শাহের এই সফরকেও জনসংযোগ তথা শক্তিপ্রদর্শনের ‘হাতিয়ার’ হিসাবে ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে বিজেপি বা যুবমোর্চার তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ বিষয়ে এখনও কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।