Advertisement
E-Paper

চোখেতে আঁধার, স্মৃতির জোরেই মাধ্যমিকে মাম্পি

দু’চোখে আঁধার ঘনিয়ে এসেছিল হঠাৎই। তছনছ হয়ে গিয়েছিল জীবন। থমকে গিয়েছিল পড়াশোনা।

দিগন্ত মান্না

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৩
অদম্য: মা এবং দিদির সঙ্গে পরীক্ষার প্রস্তুতি মাম্পির। —নিজস্ব চিত্র।

অদম্য: মা এবং দিদির সঙ্গে পরীক্ষার প্রস্তুতি মাম্পির। —নিজস্ব চিত্র।

দু’চোখে আঁধার ঘনিয়ে এসেছিল হঠাৎই। তছনছ হয়ে গিয়েছিল জীবন। থমকে গিয়েছিল পড়াশোনা।

পাঁশকুড়ার মাম্পি চক্রবর্তী অবশ্য থেমে যাননি। জীবনে আলো জ্বালার লক্ষ্যে ফের পড়াশোনায় ফিরেছেন। উনিশ বছর বয়সে এ বার মাধ্যমিকও দিচ্ছেন মাম্পি— ভরসা মনের জোর আর স্মৃতিশক্তি।

২০১১ সালে বর্ষশেষের দিন পরিজন-প্রতিবেশীদের সঙ্গে দিঘা যাওয়ার পথে ঘটেছিল দুর্ঘটনা। মাম্পি তখন পাঁশকুড়ার মেচগ্রাম পূর্ণচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ভোররাতে রামনগরের কাছে সেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মাম্পি এতটাই জখম হয়েছিলেন যে তাঁর বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিল চক্রবর্তী পরিবার।

মাম্পির বাবা মলয় চক্রবর্তী পেশায় পুরোহিত। সাধ্যাতীত লড়েই ছোট মেয়েকে বাঁচিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ চিকিৎসা ও মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পরে জীবন ফিরে পেয়েছেন মাম্পি। তবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে চিরতরে। এরপর চার বছর বন্ধ ছিল মাম্পির পড়াশোনা। শেষে ২০১৬ সালে ফের নিজের পুরনো স্কুলেই অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন মাম্পি। নতুন করে ‘ব্রেল’ পদ্ধতি রপ্ত করতে পারেননি। তাই মা কল্যাণী চক্রবর্তী ও দিদি তনুশ্রী বই পড়ে শুনিয়েছেন, আর তা শুনে পড়া তৈরি করেছেন মাম্পি। স্মৃতির জোরেই চলেছে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি। পরীক্ষায় রাইটারের সাহায্য নিচ্ছেন মাম্পি।

মাধ্যমিকে মোট সাতটি বিষয়। এত সিলেবাস, এত পড়া শুধু কানে শুনে কী ভাবে মনে রাখছে মাম্পি?

পরিজন ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, মাম্পির স্মৃতিশক্তি তুলনায় জোরাল। আর সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত স্বাভাবিক পড়াশোনা করায় প্রায় সব বিষয়েই ওর একটা ধারণা রয়েছে। তা ছাড়া, এখন মাধ্যমিকে বেশিরভাগই ছোট প্রশ্ন। অনেক ক্ষেত্রে এক কথায় জবাব দিতে হয়। ফলে, মাম্পির প্রস্তুতি নেওয়া কিছুটা সহজ হয়েছে।

কিন্তু মনে রেখে কী করে অঙ্ক কষছে এই ছাত্রী? মাম্পি জানালেন, জ্যামিতির অংশ তাকে বাদ দিতে হচ্ছে। তবে বাকি ক্ষেত্রে অঙ্কের নিয়ম, সূত্র মুখস্থ করে ফেলেছেন তিনি। অঙ্কটা কানে শুনে মনে মনেই তিনি করেন যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ।

মাম্পির এই লড়াইয়ে পাশে থেকেছেন, সাহস জুগিয়েছেন মা, দিদি আর স্কুলের শিক্ষিকা মহুয়া মণ্ডল। মাম্পির মা কল্যাণী আর ইতিহাসে স্নাতক দিদি তনুশ্রী বলছিলেন, ‘‘আমরা কখনও মনোবল হারাইনি। আসলে মাম্পির জেদের কাছে আমরা হার মেনেছি।’’ মাম্পির মনোবল ফেরাতে প্রতিবন্ধকতা জয় করে জীবনে সফল বিভিন্ন মানুষের কথা শুনিয়েছেন মহুয়া দিদিমণি। অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও পাশে থেকেছেন। ক্লাসের বাইরেও খুঁটিনাটি বুঝিয়েছেন। শিক্ষিকা মহুয়া বলছিলেন, ‘‘ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার পর মাম্পিকে পড়াশোনায় ফেরাতে পেরে ভাল লাগছে। ও এ বছর মাধ্যমিক দিচ্ছে। আগামী দিনেও এগিয়ে যাবে।’’

ভাল গান গাইতে পারেন মাম্পি। গান তাঁকে লড়াইয়ে শক্তি জোগায়, স্বপ্ন দেখায়। মাম্পির কথায়, ‘‘পরীক্ষা ভালই হচ্ছে। পড়াশোনা করে আমি শিক্ষিকা হতে চাই।’’

পরিজন, বন্ধু, স্কুলের সবাই অবশ্য বলছেন, মাম্পির লড়াইটাই তো জীবনের শিক্ষা। এই তরুণী দেখিয়ে দিয়েছেন, এ ভাবেও ফিরে আসা যায়!

Blind Girl Madhyamik Writer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy