দলের রাজ্য সভাপতি ঘোষণার প্রায় এক মাস পরেও নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণা হয়নি বিজেপিতে। বিধানসভা ভোটের আর এক বছরও বাকি নেই। এই পরিস্থিতিতে কবে নতুন কমিটি ঘোষণা হবে, সে দিকেই তাকিয়ে দল। সূত্রের খবর, ভারসাম্যের জটিল অঙ্কেই বিষয়টি আটকে রয়েছে।
সুকান্ত মজুমদার ২০২১-এর ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্য সভাপতি হন। রাজ্য কমিটি ঘোষণা হয়েছিল ডিসেম্বরে। এই ‘দৃষ্টান্ত’ অনুযায়ী সময় থাকলেও, এ বার মাত্র ৮-১০ মাস পরে বিধানসভা ভোট। রাজ্য কমিটি গঠনে দেরি হলে ভোটের কাজ কখন শুরু হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দলে। তবে বিজেপির একটি সূত্রে দাবি, ভোটে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ‘মুখ’ করেই দল এগোতে চাইছে। সংগঠনের রাশ থাকবে সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর হাতেই। সভাপতি হিসেবে অমিতাভ-শুভেন্দুর সেতুবন্ধনের কাজ করবেন শমীক ভট্টাচার্য। বিজেপির এক রাজ্য নেতার কথায়, “নতুন, পুরনো সবার কাছেই সমান গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে শমীকের। তাই ভোটের আগে তাঁর হাতেই সংগঠন এবং ভোট-রাজনীতির মধ্যে সেতুবন্ধনের দায়িত্ব দিয়েছে দল।” তবে দলেরই একাংশের দাবি, সাংগঠনিক পূর্ণ ক্ষমতা না-পাওয়ায় শমীক ইচ্ছা মতো রদবদল করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ভারসাম্যের দিকে তাকিয়ে রাজ্য কমিটিতে যাতে সব ‘শিবিরে’র প্রতিনিধিত্ব থাকে, সেই চেষ্টাই চলছে বলে সূত্রের খবর। এই সূত্র ধরেই রাজ্য বিজেপির নির্দেশিকা, মণ্ডল থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত নতুন কমিটিতে পুরনো কমিটির ৫০% লোককে রাখতে হবে। সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী দলের ‘মূল চালিকা শক্তি’ সাধারণ সম্পাদক ও অফিস সম্পাদক। সূত্রের দাবি, এই পদ দু’টি নিয়ে টানাপড়েন চলছে। গত কমিটির পাঁচ জন সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে অন্তত দু’জন ও অফিস সম্পাদক পদে বদলের সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে দলের ‘পুরনো মুখদের’ কাউকে দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে চর্চা রয়েছে। এ ছাড়া, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা কমিটি তৈরি হলে সেখানে থাকতে পারেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহেরাও। শমীক রাজ্য সভাপতি হওয়ায় প্রধান মুখপাত্র পদে যুব মোর্চার প্রাক্তন এক রাজ্য সভাপতির নাম নিয়ে চর্চা রয়েছে দলের অন্দরে।
মোর্চা নেতৃত্বেও বদলের সম্ভবনা আছে। সূত্রের দাবি, যুব মোর্চার বর্তমান রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁয়ের জায়গায় এক তরুণ আইনজীবী নেতা ও প্রাক্তন এক এবিভিপি নেতা এবং মহিলা মোর্চার বর্তমান রাজ্য সভাপতি ফাল্গুনী পাত্রের বদলে মোর্চার এক রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের নাম নিয়ে চর্চা রয়েছে। মহিলা মোর্চার দায়িত্ব সামলানো, সেই সঙ্গে রাজ্য বিজেপির এক সাধারণ সম্পাদক ও এক প্রাক্তন সাংসদের নামও আলোচনায় রয়েছে।
সূত্রের দাবি, নির্ঘণ্ট থাকলেও, বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদে মনোনয়নের দিন জাতীয় পরিষদে প্রতিনিধি পদে মনোনয়ন নিয়ে শমীক-‘শিবির’ আপত্তি তোলে। তাদের দাবি ছিল, নতুন সভাপতি দায়িত্ব নেওয়ার পরে সকলের সঙ্গে কথা বলে এই নির্বাচন হোক। শেষমেশ অমিতাভের হস্তক্ষেপে বিষয়টি ঠেকানো গিয়েছে। শমীক-শিবিরের দাবি, মনোনয়ন পরে দেওয়া গেলে, যাঁদের শেষ পর্যন্ত নতুন কমিটিতে জায়গা দেওয়া যাবে না, তাঁদের জাতীয় পরিষদে পাঠানোর সুযোগ ছিল। যদিও রাজ্য বিজেপির এক নেতা বলেছেন, “বিজেপি ক্ষমতায় এলে বিধান পরিষদ ফিরিয়ে আনবে। যাঁদের পদ দেওয়া বা প্রার্থী করা যাবে না, কিন্তু দলে অবদান থাকবে, তাঁদের বিধান পরিষদে পাঠানো হবে।” তবে রাজ্য বিজেপির অন্য এক সূত্রে বক্তব্য, বিজেপি ক্ষমতায় এসে কোথাও বিধান পরিষদ ফেরায়নি।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক অবশ্য বিতর্কে আমল দেননি। তাঁর বক্তব্য, “যাঁর কাঁধে বিজেপির ঝান্ডা, তিনিই বিজেপি। কমিটিতে থাকা, না থাকা বড় নয়। এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা, পাড়ায় ও বুথে বিজেপি হিসেবে পরিচিত কি না, সেটাই বড় কথা।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)