E-Paper

সিপিএম সমর্থকদের ‘শহিদ’ বলে দিনভর হিন্দুত্ব-জিগির বিজেপির

ওয়াকফ-অশান্তির জেরে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে ঘটনা ঘটার পরেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাঁরা ১৬ এপ্রিল ‘হিন্দু শহিদ দিবস’ পালন করবেন, সায় দিয়েছিলেন সুকান্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৪১
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়কদের ' হিন্দু শহিদ দিবস ' পালন। বিধানসভার বাইরে।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়কদের ' হিন্দু শহিদ দিবস ' পালন। বিধানসভার বাইরে। —নিজস্ব চিত্র।

মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনায় নিহত সিপিএম সমর্থক বাবা-ছেলেকে ‘হিন্দু শহিদ’ আখ্যা দিয়ে দিনভর শহরে চড়া হিন্দুত্বের সুর তুলল বিজেপি। তাঁদের নামে ‘শহিদ বেদি’তে শ্রদ্ধা জানানো হল, ‘চোখের জলে শপথ’ নেওয়ার ডাকও দেওয়া হল। শামিল হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে দলের নানা স্তরের নেতারা। অন্য দলের সমর্থকদের উপরে ‘শহিদত্ব’ আরোপ করে নিজেদের রাজনীতির তাস খেলার এমন কৌশল নিয়ে সরব হয়েছে অ-বিজেপি দলগুলি। পরে আবার মুর্শিদাবাদের ‘ঘরছাড়া হিন্দু’দের নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র দফতরে দরবার করলেন সুকান্ত।

ওয়াকফ-অশান্তির জেরে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে ঘটনা ঘটার পরেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাঁরা ১৬ এপ্রিল ‘হিন্দু শহিদ দিবস’ পালন করবেন, সায় দিয়েছিলেন সুকান্ত। সেই ঘোষণা মতোই বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিজেপির পরিষদীয় দল সাদা পোশাকের উপরে কালো উত্তরীয় পরে ও হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিধানসভার ভিতর থেকে মিছিল করে ফটক পর্যন্ত আসেন। তার পরে অস্থায়ী ‘শহিদ বেদি’ তৈরি করে শ্রদ্ধা জানান। পরে রাজ্য বিজেপির সদর দফতর মুরলীধর সেন লেনে সুকান্ত একই কর্মসূচি নেন। সারা রাজ্য জুড়ে বিজেপি ‘হিন্দু শহিদ দিবস’ পালন করেছে। পরে নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামে গিয়েও সেই কমর্সূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন শুভেন্দু।

বিজেপির এই কর্মসূচিকে কড়া আক্রমণই করেছে অন্যেরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের প্রশ্ন, ‘‘মুর্শিদাবাদের ওই এলাকায় তিন জন মারা গিয়েছেন। তৃতীয় জন কি তা হলে শহিদ নন? বিজেপির যা কাজ, তারা সেটাই করছে! লাশের ধর্ম দেখার রাজনীতি কুৎসিত এবং অমানবিক, সেটা বিজেপি করতে পারে।’’ সুকান্তের পাল্টা সেলিমের ঘোষণা, ‘‘ওঁরা যখন জাতের লড়াই করবেন, আমরা আরও বেশি করে ভাতের লড়াইয়ের কথা বলব।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের মন্তব্য, ‘‘অশান্তিতে সব রকমের প্ররোচনা দিয়ে এখন বিজেপির এই কুম্ভীরাশ্রু নোংরা রাজনীতি। অন্য দলের সমর্থকদের ‘ছিনতাই’ করে এই রকম রাজনীতি বিজেপি আর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভব। যুব কংগ্রেসের নিহত কর্মীদের তৃণমূল নেত্রী যেমন ওঁদের ‘শহিদ’ বলে দাবি করেন।’’ আর তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘একটা হিংসার ষড়যন্ত্র করে তাকে নিয়ে ধর্মীয় বিভাজনই বিজেপির একমাত্র পুঁজি। যত দিন যাচ্ছে, সকলের জন্য বিকাশের মুখোশ স্পষ্ট হচ্ছে!’’

যদিও সমালোচনার মুখে সুকান্ত পাল্টা বলেছেন, “সিপিএম তো ধর্মনিরপেক্ষ দল। মুসলিম তোষণ করে। কিন্তু তাদের কর্মীরা হিন্দু হলে খুন হচ্ছেন। একাধিক জায়গায় হিন্দু পুরুষদের প্রাণ বাঁচাতে বাড়ির মহিলাদের বেইজ্জত করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এই সব ‘নিধনে’র প্রতিবাদেই হিন্দু শহিদ দিবস।’’

বিজেপি দফতরে এ দিন নিয়ে আসা হয়েছিল মুর্শিদাবাদে আক্রান্ত ও ঘরছাড়াদের একাংশকে। সুকান্তের নেতৃত্বে তাঁরা ভবানী ভবনে গিয়ে ডিজি-র সাক্ষাৎ চেয়ে ধর্নায় বসেন। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির অর্জুন সিংহ, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, তাপস রায়, তমোঘ্ন ঘোষ, অনুপম ভট্টাচার্য প্রমুখ। দীর্ঘ ক্ষণ অবস্থান চলার পরে ডিজি রাজীব কুমার বৈঠকে বসার বার্তা দেন। যদিও বৈঠক থেকে বেরিয়ে সুকান্ত জানান, ডিজি তাঁদের সঙ্গে কথা বললেও তাঁরা আশ্বস্ত নন। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “আগে থানার আইসি-রা আমাদের সঙ্গে দেখা করতেন না। ডিজি দেখা করতে বাধ্য হলেন। এটাই বিজেপির আন্দোলনের নৈতিক জয়। আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রীকে মাথানত করিয়ে ছাড়ব!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP Hindutwabad Religious Politics CPM Suvendu Adhikari Sukanta Majumdar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy