সাংগঠনিক বৈঠক করতে সোমবার পশ্চিমবঙ্গে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার এবং বুধবার রাজ্য বিজেপির পদাধিকারীদের সঙ্গে একগুচ্ছ সাংগঠনিক বৈঠক করবেন তিনি। বছরের শেষে ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গে এসে শাহ কোন কোন বিষয় নিয়ে বার্তা দেন, তা জানতে উৎসুক রাজনৈতিক মহল। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, এ বারের রাজ্য সফরে মূলত তিনটি বিষয়ের উপরে জোর দিতে পারেন শাহ।
আগামী মঙ্গলবার বিধাননগরে সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ একটি সাংগঠনিক বৈঠক করার কথা রয়েছে শাহের। রাজ্য বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, ওই সাংবাদিক বৈঠকে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর নিয়ে কেন্দ্র তথা বিজেপির অবস্থান আরও এক বার স্পষ্ট করতে পারেন তিনি। এসআইআর প্রক্রিয়ায় একাধিক অনিয়ম এবং সাধারণ মানুষকে হেনস্থার অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি দেশের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনেও এই বিষয়টি বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই আবহে কেন্দ্র বিরোধীদের অভিযোগ নস্যাৎ করতে শাহ কোনও বার্তা দেবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
এসআইআর-এর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরতে গিয়ে ফের ‘অনুপ্রবেশ মোকাবিলা’র কথা তুলতে পারেন শাহ। পশ্চিমবঙ্গের সরকার কাদের ভোটে তৈরি হবে, রাজ্যের মানুষের ভোটে নাকি অনুপ্রবেশকারীদের ভোটে— এই প্রশ্ন তুলে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে নিশানা করতে পারেন শাহ।
বিজেপি সূত্রে খবর, রাজ্যে এসে মতুয়া সম্প্রদায়কেও সুনির্দিষ্ট বার্তা দিতে পারেন শাহ। এসআইআর আবহে নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ওই সম্প্রদায়ের অনেকেই। তাঁদের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেন, “৫০ লক্ষ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি মুসলমান, পাকিস্তানি মুসলমানকে বাদ দিতে যদি আমার সম্প্রদায় (মতুয়া)-এর এক লক্ষ মানুষকে ভোটদান থেকে বিরত থাকতে হয়, তাতে কোনটা লাভ?’’ এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে এসে শাহ মতুয়াদের নাগরিকত্ব এবং ভোটাধিকার নিয়ে আশ্বস্ত করবেন বলেই মনে করছে রাজ্য বিজেপি। গত কয়েকটি নির্বাচনেই মতুয়া সম্প্রদায়ের সিংহভাগ ভোট বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে। তাই কোনও অবস্থাতেই তাঁদের বিরাগভাজন হতে চায় না পদ্মশিবির। বিজেপি সূত্রে খবর, এর আগে একাধিক বার কেন্দ্র মতুয়াদের বার্তা দিয়ে জানিয়েছে, তাঁদের আতঙ্কের কারণ নেই। সিএএ-র মাধ্যমে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে শাহ কলকাতা থেকে মতুয়াদের আশ্বস্ত করলে ভোটের আগে তা বেশি কার্যকরী হবে বলে মনে করছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
সাধারণত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা রাজ্য সফরে আসার আগে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সবিস্তার জানতে চান। সেখান থেকেই আভাস মেলে, কোন কোন বিষয়ের উপরে গুরুত্ব দিতে চাইছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রে খবর, সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের বাবরি মসজিদের শিলান্যাস নিয়েও রাজ্যের নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন শাহ। যা থেকে অনেকের অনুমান, এই বিষয়টি নিয়ে কিছু বার্তা দিলেও দিতে পারেন তিনি। তবে রাজ্য বিজেপির আর এক অংশের মতে, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিলেও প্রকাশ্যে এই বিষয়ে মুখ না-ও খুলতে পারেন শাহ।