লালনের মৃত্যু নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে সিবিআই ক্যাম্প অফিসে ঢোকার চেষ্টায় গ্রামবাসীরা। নিজস্ব চিত্র
সিবিআই হেফাজতে বগটুই-কাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্ত লালন শেখের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘিরে জলঘোলা বেড়েই চলেছে। তীব্র হচ্ছে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও। হেফাজতে মৃত্যুর দায়ে সিবিআইয়ের জবাবদিহি চাওয়ার পাশাপাশিই তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে হেফাজতে নিয়ে জেরার দাবিতে সুর আরও চড়িয়েছেন। শুভেন্দু আবার শাসক দলকে পাল্টা খোঁচা দিয়েছেন, কাচের ঘরে বসে ঢিল না ছোড়াই ভাল! কারণ, তাঁর দাবি, রামপুরহাটে সিবিআইয়ের ওই ক্যাম্প অফিসে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাজ্য পুলিশও ছিল। লালনকে ‘খুন’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে সিবিআইয়ের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তা নিয়েও রাজনৈতিক বিতর্ক বেধেছে।
হাজরা মোড়ে মঙ্গলবার দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভায় শাসক দলের একাধিক নেতা ও মন্ত্রী লালন-কাণ্ডে সিবিআইয়ের দিকে আঙুল তুলেছেন। মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই ঘটনায় সিবিআইকে জবাবদিহি করতে হবে।’’ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই সূত্রেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর দেওয়া ‘ডিসেম্বর ডেডলাইন’-এর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘এই জন্যই কি ১২ ডিসেম্বর দিন ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল? এখন কি মিথ্যা মামলার পরে অভিযুক্তকে মেরে ভয় দেখানো হবে!’’ শুভেন্দুদের উদ্দেশে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের হুঁশিয়ারি, ‘‘বিজেপির চেয়ে বড় চোর কেউ নেই! আমাদের ভয় দেখাবেন না! আমরা সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছি।’’ আরও এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবি করেছেন।
শুভেন্দু অবশ্য বলেছেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এখনও পর্যন্ত যা শুনেছি, লালন শেখের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সময়ে সিবিআই আধিকারিকেরা আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সিবিআইকে শুধু দোষ দিলে চলবে না। পাহারার দায়িত্বে ছিল রাজ্য পুলিশও। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে থাকলে রাজ্য পুলিশের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ প্রযোজ্য। নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত হবে। অস্বাভাবিক এই মৃত্যুর আসল কারণ সামনে আসা উচিত।’’ পাশাপাশিই বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, ‘‘যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজ়াম প্যালেসে সিবিআই দফতরে গিয়ে হামলা করতে পারেন, সেখানে আর বলার কী আছে!’’
লালন-কাণ্ডে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি সোমবারই তুলেছিল সিপিএম। আরও এক ধাপ এগিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এ দিন বলেছেন, ‘‘লালনের পরিবারের তরফে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তাতে এই ঘটনার পাশাপাশি গরু পাচার মামলা, অনুব্রত মণ্ডলের মামলার তদন্তকারী অফিসারদেরও নাম আছে বলে জানা যাচ্ছে। সেই সব নাম হঠাৎ এখানে কেন? তার মানে কি খেলার পিছনে আরও বড় খেলা আছে? রহস্য কিন্তু দানা বাঁধছে! বিচারবিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত।’’ অনুব্রতের দেহরক্ষী সায়গলের গাড়িতে দুর্ঘটনা এবং তাঁর পরিবারের লোকের মৃত্যু, অনুব্রতের যে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট, সেখানে আগুন লাগার ঘটনার উল্লেখ করে সুজনবাবুর আরও মন্তব্য, যা হওয়ার নয়, বীরভূমে তা-ই হয়ে চলেছে! সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত বিচারপতির তত্ত্বাবধানে লালন-কাণ্ডের বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy