Advertisement
১১ মে ২০২৪
State News

মুখে লাল কাপড় বাঁধা, হাতে পিস্তল, এলোপাথাড়ি বোমাবাজি-গুলি কাঁকিনাড়ায়

ট্রেনে থাকতেই যাত্রীরা দেখছিলেন, লাইনের পূর্বদিকের বস্তি এবং ঝুপড়ি থেকে পিল পিল করে লাইনের ধারে জমায়েত করছে কয়েকশো যুবক।

প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব কাঁকিনাড়ায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব কাঁকিনাড়ায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ১৬:২৫
Share: Save:

দমদম থেকে সকাল ৮.০৫ মিনিটে গ্যালপিং কৃষ্ণনগর লোকালে উঠেছিলেন জয় মুখোপাধ্যায়। কল্যাণীতে তাঁর কর্মস্থল। এক ঘণ্টা পর জগদ্দল স্টেশন পেরিয়ে কাঁকিনাড়া ঢোকার কয়েকশো মিটার আগেই থেমে গেল ট্রেন। জয়বাবু বলেন, ‘‘জোর ব্রেক মেরে ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল ট্রেনটা।” সবাই বলাবলি করতে লাগল, কাঁকিনাড়া স্টেশনে অবরোধ। এর পর অন্য সকলের সঙ্গে ট্রেনেই বসেছিলেন তিনি। এক ঘণ্টা কেটে যায়। অবরোধ ওঠার কোনও নাম গন্ধ নেই!

অনেকেই উশখুশ করছেন দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে। কেউ কেউ ট্রেন থেকে নেমে রেললাইন ধরে স্টেশনের দিকে যাওয়ার চেষ্টাও করছেন। অন্যদের মতো ট্রেন থেকে নেমে পড়েন জয়বাবুও। আর তার পরেই যে ঘটনা ঘটল, জয়বাবুর কথায়, ‘‘এ রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি যে হতে হবে তা আমি কোনও দিন ভাবিনি।”

ট্রেনে থাকতেই যাত্রীরা দেখছিলেন, লাইনের পূর্বদিকের বস্তি এবং ঝুপড়ি থেকে পিল পিল করে লাইনের ধারে জমায়েত করছে কয়েকশো যুবক। সবার মুখ লাল কাপড়ে ঢাকা। চোখটা খালি দেখা যাচ্ছে। তাদের হাতে তলোয়ার, ভোজালি থেকে শুরু করে লাঠি, রড চাকু। জমায়েতটা দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের কাছে আসতেই শিউরে উঠলেন যাত্রীরা। শুধু ধারালো অস্ত্র নয়, অনেকের হাতেই দেখা যাচ্ছে দেশি পিস্তল!

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রীতিমতো আতঙ্কিত হয়েই লাইনে নেমে পড়েন জয়বাবু আরও অনেকের সঙ্গে। তার পরের অভিজ্ঞতা আরও ভয়ঙ্কর। জয়বাবু বলেন, ‘‘নেমে লাইন ধরে হাঁটতে শুরু করতেই আশপাশে বোমার আওয়াজ। খানিকটা দূরে আধাসেনা কিছু যুবককে তাঁড়া করছে লাঠি উঁচিয়ে। তাতে পালানো দূরে থাক পাল্টা বোমা ছুড়ছে ওরা। বালতি বালতি বোমা নিয়ে দৌড়চ্ছে ওই যুবকরা। এলোপাথাড়ি বোমা মারছে। কখনও ট্রেন লক্ষ্য করে, আবার কখনও লাইনের ধারে। কোনও বাছ-বিচার নেই। কানে আসছে গুলির শব্দও।”

আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা, পরিস্থিতি কঠিন হচ্ছে রাজীবের কাছে

আরও পড়ুন: ননসেন্স! ভোটগণনায় ১০০ শতাংশ ভিভিপ্যাট মিলিয়ে দেখার আর্জি খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট

আতঙ্কে ট্রেন থেকে নেমে পালাচ্ছেন যাত্রীরা। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

ওই পরিস্থিতিতে লাইন ধরেই অন্যদের সঙ্গে দৌড়োনো শুরু করেন তিনি। আশা একটাই, কাঁকিনাড়া স্টেশন চত্বরে পৌঁছতে পারলে একটু নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। সেই অবস্থাতেই পায়ের কাছে এসে পড়ল একটা বোমা। জয়বাবু বলেন, ‘‘বোমাটা গড়িয়ে আসতেই বাড়ির কথা চোখের সামনে ভেসে উঠল। বোমাটা ফেটেছিল কি না বোঝার আগেই একটা হ্যাচকা টান।” তিনি আরও বলেন, ‘‘পাশ থেকে কেউ এক জন টেনে আমাকে ঝুপড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন। সেখানে বসিয়ে রাখলেন। চোখের সামনে দেখছি, মুড়ি মুড়কির মতো বোমা পড়ছে। হাতে পিস্তল নিয়ে শূন্যে গুলি ছুড়ছে দুষ্কৃতীরা।” অনেক ক্ষণ বসে থাকার পর একটু পরিস্থিতি থিতোলে কোনও মতে ওই স্থানীয়দের সাহায্যেই স্টেশনের পেছনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে অটো ধরে ব্যারাকপুর ফেরেন জয়বাবু।

আরও পড়ুন: সঙ্ঘ নেতা সুনীল জোশী হত্যাকাণ্ডে ফের বিপাকে পড়তে পারেন সাধ্বী প্রজ্ঞা

আরও পড়ুন: বেগতিক দেখে ক্ষমা চাইলেন বিবেক, টুইট থেকে সরালেন ঐশ্বর্যার ছবিও

মঙ্গলবারের ওই অভিজ্ঞতা শুধু জয়বাবুর নয়, কয়েক হাজার ট্রেন যাত্রীর। পূর্ব রেল জানিয়েছে, সকাল ৮.৪৩ মিনিট থেকে ১২.০৪ মিনিট পর্যন্ত অবরোধ চলে। বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়ে ১৭টি ট্রেন। লোকাল ট্রেন বাতিল করতে হয় ৭ জোড়া। একটা সময় ব্যারাকপুর থেকে শিয়ালদহ ট্রেন চালানো হয়। রেল পুলিশ সূত্রে খবর, অবরোধ শুরু হওয়ার আগে ডাউন লালগোলা প্যাসেঞ্জারে কাঁকিনাড়ার কাছে একদল দুষ্কৃতী ট্রেনের মধ্যে উঠে ভাঙচুর-তাণ্ডব চালায়। আহত হন বেশ কিছু যাত্রী। তার পিছনেই ছিল শিয়ালদহগামী ডাউন নৈহাটি লোকাল। সেই ট্রেন লক্ষ্য করেও দুষ্কৃতীরা বোমা ছোড়ে। তার পরেই শুরু হয় অবরোধ।

গন্ডগোলের পর সুনসান গোটা এলাকা। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রবিবারের ভাটপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচনের সময়কার রাজনৈতিক সংঘর্ষই রাত গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মোড় নিয়েছে গোষ্ঠী সংঘর্ষের দিকে। রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুখ্যাত দুষ্কৃতীরা। তাণ্ডব চালাচ্ছে। অভিযোগ, সোমবার পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও, রাতে ফের গন্ডগোল শুরু হয়। অভিযোগ, রেললাইনের পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দাদের একটি অংশ সোমবার গভীর রাতে হামলা চালায় পূর্ব পাড়ের বসতিতে। লুঠপাট, মারধর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ফের সকাল থেকে শুরু হয়ে যায় অশান্তি। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে যান ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল চৌধুরি। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় নয়। তাঁরা একটু সক্রিয় হলে পরিস্থিতির এতটা অবনতি হত না। যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kankinara Crime Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE